চারিদিকে
আজকাল, প্রেরণামূলক
বক্তৃতা এবং তার বক্তারা বেশ জনপ্রিয়
হয়ে উঠেছে। কয়েকটি শোনার এবং দেখার পরে, আমার
কাছে ভালো লাগেনি এবং এব্যাপারে শোনার বা দেখার প্রতি আগ্রহ
বোধ করি না।
আমার দেখা বেশিরভাগ স্পিকার
তারা কোথাও না কোথাও চাকুরী
করেন অথ্যা’ত কিনা কর্মচারী । যারা যে
কোনো ভাবেই হওক জীবনে সাফল্যের
একটা কাংক্ষিত স্তরে
পৌঁছেছেন। সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়েছেন এবং
হতে পারেন স্বাস্থ্যকর
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মালিক। কিন্তু তারা
চাকরি তৈরি করে না
বা তাদের নিজস্ব কোনো
প্রতিষ্ঠান নাই যে প্রতিষ্ঠানে তিনি
মালিক হিসেবে কাউকে কাজ দিতে পারেন। তাদের
কাছে এমন
কোনো বাস্তব পণ্য নাই যা দিয়ে তারা মানুষের চাহিদা
পূরণ করতে পারে।তাদের কাছে আছে কেবলই তারা ঠোঁট পরিষেবা(লিপ
সাভি’স)এবং আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখাবার গল্প।আমার
কাছে মনে হয়েছে তাদের এই
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখাবার গল্প মানুষের মাঝে ঈর্ষা
জাগাতে এবং অর্থ
উপার্জনের দিকে প্রলুবদ্ধ করতে বেশ
প্রলুব্ধ করে।কিভাবে এবং কত দ্রুত ক্যারিয়ারের সিঁড়িতে
আরোহণের কৌশল রপ্ত এবং কম’ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে
গন্তব্যে পৌছানোর জন্য পাগল প্রায় করে ফেলে।হারিয়ে যায় মানবিকতা,শালীনতা এবং সহমমী’তাবোধ।
বক্তারা তাদের পরামর্শকে শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্পের উপর ভিত্তি করে প্রচার করতে পারেন। তারা ভাল উদাহরণ দিতে পারেন্ তাদের নিজেদের ভালো পদ পদবি এবং ভালো উপার্জন এবং ভালো প্রতিষ্ঠানের কথা বলতে।তারা যদি আগামীকাল আরো একটি ভাল সুযোগ পায়, সন্দেহ নাই কোন দ্বিধা ছাড়াই তারা তাদের প্রশংসা করা কোম্পানি পরিবর্তন করবে। আজ, তারা যে ব্র্যান্ডের প্রচার একেবারে ঠোট থেকে কান অবধি লম্বা হাসি দিয়ে প্রচার করেছিলেন আগামীকাল একই ভাবে তারা অধিক সুবিধা পেয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান এবং সেই প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডের প্রচারণায় গলদঘম’ অবস্থা।তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আমাদের দেশের মত অনুন্নত দেশের রাজনৈতিক কিছু নেতাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য আনুগত্য পরিবর্তন করার সাথে বেশ মিল খুজে পাওয়া যায়।
আমি ঐ সমস্ত ব্যক্তির চ্যালেঞ্জিং গল্প শুনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, যিনি তার যৌবনে কঠোর পরিশ্রম এবং ঘামের মাধ্যমে নিজেকে সাফল্যের চুড়ায় পৌছেছেন। একসময় যিনি কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র একজন সাধারণ কম’চারী ছিলেন, তিনি তার সততা কম’দক্ষতায় দিয়ে এখন একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন এবং অন্যদের জন্য কাজ প্রদান করার মতো যোগ্যতা অজ’ন করেছেন। এই ধরনের একজন ব্যক্তির বক্তৃতা তার জীবনের গল্প যে কাউকে নৈতিকতার আন্তরিকতার, মর্যাদাপূন’ সৎ মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করতে পারে তা নিশ্চিত। বিপরীতে, কর্মচারী-বক্তাদের এই গভীরতার অভাব রয়েছে। তারা শেখায় না কীভাবে একজন ব্যক্তি প্রকৃত মানুষ হতে পারবে, কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে সততা এবং সম্মানজনক আচরণ করতে পারবে, বা পদ-মর্যাদা নির্বিশেষে সহকর্মীদের সাথে কীভাবে সম্মানের সাথে আচরণ করতে পারবে। তাদের বক্তৃতাগুলি কীভাবে উচ্চতর নৈতিকতা গড়ে তুলতে হয় বা একটি সুগঠিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হওয়া যায় তা পারে না। তারা পারিবারিক/সামাজিক এবং জাতীয় সমস্যাগুলি সমাধান করা যায বা করতে হবে সে ব্যাপারে উতসাহ জোগাতে পারে না , পারে না পরিবার সমাজে একে উপরের মাঝে সম্প্রীতিঢ় বন্ধন তৈরি করতে বা দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে না।
এইভাবে, অনুপ্রেরণামূলক স্পিকারের অনুগামীরা সবসময় নিজেদেরকে নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে নিজেদেরকে সব জায়গায় প্রদশ’ন করতে বেশী সাচ্ছন্দ্যবোধ করে আশে পাশে সামনে পেছনে কারো দিকে তাকানোর তারা প্রয়োজন অনুভব করে না।সব সময় তাদের আচার আচরণে বাচনভংগীতে মঞ্চের অভিনেতা অভিনেত্রীদের মতো মনে হয় সেখানে আন্তরিকতার লেশমাত্র নাই। এরা কম’ক্ষেত্রে তার পাশের সহকর্মীদের দিকে তাকানোর সময় পায় না, তাদের বিপদের সময় তাদের দিকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে না। তাদের কোনো কাজে উত্সাহিত করার বা সহযোগীতা হাত বাড়িয়ে দেয়ার আগ্রহী হতে পারে না। তাদের লক্ষ্য নিজে কিভাবে কতদ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উচ্চতর আসনে আরোহণ করা যায় কিভাবে অনেক অনেক বেশী নিজের জন্য টাকা পাওয়া যায়।
সম্ভবত আমার দুর্ভাগ্য যে আমি সত্যিকারের কোনো অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তি বা প্রেরণাদায়ক বক্তা খুঁজে পাইনি। পরিবর্তে, আমি দেখেছি কীভাবে মানুষ ব্যক্তিগত সাফল্যের সাধনায় নিজের নীতি-নৈতিকতা , সততা এবং ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিতে। আমি প্রত্যক্ষ করেছি, মিটিং চলাকালীন একজন জুনিয়র অফিসার চিৎকার করে অফিস প্রধানকে “ তুমি ইডিয়ট তুমি একটা ষ্টুপিড বলে অপমান করতে।কিন্তু সেই অফিস প্রধানের কাছে এসব কোনো ব্যাপার বলে মনে হয় নাই উনি মুখে হাসি ধরে রেখেছেন। তিনি শান্ত ভাবে মিটিং শেষ করে মিটিংযের সফলতায় মুখে লম্বা হাসি রেখে মিটিং থেকে বেড়িয়ে গেলেন।ঘটে যাওয়া ঘটনায় একেবারে ভাবলেশহীন, তার সাফল্যই যেন মিটিং সফল করা ।তিনি তা পেরেছেন সেখানেই সফলতা।তিনি রাগতে পারেন না কারণ তিনি শিখেছেন কোনো অবস্থায় রাগ কড়া যাবে না।
আমি বিশ্বাস করি যে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকেরই তাদের সহকর্মীদের একটি পরিবার হিসাবে দেখা উচিত।সবার মধ্যে দৃঢ় সৌহার্দ্য সহমমী’তা বজায় রাখতে হবে।অফিস প্রধানকে অবশ্যই অন্যদের উপর কর্তৃত্ব করা এবং তাদের সাথে সমন্বয় করার পার্থক্য বোঝা অপরিহার্য। যদি কেউ তার প্রতিষ্ঠানে উপরে ওঠার আকাঙ্ক্ষা করে, তবে তাকে নিশ্চিত করা উচিত যে তার প্রস্থান জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, হিংসা বা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় না নিয়ে পরবর্তী কাউকে তার স্থানের জন্য তৈরী করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে,মানুষ তার প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যায় না, তারা তাদের বসকে ছেড়ে যায় বা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। সত্যিকারের জীবনের সাফল্য হবে তখনই আপনি চলে যাওয়ার পর আপনার অবত’মানে সকলে না হওক অন্তত একজনও যদি শ্রদ্ধার সাথে আপনাকে স্মরণে রাখে।
https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA