Tuesday, February 11, 2020

ভাবতে দোষ কোথায় ?

মেয়েটাকে দেখে বেশ খারাপ লাগছিলো। প্রায় আট-দশ মাস হবে ছয় তালার ছাদের একটা রুমে কয়েকটা মেয়ে মেস করে ছিলো।গ্রামের বাড়ি রংপুরে।বাড়ির অবস্থা ভালো।বোন দুলাভাই স্কুলে মাস্টারি করে।সে মাস্টারি করবে না,তার অপছন্দ।যে ভাবেই হওক টাগে'ট কোনো মন্ত্রণালয়ের চাকরি।তাই পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা শহরে তার এই মেস জীবন।নিকটস্থ একটা প্রতিষ্ঠানে জব ট্রেনিং করছে আর পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। এখন অসুস্থ ছয় তালায় সিড়ি ভেংগে উঠতে কষ্ট তাই লিফট আছে এমন জায়গায় চলে যাচ্ছে।
এখন প্রায় প্রতিটি শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে চায় বিয়ের আগে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে।বিশেষ করে মেয়েদের ভেতর এ প্রবনতা একটু বেশী বলেই মনে হয়। চাকরি বাকরি করে প্রতিষ্ঠিত হলেই যেনো জীবনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি পাওয়া।তাতে বিবাহ বিলম্ব হওক সমস্যা নাই।আবার বিবাহিত,সংসারে সুখ সাচ্ছন্দ্য সবই আছে দু-চারটা সন্তান লালন পালন শিক্ষা দেওয়ার সামথ্য'আছে কিন্তু শিক্ষিত হয়ে ঘরে থাকবো কেনো?ভাবখানা এমন চাকরি করার জন্যই শুধু যেনো শিক্ষিত হওয়া।চাকরি বাকরি যা-ই হওক বাহিরে বেরোতে হবে,সেই সকালে বেড়িয়ে রাত নয়টা-দশটায় ফিরবো তবুও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে।
এই প্রতিষ্ঠিত হয়েও সুখ কি পাওয়া যায়?পাওয়া যায় কি নিরাপত্তা?নিশ্চয়ই না। আমার এক আত্মীয় প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে ৪৮ এ বিয়ে করলো ঢাকার বাহিরে চাকুরীজীবি মেয়ে।কথা ছিলো একবছরের ভেতর বদলী হতে পারলে ভালো,নতুবা চাকুরী ছেড়ে দেবে।কিন্তু বিয়ের পর দেখা গেলো বদলী হবার সুযোগ নাই।মেয়ে ছেলেকে বলে ব্যাবসা গুটিয়ে চলে আসো ছেলে বলে তুমি চাকুরী ছাড়ো।কেহ কাউকে দেয় নাকো ছাড়।অবশেষে বিবাহ বিছছেদ। কোথায় এবং কে কাকে দিলো নিরাপত্তা?আবার কারো সহসা সন্তান নিতেও চরম অনিহা কারো আবার অথে'র পেছনে ছুটতে আর অফিস নিয়ে ভাবতে ভাবতে সন্তান নিয়ে ভাববার ফুরসতই যেনো নাই।সেই প্রতিষ্ঠিত হতে হতে সময় গড়িয়ে যায়।বেলা শেষে একটা সন্তান নিয়ে নিজেদের অপূন্য'তা পুরনে ব্যাতিব্যাস্ত হতে হয়।
অন্যদিকে সেই কাক ডাকা ভোরে সল্প আয়ের কম'জীবি মা-মেয়েদের যেভাবে উচ্ছ্বাস নিয়ে কম'ক্ষেত্রে ছুটতে দেখা যায় কিন্ত রাতে যখন ফেরে তখন আর সেই উচ্ছ্বাস থাকে না।সারা দিনের কম'ক্লান্তিতে একেবারেই বিধধস্ত কোনো রকম দেহটাকে যেনো টেনে নিয়ে ঘরে ফেরা। তখন সে নিজের এবং পরিবারের অন্যদের আহারের ব্যবস্থা করবে নাকি শরীরের যত্ন নেবে নাকি সারাদিন ফেলে যাওয়া তার সন্তানের খোঁজ নেবে।এমনই আথি'ক অনটন সন্তানের ভরণপোষণ শিক্ষা দানে অক্ষম ঘরে,দ্রুতই ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।বছর না ঘুরতে সন্তান লুটোপুটি খাচ্ছে।ভুত ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার কোনো প্রয়োজন বোধ নাই।দিনে দিনে মাথা বাড়ছে কিন্তু মেধা মননে নীতি নৈতিকতায় দেশে সত্যিকার যোগ্যতর মানুষের ঘাটতি বেড়েই চলেছে।চারিদিকে তাকিয়ে মনে হয় সমাজ সংসারে মায়া-মমতা মনুষত্ববোধ আজ যেনো বিলীন হতে চলেছে।কারো প্রতি কারো দয়া-মায়া,শ্রদ্ধা-ভক্তি নাই।চারিদিকে কেবলই নাই নাই,চাই আরো চাই আর কেবলই খাই খাই ভাব।
শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। জীবন এবং জীবিকার তাগিদে কিছু একটা করতেই হবে।ঘড়ে বসে থাকলে পয়সা আসবে না খাবার আসবে না।কিন্তু সবকিছু থাকার পরও শুধু শিক্ষিত হওয়ার কারণে মেয়েদের চাকরি করতেই হবে আরো আরো বড় পদ ও পদবী চাই,আরো বেশি বিত্ত-সম্পদ গড়তে হবে,মানতে কষ্ট হয় বৈকি।কারণ নিজেদের সন্তানই বড় সম্পদ।তাকে সেবা যত্ন করে বড় করতে হবে।কেবল একজন মা-ই দিতে পারে মেধা ও মননে শিক্ষায় একটা সুস্থ সুন্দর সন্তান।যে কিনা হবে আগামীতে দেশ ও জাতির কান্ডারী।এমন আশায় আয়া-বুয়া ডে-কেয়ার গভা'নেস নয়,মায়ের কোলে মাতৃস্নেহে নীতি নৈতিকতার সুশিক্ষায় শিষ্টাচার মানুষ হবে আমাদের আগামীর প্রজন্ম,দেশের ভবিষ্যত কান্ডারী,ভাবতে দোষ কোথায় ?    

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.