Wednesday, January 15, 2025

আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু

২০১৮ ইং সালে জাতীয় নিবা’চনের আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমি ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা সারা জীবন মনে রাখবে”।তিনি ঠিকই বলেছিলেন।ভারতবাসী সারা জীবন মনে রাখবে কিনা জানা নাই তবে নরেন্দ্রমোদী ভোলেন নাই।তিনি মনে রেখেছেন।জুলাই এর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে নিব্বি’চারে শত শত ছাত্র জনতা হত্যা ,লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা, হাজার হাজার মানুষকে রক্তাক্ত আহত করে জন-রোষে প্রাণ বাচাতে হাসিনা ভারতে পালিয়েছেন।নরেন্দ্রমোদী প্রতিদান হিসাবে হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছেন।তার দেখ ভাল এর ব্যবস্থা করেছেন।তাকে পুন'বাসনের জন্য একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামী, শিশু নি্যা'তনকারী এবং অনৈতিক কম'কান্ডে জড়িত এক ব্যক্তিকে দিয়ে দাংগা বাধানোর চেষ্টা করেছেন।১৮কোটি মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশের ইনটেরিম সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মিডিয়ায় নিত্য নতুন প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে তা তুলে ধরছেন।হাসিনাকে ভারতে বসে তার ফেলে যাওয়া নেতা-কর্মীদের উচকানি দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করার সুযোগ দিয়েছেন।

ভারতের সব সরকার সব সময়ই আওয়ামীলীগকে পছন্দ করে আসছে।আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতীয় সব সরকারই সকল প্রকার সহযোগীতা দিয়েছে।কিন্ত্ কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি প্রধান নরেন্দ্রমোদী সরকারের সাথে হাসিনা সরকারের সম্পক’ গড়ে উঠেছিল সব্ব’ কালের সব্ব’উচ্চতায়।নরেন্দ্রমোদী হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে বিরোধী মতের লোক দমন-পীড়নে,গুম-খুনে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিমু’ল করতে সহযোগীতা করেছে।এভাবে একটানা দীঘ’ পনের বছর ক্ষমতায় রেখে স্বৈরাচার বানিয়েছে।বিনিময়ে নাম মাত্র শুল্কের মাধ্যমে ট্রানজিট নেওয়া,অধিক মুল্যে আদানীর বিদ্যুত বাংলাদেশের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা সহ ভারতের প্রয়োজনে যা কিছু নেওয়ার সবই নিয়েছে।কিন্ত সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা এখনো বন্ধ করে নাই, তিস্তার পানি চুক্তিও করে নাই।তিস্তার পানি চুক্তি না করলেও ফেনী নদীর পানি নিতে চুক্তি ঠিকই করেছে।শোনা যাচ্ছে বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকতে ভারতের সাহায্য পেতে অন্যায্য ভাবে বাংলাদেশের ভুখন্ড ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছে।স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন দিল্লীতে পরবতি’ বিজিবি বিএসএফ বৈঠকে এসংক্রান্ত বিষয় আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসার চেষ্টা করা হবে।দেখে মনে হচ্ছে আওয়ামী আগামী ২০৪০ সাল পয্য’ন্ত হাসিনার ক্ষমতায় থাকার জন্য হয়তো বাকি ছিল সিকিমের লেন্দুপ দজি’র মতো ভারতের কাছে বাংলাদেশকে তুলে দেয়া।সময়ের অভাবে হয়তো বা তা করে যেতে পারেন নাই।মনে পড়ে ৭৫ পরবতি’তে বিবিসির সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাতে হাসিনা বলেছিলেন তিনি রাজনীতিকে ঘৃণা করেন।তবে ১৫ আগষ্ট ৭৫ এ তার পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করে যারা উল্লাস করেছেন তাদের এক মুহুত্’ শান্তিতে থাকতে দেবেন না।অথ’ পাচার/লোপাট থেকে শুরু করে তার দেশ বিরোধী সকল কম’কান্ডে যেন সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার।

মনে করা প্রয়োজন ১৮ই এপ্রিল, ২০০১ সালে বড়াইবাড়ি সীমান্তে বিডিআর হত্যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ আক্রমণ করলে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।চারিদিকে শোনা যায় প্রতিশোধ নিতে ভারতীয়রা পিলখানায় বোমা ফেলার পরিকল্পনা করেও পরে তা পরিবত’ন করে।কিন্তু বিডিআরকে দূব’ল করতে নেতৃত্বে থাকা সেনা অফিসার হত্যার পরিকল্পনা করে।বিডিআর এর ভেতর ডাল-ভাত ইস্যু তৈরী করা ছিল।২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ সালে পিলখানায় দেশ-প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার জড়ো করে সুপরিকল্পিত বিদ্রোহ ঘটিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা পিলখানায় ৫৭ জন সেনাকম’কতা’সহ ৭৪ জনকে হত্যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে দুব’ল করার পরিকল্পনা সম্পাদন করে।হাসিনা সরকার লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করলেও তার রিপোট’ আলোর মুখ দেখে নাই।বত’মান ইনটেরিম সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন আশা করি তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।আমরা দেখেছি ২০১৪ সালের জাতীয় নিবা’চন বিএনপি,জাতীয় পাটি’সহ সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল বয়কটের ঘোষনায় ২০১৩ সালে সম্ভবত ডিসেম্বরে তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা শিং কে দিয়ে এরশাদকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাতানো নিবা’চনের ব্যবস্থা করেছে।এভাবেই ভারত হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করেছে।

এতো বৈরীতার মাঝেও গত মাসে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচীবদ্বয়ের বৈঠক হয়েছে।বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের বিএসএফ এর সংখ্যা বৃদ্ধি, অ্যান্টি ড্রোন মোতায়েন ,ভারতীয় কোষ্টগাড’ কতৃক বাংলাদেশের জলসীমা থেকে নাবিকসহ মাছ ধরার ট্রলার ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।পরবতি’তে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশে আটক নাবিক সহ ট্রলার বিনিময় হয়েছে।পররাষ্ট্র সচীবদ্বয়ের বৈঠক হওয়ায় শান্তি প্রিয় মানুষ আশা করেছিল উভয় দেশের মাঝে বৈরীতার অবসান হবে,শান্তি আসবে।নাবিকসহ ট্রলার বিনিময় দেখে মানুষ যখন সেই শান্তির আশার আলো দেখতে শুরু করেছে তখন সীমান্তে আন্ত’জাতিক আইন লংঘন করে কাটা তারের বেড়া নিমা’নকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার বাড়তে শুরু করেছে।আন্ত’জাতিক আইন অনুযায়ী সীমান্ত পিলারের উভয় পাশে ১৫০ গজের ভেতর কোনো দেশই কোনো স্থাপনা নিমা’ন করতে পারে না।বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি এর বাধা সত্বেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফ কিন্তু তা বারবার উপেক্ষা করে যাচ্ছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় রাষ্ট্র দূত প্রণব ভামা’কে তলব করে বাংলাদেশের সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নিমা’নকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা এবং একজন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।এদিকে পরের দিন ভারত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব করে তাকে জানানো হয়েছে ক্ষমতার পালাবদলে সীমান্তে নিরপত্তা জোরদার করতে সীমান্তে যেখানে কাটাতারের বেড়া নাই সেখানে কাটাতারের বেড়া দেয়া হচ্ছে এবং তা ভারতীয় ভুখন্ডে।বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিএসএফকে দাঁড়িয়ে লোক দিয়ে সীমান্ত পিলারকে কেন্দ্র করে তারকাটার বেড়া দিতে দেখা গেলেও ভারতীয়দের এমন মিথ্যাচার এবং পাল্টাপাল্টি রাষ্ট্রদুত তলব একেবারেই অনাকাংখিত।


অতি সম্প্রতি ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং একইভাবে ভারতও বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণপ্রতিবেশী হিসাবে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে এবং পরস্পরকে বুঝতে হবে কোনো ধরনের বিদ্বেষ  কারো স্বার্থের জন্যই ভালো হবে নাতিনি আরও বলেন দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারব শুধুমাত্র যখন একটি নির্বাচিত সরকার থাকবে।কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় আফগান তালেবান সরকার নিবা’চিত সরকার নয় ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের সাথে আফগানদের সীমান্ত সংঘ’ষের পর যদি ভারত-আফগান সম্পক’ উন্নয়নের আলাপ আলোচনা হতে পারে তবে বাংলাদেশের বত’মান ইনটেরিম সরকারের সঙ্গে কেন নয়।বাংলাদেশের ইনটেরিম সরকার নিবা’চিত সরকার না হলেও ছাত্র-জনতার সফ্ল আন্দোলনে প্রতিষ্ঠিত সরকার। সম্ভবত ভারত আফগানদের বেলায় আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু এই নীতি অবলম্বন করছেন।

ভারত বাংলাদেশের বৃহতর প্রতিবেশী।বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিরোধী নয় তবে মোদী সরকারের বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কম'কান্ড তার আগ্রাসী-আধিপত্ববাদীতে বিক্ষুদ্ধপ্রকৃতপক্ষে এপার ওপার দুই দেশের শান্তি প্রিয় মানুষের কারো সাথেই কারো কোন বিবাদ কখনো ছিল না এখনো নাইতাই জুলাই বিপ্লবে হাসিনার নৃশংশতা দেখে ছাত্র-জনতার পক্ষে ভারতীয়রা যেমন রাস্তায় নেমেছে তেমনি বাংলাদেশের মানুষ আরজি কান্ডে সংহতি জানিয়েছে।রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে রাজনীতিকরা হিন্দু-মুসলিম কিংবা সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বিভেদের মাঝে ঘড় পোড়া  আগুনে আলু পুড়িয়ে খাওয়ার মতো ফায়দা লুটতে চায়।আসুন দক্ষিন পুব’ এশিয়ার শান্তির জন্য আমরা এপার-ওপার কেহ কোন একক ব্যাক্তির জন্য রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের কোনো প্রকার  হিংসা-বিদ্বেষ না ছড়াই প্রয়োজনে বিপদে-আপদে একে অপরকে সাহায্য সহযোগীতা করি।সু-প্রতিবেশী হিসাবে সুখে শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করতে চেষ্টা করিদক্ষিন পুব’ এশিয়ার শান্তির জন্য বৃহতর রাষ্ট্র হিসাবে ভারত সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকাই এ মহুত্তে’ অতি প্রয়োজন। 

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA