ইউক্রেন এক সময়ের অবিভক্ত সোভিয়েত রিপাবলিকের একটি অংশ ছিল।১৯৯১ সালে ইউক্রেনে সোভিয়েত রিপাবলিকের নেতা লিওনিদ ক্রাভচুক মস্কোর অধীনতা থেকে ইউক্রেনকে মুক্ত করেন।নিবা’চনের মাধ্যমে স্বাধীন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিবা’চীত হন।২০১৪ সালে রুশ সমথি’ত বিচ্ছিনতাবাদীরা ডনবাস নদী অববাহিকার রাশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন ইউক্রেনের লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের বিশাল এলাকা দখল করে স্বাধীনতার ঘোষনা করে।কিন্তু আন্তজা’তিক ভাবে স্বীকৃতি পায় নাই।ইউক্রেন প্রদেশ দুটি নিয়ে বেশ বিপাকে ছিলো আর তা দমন করতে গিয়ে তার বিশেষ আজভ বাহিনী দিয়ে চরম নৃশংষতা চালিয়েও বিরুদ্ধবাদীদের পরাশক্তি রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগীতার কারণে দমন করা সম্ভব হয় নাই।এদিকে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের চেষ্টা এবং আমেরিকা ন্যাটো সম্প্রসারণে বিশেষ নজর দিতে থাকলে পরমানু অস্ত্র রোধ , মানবাধিকার লংঘন ও নিজ সীমান্ত নিরাপদ রাখার অজুহাত দেখিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনে জল স্থল অন্তরীক্ষে আগ্রাসন চালিয়ে বসে।গনভোটের মাধ্যমে রুশ সমথি’ত বিচ্ছিনতাবাদীদের লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের অধিকৃত এলাকাকে রাশিয়ার অন্তভু’ক্ত করে ফেলে।এই আগ্রাসন শুধু যে ইউক্রেনে মানবিক বিপয্'য় ডেকে এনেছে তাই নয় গোটা বিশ্বকেই অথ'নৈতিক অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে।সেই যুদ্ধ দুবছর পেরিয়ে এখনো চলছে কবে থামবে কারোরই জানা নাই।
আক্রান্ত ইউক্রেনকে নিয়ে শুরু থেকেই মানবাধিকার ,গনতন্ত্র রক্ষাকারী তথাকথিত বিশ্ব মোড়ল দেশ গুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বেশ উঠে পরে লেগেই আছে ইউক্রেনে আগ্রাসন ও মানবাধিকার লংঘনের অজুহাতে ।রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে একের পর এক, এখনো চলছে ।তাদের দেশে সম্পদশালী রাশিয়ান নাগরিকদের সম্পদ জব্দ করেছে ।রাশিয়াও বসে ছিলো না তারাও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাইডেন সহ অনেকের উপর।আশংকা ছিলো অনেকের,না জানি কখন তৃতীয় বিশযুদ্ধ বেধে যায় ইউক্রেনকে নিয়ে।নাহ , তেমন কিছু হয় নাই ইউক্রেনকে নিয়ে তা হবার আপাতত কোনো সম্ভাবনাও নাই।আমেরিকা কিংবা পশ্চীমারা কেহই কোনো অবস্থাতেই কখনো যুদ্ধকে খুব সহজে নিজের ঘড়ে ডেকে এনে তাদের জনগণকে মানবিক বিপয'য়ের মুখে ফেলতে চাইবে না ।অস্ত্র গোলাবারুদ যা প্রয়োজন লাগে নেও,প্রশিক্ষণ প্রয়োজন দেবো, অথ’ লাগে তাও দেবো।তোমরা যুদ্ধ করো , তোমার দেশের অবকাঠামো ধ্ংস হওক ,ধংস হওক তোমার শহর বন্দর, জিতলে ভালো কথা আর মরলে তোমরাই মরো ।
আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে যাই দেখতে পাবো এই দেশ গুলিই জোট বেধে তাদের কারোর ই নিকট প্রতিবেশী নয় কোথাও গনতন্ত্র রক্ষার নামে কোথাও মানব বিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংসের অজুহাতে সম্পদশালী ইরাক ,সিরিয়া লিবিয়াকে, আবার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের আজুহাতে লাদেনকে মারতে আফগাস্থানে যত প্রকার মারনাস্ত্র আছে তার পরিক্ষা চালিয়ে অকাতরে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ নিয়ে দেশ গুলিকে নরককুন্ড বানিয়েছে।আফগানস্থানকে ধংসস্তুপ করে ফেলে এসে অথ'নতিক সাহায্যদান বন্ধ এবং তাদেরই অথ' জব্দ করে দেশটিকে মানবিক বিপয'য়ে ফেলে দিয়েছিল।বি্শ্বের একমাত্র উন্মুক্ত কারাগার ফিলিস্তিনের গাজাকে দখলদার ইসরাইলীদের দিয়ে দোযখ বানিয়ে ইতিহাসের চরম এবং বিরলতম বব্ব’র এবং নৃশংশতার মাধ্যমে গাজায় বিশ্বের বৃহতম কবরস্থান বানাতে সকল প্রকার সহযোগীতা করে যাচ্ছে এখনো।এখানে কিন্তু মানবাধিকার লংঘিত হয় না । মধ্য প্রাচ্যের দুষ্ট-ক্ষত আগ্রাসী ইজরাইলের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারেবে কিন্তু ইরান তা বানাতে চেস্টাও করতে পারবে না । আগ্রাসী ইজরাইলীরা ফিলিস্থিনীদের তাদের ইচ্ছানুযায়ী হত্যা করতে পারবে , ফিলিস্থিনীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে কিন্তু ফিলিস্থিনীরা প্রতিরোধ করতে পারবে না। এভাবেই আজ আমেরিকা আর তার দোসর পশ্চিমাদের বণ'বাদী দুমুখো নীতির চেহারা প্রকাশিত হয়ে গেছে পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে।সারা বিশ্ব জুড়ে ধম’-বণ’ নিবি’শেষে শান্তিকামী মানুষের প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘ আমেরিকা আর তার দোসর পশ্চিমাদের ইরাক,লিবিয়া,সিরিয়া আফগানিস্থানে আগ্রাসন চালিয়ে মানবতা ভুলুন্ঠিত করা বন্ধ করতে পারে নাই ।সৌদি জোট কে ইয়ামেনে ধংসযজ্ঞ থেকে বিরত রাখতে পারে নাই। রাশিয়া কতৃক ইউক্রেন আক্রান্ত হওয়া মাত্র মানবিক বিপয'য়ে ইউক্রেনবাসীর পাশে দাড়ানোর মতো ৭০বছরের অধিক সময় থেকে নিযা'তিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাড়িয়ে দখলদার ইসরাইলীদের অমানবিক নিষ্ঠুরতা, বব্ব'র আচরণ বন্ধ করতে পারে নাই ।যদি পারতো তবে হয়তো যতই পরাশক্তি হওক, রাশিয়াকে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর আগে আরো দশবার ভাবতে হতো। আশংকা হয়, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমনের সাফল্য এবং আমেরিকা আর পশ্চীমাদের পৃষ্টপোশকতায় ইসরাইলীদের গাজায় চলমান গনহত্যায় জাতিসংঘের অসহায়ত্তে উৎসাহিত হয়ে না জানি কখন চীন তার দাবীকৃত তাইওয়ানের দিকে অগ্রসর হয়। ওয়ারশ জোট ভেংগে দেওয়া নিঃসন্দেহে আমেরিকার একটা বড় বিজয় ।কিন্তু ন্যাটো জোট থাকবে কেন, আর থাকলে থাকুক তা সম্প্রসারণ করতে হবে কেনো ? রাশিয়ার আগ থেকে তার সীমান্ত পয্য'ন্ত ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে ঘোর আপত্তি ছিলো ।ইউক্রেন ই আজ এই ন্যাটো জোট ভুক্ত হওয়ার খায়েশে বলীর পাঠা।আমেরিকার পররাস্ট্র মন্ত্রী বিল্কেন সাহেব মিসর,জডা’ন,কাতার,সৌদি-আরব,আরব আমিরাত,ইজরাইল ও পশ্চীমতীর সফরের সময় যুদ্ধ বন্ধের কোন কথা বলে নাই।গাজায় খাদ্য নাই, পানি নাই ,জ্বালানী নাই মৃতের সৎকারের ব্যবস্থা নাই,বেচে থাকা মানুষের আশ্রয়স্থান নাই,আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই, গাজাকে বাসের অযোগ্য ঘোষণা করে যে কোনো সময় মহামারীর আশংকার কথা জাতিসংঘ কতা’দের বারবার হুশিয়ারী সত্বেও বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত নয়।অবস্থা দেখে মনে হয় বাইডেন প্রশাসনে উদ্দেশ্য গাজায় গণহত্য বন্ধ নয় যুদ্ধ বিস্তৃতি যাতে না ঘটে,ইজরাইল যাতে অন্য কোনোভাবে অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত না হয় তার ব্যবস্থা করা।
গাজায় ইজরাইলী গণহত্যার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইজরাইলী পন্যবাহী জাহাজ অথবা ইজরাইলী বন্দরগামী জাহাজে ইয়ামেনের হুতিরা আক্রমণ করে আসছিলো। তাদের দাবী গাজায় ইজরাইলী গণহত্যা বন্ধ করা না হ’লে তারা আক্রমণ করেই যাবে। হুমকির কারণে লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ খাল যাতায়াত করা জাহাজ চলাচল বন্ধ হতে বসেছে ।জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষধে হুতিদের আক্রমণ বন্ধে রাশিয়া, চীন, আলজেরিয়া ও মোজাম্বিক ভোট দানে বিরত থাকলেও ১১-০ ভোটে প্রস্তাব পাশ হতে না হতে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ইয়েমেনে হুতিদের উপর নৌ ও আকাশপথে আক্রমণ শুরু করে ইজরাইল-হামাস যুদ্ধে প্রকাশ্যে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ফেলেছে।সভ্য জগতে হলোকাষ্ট ন্যায্যতা পায় নাই,তবে কেনো গাজায় গণহত্যা বন্ধে সভ্য-জগতের নেতারা চোখ বন্ধ করে থাকে ?ইজরাইলী গণহত্যার প্রতিবাদে হুতিদের সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলে বাধাদানও গ্রহণযোগ্য নয় কিন্তু কিভাবে ইজরাইল নিজ দেশের নিরাপত্তার অজুহাতে সিরিয়ায় যখন-তখন আক্রমণ করে?সিরিয়ার অনুমোদন ছাড়া আমেরিকা কিভাবে সিরিয়ার ভুখন্ডে ঘাটি গেড়ে সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের সহযোগীতা করে ? কিভাবে সিরিয়ার তেলকুপের তেল পাচার করে?ইতিমধ্যে গাজায় ইজরাইলি হামালায় মৃত্যু ৩০০০০ হাজার আর আহত ৭০০০০ ছুয়েছে।ইজরাইলি আক্রমণ থেকে বাচতে শেষ আশ্র্য় মিসর সীমান্তে রাফায় প্রায় পনের লক্ষ ফিলিস্তিনী আশ্র্য় নিয়েছে।সেই রাফায় আক্রমণের নামতে যাচ্ছে ইজরাইল।যা হবে মানবতার চরমতম বিপয’য়।বিভিন্ন রাস্ট্র নেতারা আক্রমণ থেকে বিরত থাকার আহব্বান জানালেও ইজরাইলে সমরাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে নাই কেহই।এই লেখা যখন শেষ করতে বসেছি তখন দক্ষিন গাজায় ত্রানের খাদ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমান ফিলিস্তিনীদের উপর ইজরাইলী বাহিনী অতকি’ত গুলি চালিয়ে ১১২জনকে হত্যা ও ৭৫০ জনের বেশী ফিলিস্তিনীকে আহত করেছে।এই বরব’তা হিটলারের হোলোকাষ্ট হত্যাকান্ডকে আজ হার মানিয়েছে।তাই প্রশ্ন আবারও এসে যায় ইউক্রেন ,ইয়ামেন, লিবিয়া, সিরিয়া,ইরাক আফগান ,ফিলিস্থিনী সহ বিভিন্ন দেশে মানবিক বিপয'য়ের এই দায় কার?বিশ্ব মোড়লরা কি পারবে কোনো দিন বিশ্বে শান্তির জন্য তাদের বণ'বাদী দুমুখো নীতি পরিহার করতে? সমরাস্ত্র ব্যবস্যা সচল রাখতে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষধে ভেটো ক্ষমতার যথেচ্ছা ব্যবহারে তার সম্ভাবনা কম তবুও বিশ্বে ন্যায় বিচারের প্রত্যশায় বিশ্ব মোড়লদের জাতিসংঘের নিরাপত্বা পরিষধে ভেটো ক্ষমতা বিলোপ করা প্রয়োজন,সেই সাথে এখন সময়ের এটাও দাবি জাতিসংঘের পুনা’ঙ্গ সংস্কার।
https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA