Thursday, August 28, 2025

এমন হলে কেমন হয়

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধারক সরকারের অধীনে অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীঘ’ দেড় দশক বিএনপি-জামায়াত সহ সমমনা দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করেছে।নেতা-কমী’রা জেল-জুলুম,মামলা-হামলা,গুম-খুন নিযা’তন-নিপীড়ন সহ্য করেছে।কিন্তু ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে টলানো সম্ভব হয় নাই।কারণ রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে পারে নাই।গনদাবী প্রতিষ্ঠিত করে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামাতে রাজনৈ্তিক নেতৃবৃন্দ ব্যথ’ হয়েছে।বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে নিষ্ঠুরতা-ব্বব’তা-নিম্’মতার সাথে হাসিনা সরকার দমন করতে ছাত্র-জনতাকে রক্তাক্ত হতাহত করলে সরকার পতনের একদফা দাবীর ডাক ওঠে।নিরিহ ছাত্র-জনতার উপর পৈশাচিক বব্ব’তায় এবং দেড় দশকের পুঞ্জিভুত ক্ষোভে তা গনদাবীতে রূপান্তর হয়।দল-মত নিব্বি’শেষে আপামর জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসে।দেশ-প্রেমিক সেনাবাহিনীও জন সমথ’নে পাশে দাঁড়ায়।ফলে জাতীর বুকের উপর দেড় দশকের জগদ্দল পাথড়ের মত চেপে বসা ফ্যাসীবাদী হাসিনার পতন এবং অবশেষে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।

জাতি হতাশ হয় আন্দোলনে নিহতদের সৎকার না হতেই ,আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে, আহত নিহতদের রক্তের দাগ না শুকাতে,হতাহতদের আত্মীয়দের শোক না ঘুচতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিপ্লবে নিজেদের একচ্ছত্র কৃতীত্ব দাবী এবং ক্ষমতা মসনদে কিভাবে কত দ্রুত বসা যায় তাতে ব্যস্ত দেখে।জাতি হতাশার সাথে দেখলো জুলাই বিপ্লব ফ্যাসীবাদী হাসিনা থেকে মুক্তি পাওয়া ৭১ এর স্বাধীনতার রক্ষা দিবস না হয়ে ২য় স্বাধীনতা হয়ে গেল।কিছু নেতাদের দেখলো নিজেদের বদনাম ঘোছাতে ৭১ এর স্বাধীনতার ইতিহাস মুছার চেষ্টা চালাতে।হাসিনা ইতিহাস বিকৃ্ত করতে দেড় দশক সময় নিলেও মাত্র কয়েক ঘন্টায় তারা ইতিহাস বিকৃ্তির কৃতীত্ব দেখাতে চেষ্টা করেছে।সেই ইতিহাস এতো দ্রুত মুছা কি সম্ভব?ফলে ঐতিহাসিক জাতীয় ঐক্যের ফাটল ধরেছে।বিশ্ববরেণ্য নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশের ভেতরে বাহিরে জটিল থেকে জটিলতর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন।ব্যক্তি ইমেজে আন্ত’জাতিক অঙ্গন সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারলেও আভ্যন্তরীণ জন নিরাপত্তা,দ্রুত নিবা’চনের ব্যবস্থা,লুন্ঠীত অস্ত্র উদ্ধার,ফ্যাসিস্ট সরকারের গুম-খুন লুটপাটের নায়কদের আইনের আওতায় আনার সফলতা নাই।গুম-খুন লুটপাটের নায়কদের যারা পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়ার খবর নাই।এই ব্যথ’তার দায় শুধু ইনটেরিম সরকারের নয় দায় আছে রাজনৈ্তিক দল এবং তার নেতাদেরও।   

জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারীরা সম্মানের উচ্চ আসনে থাকবে।জাতি তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে।আমরা সবাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে বলি কিন্তু নিজেরা তা করি না।স্বাধীনতার পর  প্রতারিত হয়ে মানুষ পরিবত’নের অপেক্ষায় থেকেছে।৭৫ দেখলো,৯০ দেখলো পরিবত’ন হয় নাই আবারও অপেক্ষায় থেকেছে।জুলাই’২৪ বিপ্লবে জাতির মাঝে নতুন করে আশা জেগেছিল অনেক অনেক বছরের প্রত্যাশা পূরণের।কিন্তু বিপ্লবের নায়করা তড়িঘড়ি রাজনৈতিক দল গঠন, বিভিন্ন অনৈতিক কম’কান্ডে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে,নিজেদের ভেতর দলাদলি কোন্দলে সেই প্রত্যাশা পূরনে ব্যথ’ হয়েছে।বাস্তবে কোন আক্ষরিক পরিবতন’ হয় নাই।বরং আমাদের আচার-আচরণে অবক্ষয়ের মাত্রা শত গুন বেড়েছে।নিবা’চন কমিশনে দলের নিবন্ধন নিতে ব্যথ’ হয়ে সমন্বয়কদের নিবা’চিত উপদেষ্টাদের গঠিত কমিশনকে বিত’কিত করা হচ্ছে।তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ছায়া দানকারী উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুলকে নিয়ে কুটুক্তি হয়েছে।অনেকের ধারনা উপদেষ্টাদের কারো কারো আশী’বাদপুষ্ট এনসিপি নিবা’চন চায় না।তারা চায় সরকারের ছায়া তলে আরও কিছুদিন থেকে সকল সু্যোগ সুবিধা ভোগ করবে এবং দল গোছানোর চেষ্টা করবে।

প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুস ফেব্রুয়ারীতে নিবাচ’ন ঘোষনা করায় জাতীয় নিবা'চন একেবারে দোর গোড়ায় দাড়িয়ে গেছে।তাই অনেকেই রুষ্ট, নেতাদের কথাবাতা’য় ডঃ ইউনুস এবং সেনাবাহিনী কাউকে কুটুক্তি থেকে বাদ রাখা হচ্ছে না।যখন তখন যাকে তাকে ফ্যাসিষ্ট,ফ্যাসিষ্টের সহযোগী ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।সংস্কার বিচার পিআর পদ্ধতির অজুহাত তুলে জামাতের সাথে সুর মিলিয়ে নিবা’চন না করার ও কথা বলছে।তারা ভুলে যাচ্ছে তারা দল করবে,ক্ষমতার অংশিদার হবে,তারা সংস্কার করবে সেই শতে’ জনগণ তাদের পাশে দাঁড়ায় নাই।সংস্কার দীঘ’ মেয়াদী ব্যবস্থা।দীঘ’ একবছরে জুলাই সনদ করা হলেও তাতে কেউ সন্তুষ্ট না।বৈঠক আর বৈঠকে বছর পার করেও জাতীয় ঐক্যমত্য কমিটি সংস্কার প্রশ্নে এখনো ঐক্যমতে পৌছাতে পারেন নাই।সংস্কারের জন্য ইনটেরিম সরকার কত বছর থাকতে হবে?সকল স্থানে দেড় দশকের ফ্যাসিষ্ট সরকারের অনুগত দলকানা কম’কতা’ কম’চারী রেখে সংস্কারে আশা করা আদৌ কি সম্ভব?এদেশে রাজনৈতিক নেতারা একমত হবেন এটা আশা করি কিভাবে?সুতরাং নিবা’চন দ্রুত হওয়া জরুরী।নিবা’চনে ভোট প্রয়োগ জনগণের অধিকার, দলের মেনুফেষ্টে দলের কম’কান্ড তুলে ধরা হওক জনগণ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাতে চাইলে বসাবে।কিন্ত কোনো দলের নিজেদের সুবিধার দাবীতে নিবা’চন পেছানোর চেষ্টা করলে জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।

সাধারণ মানুষ জুলাই বিপ্লবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবত’ন আশা করেছিল কিন্তু তা হয় নাই।জুলাই বিপ্লবের প্রথম ক’দিন সব থমকে ছিল তারপর যেমন আগে ছিল তেমনি চলতে শুরু করেছে,কোথাও কোথাও তার মাত্রা বেড়েছে।নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ আর ঘাপটি মেরে বসে থাকা জাতীয় পাটি’ বিহীন রাজনীতির মাঠে যারা স্থানীয় নিবা’চনে জামানত হারাবে তারাও নিজেদের এখন হিরো ভাবতে শুরু করেছে।ব্যালটের যুদ্ধের আগে সবাই রাস্তায় নেমে পড়েছে ক্ষমতার শো-ডাউনে।ইনটেরিম সরকারের নিরপেক্ষতায় প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।প্রতিদিন একপক্ষের ধমক আবার অন্যপক্ষের পাল্টা ধমক চলমান।সব দলের নেতাদের বচন বাচনে আগ্রাসীভাব।উদ্দেশ্য ক্ষমতার মসনদে বসতেই হ'বে।রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মারমুখী আচার আচরণ,মব জাষ্টিসে মানুষের মাঝে আতংক সেই আগের মতই।আগের মতই রাজনৈতিক নেতাদের যে অবস্থা দেখছি তাতে ডঃ মুহাম্মাদ ইউনুস  সরকারের নিবা'চনের সময় নিয়ে,সংস্কার নিয়ে তারা একমত  হতে পারছেনই না।নিবা’চনের পর ফলাফলে হারু পাটি’ সেই রায়  মেনে নেবে তার নিশ্চয়তা কোথায় ?

এই অবস্থায় গুটি কয়েক মান্যবর উপদেষ্টা দিয়ে গঠিত ইন্টেরিম সরকার কি করতে পারবেন দেশের?যদি কম্বলের পশম বাছতে যাওয়া হয় সেখানে কম্বলই কি খুজে পাওয়া যাবে?রাষ্ট্রের সংস্কার চাইছি,রাজনীতিকরা কি নিজেদের এবং দলের সংস্কার করছেন?একসময় প্রজাতন্ত্রের কম’কতা’-কম'চা্রীদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকলেও প্রকাশ্যে কেহ রাজনীতি করতেন না।বড়-বড় কম’কতা’রা কেহ সচরাচর জনসমাগমে আসতেন না।কিন্তু জনতার মঞ্চের মাধ্যমে এখন আর সেই রীতিনীতি নাই।জনতার মঞ্চের নায়কদের পরবতী'তে ফ্যাসিষ্ট হাসিনার অথ'-সম্পদ পদ-পদবীতে ফুলে ফেপে রাজকীয় জীবন যাপন করতে দেখে এখন অতি সহজ পথ রাজনীতির তকমা লাগিয়ে কেবলই উপরে উঠার পথ খুজছেন।সেই আমলাদের কি সংস্কার করা হয়েছে? রাজনীতিকরা আগের মতো কেহ যেন কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সবাই মেতে আছে জিঘাংসায়।

পি আর এবং সংস্কার, নিবা'চন কমিশনের নিরপেক্ষতা,প্রশাসনের নিরপেক্ষতা,সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে মিডিয়ায় গরম গরম বচন বাচন চলমান। নিবা'চন বয়কটের হুমকি,প্রধান উপদেষ্টার কেবলা নাকি লন্ডন বলা হচ্ছে।এমনি অবস্থায় তলে তলে আসন ভাগাভাগির চেষ্টা চলছে বলে গুজবের হাটে খবর রটেছে।যদি সত্যি হয় মন্দ না।আসন ভাগাভাগির ফয়সালা হলে নিবা'চন করে অযথা দেশের মানুষের রক্ত-ঘামের অথ' ব্যয় করার প্রয়োজন নাই।দরকার নাই ইভিএম,ব্যালট বাক্স,ব্যালট পেপার পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ বাধাবার।প্রয়োজন কি ভোটের জন্য প্রজাতন্ত্রের লক্ষ লক্ষ কম'কতা'-কমচারী নিয়োগের।প্রয়োজন নাই হাজার হাজার গাড়ীর জন্য লক্ষ লক্ষ লিটার তেল পোড়ানোর।কি প্রয়োজন আছে হাজার হাজার টন কাগজ ছাপানোর?মিছিল মিটিং রাস্তায় রাজনৈতিক দলের অন্ধ সমথ'কদের মারামারি খুনাখুনির প্রয়োজন নাই।বরং একটা কমিটি করে লটারির মাধ্যমে নিবা'চন আসন বরাদ্দ,মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দল ভিত্তিক ব্যবস্থা করলে খারাপ হবে না।যদি লটারি কমিটিতে দলকানার সন্দেহ থাকে সেক্ষেত্রে একমাত্র নিরপেক্ষ ফুটপাতের ভাগ্য গননার টিয়া পাখি বিকল্প রাখা যেতে পারে।একবার ভাবুন ,এমন হলে কেমন হয়? জনগণের ভোটাধিকার থাকুক না সংবিধান কিংবা জুলাই সনদের কাগজে।প্রশ্ন রেখে শেষ করি আর কত জনগণের রক্ত লাশের উপর রাজনীতিকগণ নীতি-নৈতিকতাহীন ভাগ-বাটোয়ারায় নিজেরা হালুয়া রুটির আর অধুনা হাসের মাংসের রসনায় আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন?দেশ এবং দেশের মানুষের কথা এবার অন্তত ভাবুন।

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA