দীঘ’ এক মাস যাবত লক্ষ্য করা গেছে যে বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়নি। বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষের চাপে বাইডেন এখন ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতিতে যেতে পরামর্শ দিলেও রক্তপিপাসু নেতানিয়াহু গণহত্যা বন্ধ করতে রাজি নন। এটি দেখে মনে হয় ছাত্র তার শিক্ষকের চেয়ে বেশি স্মার্ট হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহারের কারণে জাতিসংঘের এখন ফিলিস্তিনিদের ব্যপারে বিশ্ববাসীকে মৌখিক পরিষেবা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। জাতিসংঘের বিশেষ সুবিধা পেয়ে ইসরাইল একটা দানবে পরিণত হয়েছে যারা কিনা এখন জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের ভিসা না দেওয়ার হিম্মত দেখাতে পারে।বিশ্বের সভ্য দেশের নেতাদের জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নাই।যারা ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করছেন। আক্রমণকারী আগ্রাসী রাশিয়াকে থামাতে ইউক্রেনকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।কিন্তু আগ্রাসী দখলকারী বর্বর ইসরাইলকে তারা থামাতে চাইছে না, বরং ফিলিস্তিনিদের ওপর সব ধরনের অমানবিক বর্বরতম কর্মকাণ্ড চালিয়ে তাদের ভূমি দখল অব্যাহত রাখার অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। তাই শান্তিকামী মানুষের প্রশ্ন আর কতো নারী-শিশুর মাংস তাদের প্রয়োজন, কি পরিমান রক্ত, কতোটা ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ,কতো সংখ্যক আবাসন,কতো মসজিদ, গিজা’,কতোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কতোটা হাসপাতাল মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে মানবতাবাদী মার্কিন + ইউরোপীয় নেতাদের চলমান গণহত্যা বন্ধ করার জন্য বোধোদয় হবে ?
তারা ৭ ই অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের বিস্ময়কর আক্রমণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশ্বের চৌক্ষস সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীর গৌরবকে পরাভুত করে হামাস সীমান্তের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে ইজরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।ঠিক একই ইজরাইলী কায়দায় ১৪০০ এর বেশি বেসামরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষকে হত্যা করে এবং 200 জনেরও বেশি বেসামরিক এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যায়। ফিলিস্তিনিদের উপর ইজরাইলীদের নৃশংসতা এবং হামাসের পালটা নৃশংসতার কারণ তারা বিবেচনা করছে না। হোলোকাস্ট থেকে বেচে যাওয়া বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যের সরাসরি প্রভাবে ফিলিস্তিনে আশ্রয় পেয়েছিল। সেই আশ্রয়কারীরা ১৯৪৮ সালে মেনাচেম বেগিনের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের উপর প্রথম অমানবিক নৃশংসতা শুরু করে দেইর ইয়াসিনে। শতাধিক নারী ও শিশুসহ তাদের হত্যা করেছিল। বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের। ৭০ বছর আগে শুরু করা ফিলিস্তিনিদের হত্যা, বাস্তুচ্যুত করা, আটক ও তাদের ভূমি দখল আজো অব্যাহত রয়েছে। এভাবেই দিনে দিনে ফিলিস্তিনের ভূমি সংক্ষিপ্ত হয়েছে।যেখানে কোনো স্বাধীনতা নেই, সবকিছুই ইসরায়েলিদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।যুগ-যুগ ধরে ফিলিস্তিনিরা অধিক জনসংখ্যার ঘনবসতিপুণ’ পৃথিবীর একমাত্র খোলা আকাশের কারাগারে জীবন যাপনের নুন্নতম প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ছাড়াই মানবেতর জীবন-যাপন করছে ।জন্মেই তাদের দেখতে হয় মৃত্যুর
বিভীষিকা আর ধংসযজ্ঞ এ ভাবে ঘৃণা আর লাঞ্ছনায় গড়ে উঠছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ।
বছরের পর বছর ধরে হানাদার ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের বর্বরতা, অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন তারা শিশু ও নারীদের টার্গেট করে হত্যা করছে। ইসরায়েলিরা তাদের নতুন বসতি স্থাপনের জন্য ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘড় ধ্বংস করছে এবং দখল করছে। সভ্য বিশ্ববাসী চোখ বন্ধ করে আছে। ইসরায়েলিদের তারা কখনো ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বলেনা, তাদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেনা। এভাবে প্রতিটি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে যার জন্য তারা প্রতিশোধ নিয়েছে সন্দেহ নেই। তারা দেখছে প্রতিদিন একজন দুজন করে হত্যা করছে, তাদের বসতবাড়ি থেকে বিতারিত করছে। কিন্তু কোথাও কেহ নাই তাদের হয়ে কথা বলবার,তাদের উপর জুলুম নিযা’তন বন্ধ করবার।তারা যদি ভেবে থাকে একজন একজন করে কেন মরতে হবে? এভাবে তাদের মুক্তি আসবে না ,পাওয়া যাবে না মাতৃভূমির স্বাধীনতা।তার চাইতে দেশের জন্য মর্যাদা নিয়ে মরে যাওয়াইতো ভালো। ইউক্রেনে আক্রমণকারী হিসাবে মার্কিন এবং ইউরোপীয়রা রাশিয়াকে দোষারোপ করছে, রাশিয়াকে থামানোর জন্য সমস্ত সহায়তা প্রদান করে চলেছে।আফসোস, যারা তাদের ভূমির জন্য লড়াই করছে, তাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিচ্ছে তাদের জন্য কোনো প্রকার সহযোগীতা তো নাই বরং স্বাধীনতাকামী সেই যোদ্ধাদের তারা সন্ত্রাসী বলছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের উপর বর্বরতা অব্যাহত রাখার জন্য দখলদার ইসরাইলকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করে চলেছেন। এই দৈত ভূমিকার কারণে সারা বিশ্বে এমনকি খোদ ইজরাইল আমেরিকার বড় বড় শহরে ধম’বণ’ নিবি’শেষে শান্তিকামী মানুষেরা প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে।গাজায় স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি সহ স্বাধীন ফিলিস্তিনির দাবী উঠেছে।সন্দেহ নাই, বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকার প্রেসিডন্ট বাইডেন প্রশাসনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে, যা কিনা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
আচ’বিশপ ডেসমন্ড টুটু উদ্ধৃতি: "জুলুমের কালে তুমি যদি নিরপেক্ষ থাকো তা’হলে তুমি জালিমের পক্ষই নিয়েছ"
মুসলিম নেতাদের উপরোক্ত কথা মনে রাখা উচিত। নিজেদের মধ্যে সব ধরনের বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের কেউ কেউ শুধু মৌখিক পরিষেবা দিয়ে দায়ীত্ব শেষ করে যাচ্ছেন আবার কেউ ক্ষমতায় থেকে আরামদায়ক জীবন উপভোগ করতে তাদের নিরপেক্ষতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এই নিরপেক্ষতা, আমেরিকা ও ইউরোপের কাছে নতযানু থাকা সরাসরি ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নিধনে ইসরায়েলের নৃশংসতার হাতকেই শক্তিশালী করছে। তাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন,শুধুমাত্র বক্তৃতা সংলাপ দিয়ে ইসরাইলকে থামানো যাবে না।যেখানে মাথায় আঘাত করা প্রয়োজন সেখানে বিষাক্ত সাপের লেজে নরম হাতের স্পর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। উপলব্ধি করা দরকার যে মার্কিন এবং পশ্চিমারা কখনই তাদের বন্ধু হবে না
কেবল তখনি হবে যখন তাদের স্বাথ’ থাকবে, যখন তারা একে অপরকে হত্যা করার জন্য আরবদের মধ্যে বিভেদ করতে চাইবে। তাই আমেরিকা এবং পশ্চীমাদের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নিজের শরীরেও ব্যথা অনুভব করতে হবে বিশ্বের যে প্রান্তে হওক কোন ভাই যদি আক্রান্ত হয়ে কস্ট পায়।আপনার সম্পদ কেবল আপনার ভোগের জন্য নয়, আপনার ভাইয়েরও সেখানে অধিকার আছে। তাই এই মুহুর্তে আরব দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মধ্যে শুধুমাত্র ঐক্য ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই, হামাসকে যেকোনো মূল্যে সমর্থন প্রদানের জন্য তাদের মধ্যে সকল বিভেদ (শিয়া-সুন্নি ইত্যাদি) ভুলে যাওয়া প্রয়োজন। হিজবুল্লাহকে পূর্ণ শক্তি নিয়ে সরাসরি আক্রমণ করতে সুযোগ দিতে হবে। প্রত্যেক দেশের সীমান্তে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে একত্রিত করতে হবে। ভাবতে হবে জর্জ বুশ যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ইরাক আফগানিস্থানে তা এখন বাইডেন প্রশাসন সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আরব নেতাদের যৌথভাবে তাদের সমস্ত সম্পদ নিয়ে আরব শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে হবে এবং ইসরায়েলকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং তাদের নিজ সীমান্তে ফিরে যেতে, অন্যথায় সব রনাঙ্গনে মোকবেলা করতে হবে চ্যালেঞ্জ দিতে হবে। নিশ্চয়, যে কোনো একটি বড় শক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে যারা আরব বাহিনীকে সমর্থন করবে।সেক্ষেত্রে ইসরাইল ও আমেরিকাকে তাদের বর্বরতা চালিয়ে যেতে দুবার ভাবতে হবে।মনে করতে হবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকা পাকিস্তানকে সহায়তা করতে তার সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল কিন্তু যখন রাশিয়া তার ষষ্ট নৌবহর পাঠায় তখন আমেরিকা সরে যেতে বাধ্য হয়।তারা জানে যুদ্ধের ভয়াবহতা কি।তারা জানে অস্ত্র বিক্রি করে অন্যকে যুদ্ধে পাঠানো আর নিজে যুদ্ধে জড়ানোর পাথ’ক্য কি। ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে, আল-আকসা মসজিদ বাঁচাতে, মানবতা বাঁচাতে হলে যুদ্ধের ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। ব্যর্থ হলে, ফিলিস্তিনে গণহত্যা শেষ করার পরে, ইসরাইল মার্কিন সহায়তায় হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। এরপর আরব বিশ্বে ইসরায়েলকে চ্যালেঞ্জ করবে এমন কেউ থাকবে না। সব আরব নেতাদের মাথা অব্যাহত অবনত ই থাকবে উচ্চ হবে না আর কোনো দিন।অন্যদিকে ইজরাইলের বাধাহীন গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের ভুমি দখল করতে দেখে যে কোনো দেশ তার দুব’লতম প্রতিবেশীকে আক্রমণ করতে অনুপ্রানিত হবে ।
https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA
No comments:
Post a Comment