Friday, July 25, 2025

ভাবতে হবে অনেক অনেক বেশি

লিখতে বসে কেন জানি একটা জনপ্রিয় গানের কথা মনে পড়লো তাই প্রথম লাইনটা “কেউ বলে ফাগুন কেউ বলে পলাশের মাস আমি বলি আমার সব’নাশ” দিয়ে শুরু করছি।বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বাচতে এবং  শান্তির জন্য ১৯২০ সালে লীগ অব নেশন দাড় করানো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক দুব’লতা সহ নানা কারণে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো ভুমিকা রাখতে পারে নাই।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের হতাহতে এবং অবন’নীয় ক্ষয়ক্ষতিতে হতবাক শান্তিপ্রিয় মানুষ ব্যথ'  লীগ অব নেশন বিলুপ্ত করে ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ গঠন করে।সেই  জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালে দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে ইজরাইলকে স্বীকৃতি দিলেও  প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনে কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই।সেই থেকে প্যালেস্টাইনবাসী  নিযা'তিত ।আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে সুদীঘ’ ৭৫ বছরের অধিক সময় ধরে ফিলিস্তিনিরা  ইজরাইলী দ্বারা নিপিড়ীত নিযা'তিত, হতাহতে বাস্তহারা ,দেশ ছাড়া হয়ে শেষে  ২০২৪শে গাযায় গণহত্যার শিকার হচ্ছে।বিশ্বের মনবতার ধারক বাহকরা দানব ইজরাইলীদের  উৎসাহ দিয়ে রসদ দিয়ে সাহায্য করছে।আমেরিকার আজ্ঞাবাহক জাতিসংঘ নামক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত নিজের কোনো ক্ষমতা নাই গাজা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য কোয়ালিশন ইরাকের ধ্বংসাত্মক সমরাস্ত্র থাকার অজুহাত,মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার নামে ইরাক আক্রমণ করে অমানবিক বব্ব’তা চালিয়ে লক্ষ লক্ষ ইরাকীকে হত্যা করেছে।আরব জাতীয়তাবাদী ইরাকী নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইরাকীদের দিয়ে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যার ব্যবস্থা করেছে।আরেক জাতীয়তাবাদী নেতা লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফীকে হত্যা করিয়েছে।জনগণের ভোটে নিবা’চিত মিসরে আরেক নেতা মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাকেও প্রহসনের বিচারের নামে হত্যার ব্যবস্থা করেছে।এইভাবে ইজরাইলকে নিরাপদ রাখতে শক্তিশালী ইরাক লিবিয়াকে ধ্বংস করেছে।ইজরাইল আন্তজা’তিক আইন লঙ্ঘন করে বারবার সিরিয়ায় আক্রমণ করছে ,ইজরাইল তার ইচ্ছামত লেবানন আক্রমণ করছে, সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপর হামলা করছে।জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী হত্যা তাদের স্থাপনা ধংস করলেও  ইজরায়েলের বিরুদ্ধে  জাতিসংঘ নিন্দা জানানো ছাড়া আর কিছু ই করতে পারে নাই।ইজরাইল পরমাণু বোমা রাখলে দোষ নাই সেখানে জাতিসঙ্ঘের তদারকির প্রয়োজন হয় না কিন্তু ইরান পরমাণু শক্তি অজ’ন করতে দোষ।তাই সুদুর আমেরিকা তার লাঠিয়াল ইজরাইলকে সাথে নিয়ে ইরানের পরমানু কেন্দ্রে বোমা মারলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না।জাতিসংঘ ইরাক, সিরিয়া, ইয়ামেন আফগানিস্তান কাশ্মীর, ইয়াংগুন (বামা') কোথাও মানবাধিকার রক্ষা করতে পারে নাই।গাজায় ফিলিস্তিনিদের বাচানো দূরে থাক নিজ সংস্থার কম'কতা'- কম'চারীদের জীবনের নিরাপত্তা দিতেও আজ পারছে না।তাই প্রশ্ন আমেরিকার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা ছাড়া যার কোন কাজ নাই সেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মিশন অফিসের ঢাকায় কাজ কি ? 

জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত ইনটেরিম সরকারের উপদেষ্টাগণের মাঝে জাতিসংঘ নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল।স্বৈরশাষক হাসিনার পতন ও দেশ ত্যাগের পর ভারতের অপপ্রচার প্রপাগান্ডায় এবং ইন্ধনে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টায় কিছু গোষ্টী নিজেদের উপর দলন নিপীড়ন- নিযা'তনের কল্পকাহিণী ফেদে দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে চাইছিল।হাসিনার গণহত্যাকে আন্ত’জাতিক স্বীকৃতি এবং তার বিচারের আন্ত’জাতিক অনুমোদন পেতে জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি দলকে এনে তাদের কাছ থেকে গণহত্যার প্রমান প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছিল।মানুষের ধারণা ছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ব্যাপারে আগ্রহ বোধহয় এখানেই শেষ।কিন্তু তা হয় নাই।গত ২৯শে জুন আইন উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুল ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।আজ মাস পার না হতেই অন্ত’বতি’ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানান হয়েছে দেশে মানবাধিকার সুরক্ষা এবং বিকাশের সহায়তা করার লক্ষে মিশন খোলার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এবং বাংলাদেশ সরকার একটা সমঝোতা স্মারক সহি করেছে।জাতিসংঘের মানবাধিকার  কমিশনের অফিস আছে বিশ্বের এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন ১৯তম দেশ।

বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায় দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস নাই।অধিকাংশই ল্যাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকায় অবস্থিত লাইবেরিয়া, মোরিতানিয়া বুরকিনা ফাসো, চাঁদ গুয়েতেমালা, কলম্বিয়ার,ফিলিস্তিন সিরিয়ার মতো দেশ।যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন গহযুদ্ধ,রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশগুলি অথ’নৈ্তিকভাবে দারুণভাবে বিপয’স্থ।এখন বাংলাদেশ তাদের গোত্রভুক্ত হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খুললে বাংলাদেশের কোন সমস্যা হবে না।কেউ আবার বলছে ভারত বাংলদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নিযা’তনের যে প্রপাগান্ডা চালায় তা এখন পারবে না।প্রশ্ন ডঃ ইউনুস সাহেবের ইনটেরিম সরকার দেশের গনহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ক্ষমতায় বসে রাজনৈতিক দল,সুশীল সমাজের সাথে মত বিনিময় না করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন?আমরা দেখেছি চিটাগং বন্দরের একটা টামি’নাল রাজনৈতিক দল,সুশীল সমাজ বন্দর ব্যাবহারকারীদের সাথে আলাপ-আলোচনা না করে বিদেশী কোম্পানীকে হ্যান্ডল করার সিন্ধান্ত নিতে।ঠিক একইভাবে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা না করে ইয়াঙ্গুনের রাখাইনে জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য প্রেরণের জন্য বাংলাদেশকে করিডর দেওয়ার কথা উঠেছিলে।চারিদিকের সমালোচনায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আর নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্য বিবৃতিতে মিল পাওয়া যায় নাই।কিছুদিন আগে একটা টকশোতে উপস্থাপিকার প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মাদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বেশ অহংবোধ নিয়ে বলেন বত’মান ইনটেরিম সরকার নিবা’চন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের যে মেন্ডেট নিয়ে এসেছেন সেখানে বন্দর করিডর সবই অন্ত’ভুক্ত।বন্দর উন্নয়ন আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেউ কিছু করতে  পারেন নাই ইনটেরিম সরকার কিছু একটা করার সেই চেষ্টা করছেন।

জুলাই বিপ্লবের পর ইনটেরিম সরকারের বছর পার হয়েছে।ইয়াঙ্গুন সরকারের আরাকান হাতছাড়া হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সংলগ্ন পুরা সীমান্ত এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রনে।শোনা যায় আরাকান আমী’ রোহিঙ্গাদের ব্যপারে পজেটিভ না।গত ঈদের আগে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের পর ইতিমধ্যে আরও দেড় লক্ষাধিক শরনাথী’ ঢুকে পড়েছে।বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থানের কারনে অথ’নৈতিক এবং সামরিক দিক দিয়ে গুরুত্ব পুন’ হয়ে উঠেছে।জাতিসংঘের নামে আমেরিকার অনুপ্রবেশ ঘটলে বাংলাদেশে  চীন-রাশিয়া-ভারত, ইয়াঙ্গুন থেকে চতু'মুখী বিপদ ডেকে আনার সম্ভাবনা আছে।অবস্থা দেখে ধারনা করা যায় ইয়াঙ্গুন সরকারের বিদ্রোহী আরাকান আমী’ মুক্ত আরাকান ফেরত পাওয়ার সম্ভবনা নাই।তাই চ্যানেল হওক আর করিডর হওক এতো উল্লসিত হয়ে আমাদের ভুমি ব্যবহার করতে দেওয়ার কোনো  প্রয়োজন নাই।বরং আরাকান আমী’ আর ইয়াঙ্গুন সরকারের উপর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জোর চাপ দেওয়ার পাশাপাশি রিলিফ নিভ’র কম’হীন শরনাথী’ যুবক-যুবতীদের সামরিক ট্রেনিং এবং লজিষ্টিক সহায়তা দিয়ে  সরাসরি তাদের অধিকার আদায়ে আরাকানে পাঠানোর রিস্ক নেওয়া করিডর দেওয়া থেকে উত্তম।

বাংলদেশে মানবাধিকারের জাতিসঙ্ঘের মান নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না।দেশের ভেতর আছে অনেক ধমীয় জাতিগোষ্ঠী যাদের কেউ কেউ আলাদা রাষ্ট্রের আশা করছে।বিভিন্ন ব্যক্তিগত সঙ্ঘাতকে সাম্প্রদায়িক ট্যাগ লাগিয়ে দেশকে যখন তখন অস্থিতিশীল করতে চায়।মিশন নিয়ে ইসলামী দলগুলি প্রতিবাদ করছে।সোস্যাল মিডিয়ায় জঙ্গী উত্থানের কথা বলা হচ্ছে।এমন অবস্থায় ট্রাম্পের কাছে নালিশ জানানো প্রিয়া সাহার কথা আজ ভুলে গেলে চলবে না। সেই ট্রাম্প সাহেব ক্ষমতায় আসতে না আসতেই  বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের অভি্যোগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের সাথে একই সুরে গান গাইতে দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবাড’কে।সুতরাং মানবাধিকার সুরক্ষা কিংবা উন্নয়ন, করিডর কিংবা চ্যানেল যাই হওক আমাদের ভাবতে হবে অনেক অনেক বেশি। ভাবতে হবে শুধু মাত্র মিশনের পাঠানোর মূলার লোভে খাল কেটে কুমির আনলাম নাতো ?

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA

প্রকাশ ঃ দৈনিক দিনকাল  তারিখ  ঃ  ১৯/০৮/২০২৫ ইং