Friday, July 11, 2025

আসুন আমরা নিজেদের একটু সংস্কার করি

১৯৯০এর গণঅভ্যুথানে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর রাজনৈতিক দল গুলির ঐক্যমতের ভিত্তিতে ৬ডিসেম্বর,১৯৯০ সালে গঠিত বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদের তত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের ভেতর ২৭ ফেব্রুয়ারী,১৯৯১ সালে জাতিকে একটা নতুন নিবা’চন উপহার দিতে পেরেছিলেনসেই নিবা’চনের মতো সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নিবা’চন স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর হয় নাইসব্ব’জন স্বীকৃত আন্ত’জাতিক খ্যাতিমান ডঃ মুহাম্মাদ ইউনুসের নেতৃত্বে ৮ই জুলাই,২০২৪ রাষ্ট্র পরিচালনা ও সংস্কারের ইনটেরিম সরকার গঠীত হলে জাতি নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেদেশের প্রশাসনিক শুন্যতা লুটপাটে আথি’ক খাতে বিশৃংখল অবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার এক মহাকঠিন দায়িত্ব কাধে নিয়েছিলেন।এ লেখা যখন লিখছি ইনটেরিম সরকারের এক বছর পার হয়েছেএই একবছর তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন।ব্যাক্তি ইমেজে দেশে–বিদেশে শত সহস্র প্রপাগান্ডা থেকে দেশকে বাচিয়েছেনএকেবারে ভেঙ্গে পড়া আথি’ক খাতকে তুলে এনে সাফল্য দেখিয়েছেন।কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারে ,গুম-খুন লুটপাটের বিচারের দৃশ্যমান কিছুই করতে পারেন নাই।পারেন নাই দ্রুত একটা নিভে’জাল সুষ্ঠ নিবাচনের ব্যবস্থা করতে কিংবা নিবাচনের একটা রুপ রেখা দিতে।সকাল দুপুর বিকালে দাবী-দাওয়া নিয়ে কেবলই দিন পার হয়েছে।বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ যেমন দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই প্রশাসনের খলনলচে পাল্টে দিয়েছিলেন।ডঃ ইউনুস তা পারেন নাই।তিনি ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী দলদাস আমলা, কতা’ব্যাক্তিদের বহাল রাখায় সেই সুবিধাভোগী দলদাসদের অসহযোগীতায় সম্ভবত কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌছাতে বেগ পেতে হচ্ছেজুলাই বিপ্লবের প্রশাসন শুন্য দেশে শান্তি-শৃংখলা অতিদ্রুত উন্নতি সম্ভব করেছিলেনহঠাৎ আবার কেন জানি অবনতি দেখা যাছে।পত্রিকা থেকে জানা যায় গত ছয় মাসে সারা দেশে ৯৪ জন নিহত হয়েছে যার সিংহ ভাগই মব সন্ত্রাসস্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা থানায় থানায় গিয়ে পুলিশকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন কিন্তু সফলতা আসছে মনে হয় না। 

ফলে জুলাই বিপ্লবে যে জাতীয় ঐক্য তৈরী হয়েছিল তা আজ  ক্ষমতার লোভে শতধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ফ্যাসিবাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত রাষ্ট্রকে নিয়ে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিকদলের  টানা হেচড়া শুরু হয়েছেপি আর পদ্ধতিতে নিবা’চনের দাবি করছে।উদাহরণ টানছে বিদেশেরবাংলাদেশে মত এতো বেশি  মতবাদী  রাজনৈতিক  দল, বিভিন্ন  তরিকার  ধমী' দল ,প্রতিবেশী দেশের প্রতি  অতিমাত্রায়  আনুগত্য, যাদের কেউ কেউ আবার স্বাধীনতা প্রত্যাশী, এমন অতিমাত্রায় রাজনৈ্তিক বিভাজন নিয়ে  কোন জাতি  অন্য  কোথাও  আছে  কিনা জানা নাইতাই কোথায় পি আর পদ্ধতি আছে  কোথায়  নাই  তা  ভাবার প্রয়োজন  নাইকারণ সব পরিবেশে সব  ফসল হয় নাতিন দিকে বৈরী প্রতিবেশি বেষ্টীত আমাদের দেশের অতি স্পশ’কাতর ভৌগলিক অবস্থান,অতি মাত্রায় রাজনৈ্তিক বিভাজন-অস্থিরতা,দেশের মাঝে ক্রমবধ’নশীল বেকারত্ব, চারিদিকে বিশ্বের শক্তিধর দেশের আধিপত্যের লড়াই নিয়ে খুব বেশি প্রয়োজন এখন ভাববারবত'মান অতি আলোচিত পি আর পদ্ধতিতে  একজন ভোটার ভোটের মাধ্যমে তার পছন্দের ব্যাক্তিকে নিবা’চিত করার সম্ভাবনা নাই সব নিভ’র করবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের উপর।নিবা’চনের পর সেখানেও প্রাথী’ বেচা বিক্রি হতে পারেস্বতন্ত্র-প্রাথী’ হিসাবে নিবা’চন করার সু্যোগ সম্ভবত নাই।ফলে নিবা’চনে উগ্রবাদী দল ও নেতা  সংসদে  বসার সুযোগ পাবেতারাই সংসদে গেম চেঞ্জার হিসাবে কাজ করতে পারে, কারো প্ররোচনায়  দেশকে অস্থিতিশীল  করতে পারে

মাঝে মাঝে শ্লোগানের ভাষা শুনে জুলাই বিপ্লব পূব’ ফ্যাসিবাদের সময়কে মনে করিয়ে দেয়ফ্যাসীবাদের আমলে যে কোনো নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে বিএনপি জামাতের নামে কোরাস গাওয়া চলতো।এখন অতি আশাবাদীরা মিলে সব নেতিবাচক ঘটনায় বিএনপির নামে কোরাস গাওয়া শুরু করছেপরকিয়ায় কে কার ছবি তুলছে সেখানে বিএনপি জুলাই আহতদের ডেকে নিয়ে কে অসন্মান করছে বিএনপিজুলাই বিপ্লবে বিএনপির কোনো অবদান নাই জিগির তুলছেতা’হলে জুলাই বিপ্লবে হাজার হাজার নিহত আহতদের সাথে বিএনপির শত শত কমী’ আহত নিহত হলো কিভাবে?কেউ কেউ বত’মান নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগের ৭১ এর চেতনার মতো জুলাই’২৪ কে পুজি করে ফায়দা লুটতে চাইছেমানাতে চাইছে কেবলই তারাই জুলাই বিপ্লব ঘটিয়েছেভুলে গেলে চলবে না কোটা আন্দোলনে নুরুল হক নুর-রাশেদদের অবদানের কথাভুলে গেলে চলবে না হেফাজতের আন্দোলনে সব দলের নেতা কমী’রা যদি রাস্তায় নামতো শাপলা চত্বরে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকতে পারতো না হাসিনা সরকার২০২৩শে বিএনপি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বড় বড় সফল সমাবেশ করার পর ২৮শে অক্টোবর ছিল পল্টনে সমাবেশএকই সময় মতিঝিলে জামায়াত সমাবেশ করে চলে না গিয়ে বিএনপির পল্টন সমাবেশে পাশে থাকলে সেদিনও পতন হতে পারতো ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারেরকিন্থু হয় নাই কারণ একটাই আর তা হচ্ছে মুখে ঐক্যের কথা বললেও বাস্তবে ছিল অনৈক্যজুলাই,২৪ ছিল জাতীয় ঐক্যের ঐতিহাসিক মাইলফলকদল-মত,ধম’-বণ’ নিব্বি’শেষে দেশ-প্রেমিক সকল মানুষ দাঁড়িয়েছিল এক কাতারেজাতীয়  ঐক্যের  কাছে পরাভুত হতে বাধ্য হয়েছিল ফ্যাসিবাদ হাসিনা সকারেরতাই এই বিজয় কারো কোনো একক গোষ্ঠীর বিজয় নয়এ বিজয় সব্ব’ মানুষেরজুলাই বিপ্লবে আহত-নিহত ছাত্র-জনতাই কেবলই বিজয়ের কৃতিত্বের একমাত্র দাবীদারআজ আমাদের দায় কেবল তাকে বাচিয়ে রাখবার

ঐক্য মতের কমিশনের সাথে যে কোন বিষয়ে বিভিন্ন দলের মতভেদ থাকতে পারেসব বিষয়ে সবাই একমত হবে এমন কথা নাইসবাই একমত হতেই হবে এমন হলে আলাপ আলোচনা করতে সবার বসার দরকার পড়ে নামত প্রকাশের স্বাধীনতাই তো গণতন্ত্রআমরা গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলছি আবার একমত হতে না পারলে প্রতিপক্ষকে ফ্যাসিবাদ বলে গালি দিচ্ছি তা কিভাবে হয়একমত না হলে যে আমরা প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম আমাদের ঐক্য নষ্ট হয়ে গেল তা নয়ছাত্র-জনতা ,আবাল বৃদ্ধ বনিতা ধম’-বণ’ নিব্বি’শেষে আপামর দেশবাসীর সম্মিলিত সফল বিপ্লবের একক সোল এজেন্ট হওয়ার চেষ্টা করে বিভেদ বিভাজন বাড়ানো থেকে বিরত থাকা উচিৎএক দল আরেক দলকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলা থেকে বিরত থাকিমিথ্যা প্রপাগান্ডা অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকিকারণ আমরা সবাই কম বেশী দোষে গুনে মানূষ আমরা কেউ ফেরেশতা নাকবির ভাষায় “আমরা সবাই পাপী নিজের পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি” এমন মাপা থেকে বিরত থাকতে হবেযে কোনো অবস্থায় আইনকে নিজেদের হাতে তুলে নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবেদেশের অগ্রগতিতে দেশের স্বাথে’,দেশের দেশের মানুষের মঙ্গলের স্বাথে’ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবেনিবা’চন হবে নিবা’চনে কেউ হারবে কেউ জিতবেনিবা’চনে জয়ী হয়ে কেউ ক্ষমতাসীন হবেন কেউ সংসদে বিরোধী আসনে বসবেনক্ষমতাসীনদের ভেতর কেউ প্রধান মন্ত্রী, রাষ্টপ্রতি হবেনতিনি যেন কোন দলের একক না হন,হতে হবে আঠার কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপ্রতিসংসদের ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলের সবার লক্ষ্য হওক দেশ এবং দেশের মানুষের মঙ্গলের চিন্তাভোটের মাধ্যমে শুধু সংসদে বসা কিংবা রাজপথে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে গাড়ী হাকাবার কথা ভাবলে চলবে নাঝঞ্জা-বিক্ষুব্ধ বিশ্বে দেশকে রক্ষা করতে হলে দেশের অগ্রগতির কথা ভাবলে সংসদ এবং সংসদের বাহিরে সকল রাজনীতিকদের মিলেমিশে একসাথে কাজ করতে হবেইন্টেরিম সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের আগে আসুন আমরা নিজেদের একটু সংস্কার করি

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA