ইতিহাস থেকে জানা যায় শশাংকের
মৃত্যুর পর ৬৫০ থেকে ৭৫০ খ্রীষ্টাব্দ পয্য’ন্ত প্রাচীন বাংলায় কোনো শক্তিশালী শাসকের
অধীনে কোনো সুসংহত কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল না।ফলে বড় বড় মাছ যেমন ছোট ছোট মাছ
গুলিকে গিলে খেতে চায় তেমনি রাজ্য জমিদার ও সামন্তরা ক্ষমতার জোরে যে যার মতো রাজ্য
দখল করতে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে।ফলে দূযো’গপুণ’ অরাজক অবস্থা তৈরী হয়েছিল যাকে ইতিহাসে
মাৎস্যন্যায়ের যুগ বলা হয়।এভাবে প্রায় একশত বছর পার
হওয়ার পর পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল ক্ষমতা এসে অরাজক অবস্থার অবসান ঘটান।বিংশ
শতাব্দীতে এসে সারা বিশ্বব্যাপী যেন সেই মাৎস্যন্যায়ের ছায়া দেখা যাচ্ছে।১৯১৪ সালে শুরু এবং ১৯১৮ সালে অবসান হওয়া
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর বড় বড় সাম্রাজ্য গুলি ভেঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় শক্তির উদ্ভব ঘটে,ইউরোপ
জুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়।আমেরিকা বিশ্বে শক্তিশালী দেশ হিসাবে আবি’ভুত,কমিনিষ্ট
সোভিয়েত এবং জামা’নীর হিটলারের উত্থান তরান্বিত হয়।১৯১৯ সম্পাদিত ভাসা’ই চুক্তিতে জামা’নির
উপর শাস্তিমূলক শত’ প্রয়োগে ইউরোপ আবারও অস্থির হয়ে পড়ে।বিশ্বকে যুদ্ধ থেকে বাচতে
এবং শান্তির জন্য
১৯২০ সালে লীগ
অব নেশন দাড়
করানো হয়।কিন্তু ব্যাথ’ হয় এবং শান্তি প্রিয় মানুষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হয়।১৯৩৯ সালে শুরু এবং ১৯৪৫ শেষ হওয়া দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ
মানুষের হতাহতে
এবং অবন’নীয়-অকল্পনীয়
ক্ষয়-ক্ষতিতে
শান্তিপ্রিয় মানুষ
ব্যথ' লীগ অব
নেশন বিলুপ্ত করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জন করা এবং জাতিসমূহের কর্মকাণ্ডকে সমন্বয় করার জন্য ১৯৪৫
সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ
গঠন করে।আজ ২০২৫ইং সালে জাতিসঙ্ঘকেও লীগ অব নেশন এর পথে হাটতে দেখছি।
হোলোকাষ্ট থেকে বেচে আসা ইউরোপীয় ইহুদীদের জাতিসংঘ ১৯৪৮
সালে দুই রাষ্ট্রের
ভিত্তিতে ইজরাইলকে
স্বীকৃতি দিলেও
প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র
গঠনে কোনো ব্যবস্থা
করে নাই।সেই
থেকে ফিলিস্তিনীদের হত্যা বাস্তচ্যুত করে নিজেদের সীমান্ত সম্প্রসারণ শুরু।আজ
তথাকথিত মানবতা রক্ষাকারী-গণতন্ত্রের রক্ষাকারী, আমেরিকা ইউরোপীয়ানরা রক্তপিপাসু
দানব ইজরাইলীদের দিয়ে পোড়া-মাটি নীতি অবলম্বন করে জাতিগত নিধনে ব্যস্ত।সকল
অবাকাঠামো ধ্বংস করে বোমা-গোলা থেকে বাচবার কোনো আশ্রয় আর ফিলিস্তিনীদের জন্য
অবশিষ্ট রাখে নাই।চিকিৎসা সেবা বন্ধ খাদ্য-পানীয় বন্ধ করে ফিলিস্তিনীদের অনাহারে
মারার জন্য খাদ্যকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে।ত্রান সাহায্যের নামে
ফিলিস্তিনীদের স্থানচ্যুত করে লাইনে দাঁড়ানো ত্রান প্রত্যাশী বুভুক্ষ
ফিলিস্তিনীদের উপর নিবি’চারে গুলি করে হত্যা করচ্ছে।বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী
মানুষের প্রতিবাদ ধিক্কার তিরস্কার কোনো কিছুতেই দানব থামানো যাচ্ছে না।ক্ষমতাবান
বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয় না।জাতিসংঘে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে বার বার ভেটোও প্রয়োগ
করে আমেরিকা ইজরাইলকে উৎসাহিত করছে।জাতিসঙ্ঘ কেবলই লিপ সাভি’স দিয়ে দাপ্তরিক কায’
সমাধা করছে নিজ কম’কতা’-কম’চারীদেরই লাশের সংখ্যা সংগ্রহ করছে।ওআইসি আরবলীগ অনেক
আগেই ইউরোপ আমেরিকার দাসত্ব গ্রহন করে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ ভাবে দানবকে উৎসাহিত
করছে।ইজরাইল প্রতিরোধহীন আগ্রাসী অভিযানে ওয়াক ওভার পেয়ে বৃহত্তর ইজরাইলের
মানচিত্র প্রস্তুত করে অন্যান্য আরব ভুখন্ড দখলের পায়তারা করছে।চলমান যুদ্ধ বিরতি
চুক্তির আলোচনার মাঝে ইজরাইল গাজা সিটি ধংসে অতিরিক্ত ষাট হাজার সেনা নিয়ে যখন
অগ্রসরমান তখন ইজরাইলী নেতাদের
যুদ্ধাপরাধের অভি্যোগে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির কারণে আন্ত’জাতিক অপরাধ আদালতের
দুইবিচারক ও দুই প্রসিকিউটরের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্র্যাম্প প্রশাসন।
আমেরিকার কূটনৈতিক পারদশি’তায়
গবা’চেভকে দিয়ে ওয়ারশজোট ভেংগে দেওয়ার
পর ন্যাটো জোট রাখা
এবং তা সম্প্রসারণ করতে হবে কেনো ? রাশিয়া তার সীমান্ত পয্য'ন্ত ন্যাটো সম্প্রসারণ মানতে
রাজি নয়।ফেব্রুয়ারী
২০২২ সালে রাশিয়া মানবাধিকার লংঘন ও নিজ সীমান্ত নিরাপদ রাখার অজুহাত দেখিয়ে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়।ইউক্রেন ই আজ এই ন্যাটো জোট ভুক্ত হওয়ার খায়েশে বলীর পাঠা।লোভে
ফেলে ইউক্রেনকে যুদ্ধে
নামিয়ে মানবাধিকার ও গনতন্ত্র রক্ষাকারী তথাকথিত বিশ্ব মোড়ল দেশ গুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগীতা করছে যুদ্ধ এখনো চলছে।তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার
আশংকা ছিল
অবস্থা দেখে মনে হয় নাহ,তেমন কিছু হবার নয়।পশ্চীমারা কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধকে নিজের ঘড়ে ডেকে এনে তাদের জনগণকে মানবিক বিপয'য়ের মুখে ফেলতে চাইবে না।অস্ত্র
উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী বিশ্বমোড়লদের প্রয়োজন অস্ত্র বিক্রয় করা।তারা চায় অস্ত্র গোলাবারুদ লাগে নেও তোমরাই
যুদ্ধ করো তোমাদের দেশে, জিতলে ভালো কথা মরলে তোমরাই মরো । অস্ত্র-গোলাবারুদের
মূল্য সময়ে বুঝে নেওয়া হবে।যেমনভাবে গত ফেব্রুয়ারিতে ট্র্যাম্প হোয়াট হাউজে জেলনস্কিকে
ডেকে এনে হোয়াইট ওয়াশ করে ইউক্রেনের বিরল খনির উপর আমেরিকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য করেছে।
গত সপ্তাহে বহু আকাঙ্ক্ষিত রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধ বন্ধের লক্ষে ট্র্যাম্প পুতিন আলোচনা আলাস্কায় সম্পন্ন হয়েছে কোনো প্রকার চুক্তি
ছাড়াই।আলোচনায় পুতিন যুদ্ধবিরতির শতে’ দোনেস্ক ও লুহানস্ক ইউক্রেনকে রাশিয়ার হাতে তুলে
দেয়ার দাবী তুলেছে।ট্র্যাম্প বৈঠকের বিষয় জেলনস্কিকে ফোনে যুদ্ধ বিরতির জন্য পুতিনের
শতে’র কথা জানান।বৈঠকের পর ট্র্যাম্প ট্রুথ সোস্যাল মিডিয়ায় পোষ্টে জানান যে রাশিয়া
বড় শক্তিধর রাষ্ট্র সেই তুলনায় ইউক্রেন কিছুই না।যুদ্ধবিরতি দীঘ’ মেয়াদী হয় না।যুদ্ধ
শেষ করতে চাইলে আপোষ করতেই হবে।পাকাপাকি শান্তিচুক্তি করতে হবে।জেলনস্কির আপত্তিতে
হোয়াট হাউজে ট্রাম্পের সাথে জেলনস্কির ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠক হয়েছে।ট্র্যাম্প
জেলনস্কিকে জানিয়েছেন শান্তির জন্য ক্রিমিয়ার আশা ছাড়তে হবে ন্যাটোতে সদস্যপদ লাভের
স্বপ্ন ভুলতে হবে।বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পের প্রশংসা যুদ্ধ বন্ধে
ট্রাম্পের ধারনাকে সমথ’ন করায় মনে হচ্ছে জেলনস্কির ইউক্রেনের নতুন মানচিত্র আকা ছাড়া
অন্য কোনো পথ আর খোলা নাই।
আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে যাই দেখতে পাবো এই আমেরিকা
ইউরোপীয় দেশ গুলিই জোট বেধে গনতন্ত্র রক্ষার নামে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের
বানানো অজুহাতে ইজরাইলের হুমকী আরব দেশ গুলিকে ধ্বংস করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষকে
হত্যা করে ।আফগানস্থানে লক্ষ
লক্ষ মানুষকে
হত্যা করে নরককুন্ড বানিয়েছে।ইজরাইল
তার ইচ্ছানুযায়ী সিরিয়ায় আক্রমণ করছে,লেবাননে আক্রমণ করছে। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করে
লেবাননকে দূব’ল করার ষড়যন্ত্রে লেবাননে গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা চলছে।ফিলিস্তিন
আর ফিলিস্তিনীদের হবার সম্ভাবনা নাই।ইরানের পরমাণু সক্ষমতা অজ’নের চেষ্টা বানচাল করতে
আমেরিকা-ইজরাইল যৌথভাবে ইরান আক্রমণ করেছে।ভারত কাশ্মীরে হত্যা নিযা'তন চালিয়ে
যাচ্ছে।ইয়াঙ্গুনের
জাতিগত নিধনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা
দিন দিন ক্ষীণতর হচ্ছে।বিদ্রোহী আরাকান আমী’র অত্যাচার-নিযা’তনে নতুন করে আরও কয়েক
লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়।আশংকা হয়, রাশিয়ার ইউক্রেনের
ভুখন্ড দখল
আমেরিকা আর ইজরাইলের প্যালেষ্টাইন দখলে উৎসাহিত হয়ে চীন তাইওয়ানের দিকে অগ্রসর হতে
পারে।শান্তি ও নিরাপত্তা,জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে গঠিত জাতিসংঘ
নামক প্রতিষ্টানটি এখন কেবলই নখ দন্তহীন বাঘ ছাড়া কিছুই না।বিশ্বব্যাপী শক্তিধর দেশ
গুলির দূব’লতম দেশ গুলির উপর চলমান আধিপত্যবাদী কতৃত্ববাদী কম’কান্ড দেখে অতীতের মাৎস্যন্যায়
যুগের আগমণের ছায়া দেখতে পাচ্ছি।
এমতাবস্থায় তিন দিকে ক্ষমতাধর শত্রুভাবাপন্ন
প্রতিবেশি বেষ্টিত বহুজাত,বহুমত দেশপ্রেমের ঘাটতিপুন’ অতি ঘন জনবসতি পূন্য’ ক্ষুদ্র
বাংলাদেশকে এখন গাজার কথা মাথা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি "সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়" এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত।দুভাগ্য’ আমরা সুপ্রতিবেশি পাই নাই,ইচ্ছা করলেও প্রতিবেশি
পরিবত’ন করতেও পারবো না। আমাদের সকল বিভেদ ভুলে সকল হটকারী
সিদ্ধান্ত ত্যাগ করে দেশ-প্রেমিক হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা ছাড়া বিকল্প নাই।শিক্ষাঙ্গনে শৃংখলা
ফিরিয়ে ছাত্র-ছাত্রদের পড়ায় মনোযোগী করাতে হবে।জাতিকে শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান
প্রযুক্তিতে উন্নত হতে হবে।পরনিভ’শীলতা কমিয়ে সকল বিষয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী হতে হবে।দেশের
প্রতিটি নাগরিককে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া এবং সকল বাহিনীকে আধুনিকায়নে ব্যবস্থা করতে
হবে।নতুবা দুব’ল হয়ে সবলের কাছ থেকে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব ধরে রাখা যাবে না।