ঈদের দীঘ’ ছুটিতে এ বছর নিদ্দি’ষ্ট দিন ২রা
এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনা দিবস সরকারীভাবে পালিত
হবার তেমন কোনো আয়োজনও চোখ পড়ে নাই।তবে এমটিবি ফাউন্ডেশন ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ট্রাস্ট এর
সাথে অংশীদারিত্বে ‘বিশ্ব
অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২৫’পালন উপলক্ষে ‘স্নায়ুবৈচিত্র্যের অগ্রগতি এবং জাতিসংঘের টেকসই
উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)’ উদযাপন করেছে বলা জানা যায়।প্রতিবারই দিনব্যাপী সেমিনার সিম্পোজিয়ামে সরকারের
বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের কথা আলোচনা হয়।আশা করি আগামী ২রা এপ্রিল যথাযথ দিবসটি পালিত
হবে।প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রী সন্তান পাওয়ার
আশায় এবং সেই সন্তানের মাধ্যমে নিজেদের মা-বাবা হবার কতো না স্বপ্ন নিয়ে
থাকে।সন্তান যে অবস্থায় থাকুক না কেন তাকে আগলে রাখে।সেই শিশু যখন বড় হয় অটিজম
আক্রান্ত হয় তাকে সামাল দেয়া কষ্ট হয় তখন পুরা পরিবারে এক অশান্তি নেমে আসে।কিছুদিন
আগে সাংবাদিক তারিক চয়ন এর ফেস বুক ওয়ালে একটা পোস্ট দেখলাম এক মায়ের আকুতিঃ “আমি
মনে প্রানে চাই,আমার অটিষ্টিক মেয়েটা খুব শীঘ্রই মরে যাক আর সহ্য করতে পারি না”।কতোটা
বেদনা কতোটা হতাশায় নিমজ্জিত হলে জন্মদাত্রী তার সন্তানের মৃত্যু কামনা করতে পারেন?একমাত্র
বিশেষ
চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের (অটিজম
আক্রান্ত) পিতা-মাতা ছাড়া আর কেহ সেই কষ্টের কথা বুঝবার নয়।
দেশে
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।তাদের অনেক ধরনের সমস্যা আছে।কারো
আছে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা, কারো কথা বলা ও শোনার সমস্যা, কারো সবকিছুতেই অমনো্যোগী,
কেহ খুব বেশী চঞ্চল, কারো আবার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বেকে যাওয়া, বয়স অনুযায়ী মানসিক
বিকাশ না হওয়া ছাড়াও নানা সমস্যা।গুগল থেকে “ইপন”এর একটা অনেক আগের গবেষণার তথ্য থেকে
জানা যায় শহরে প্রতি দশ হাজারে সতের শিশু অটিজমে আক্রান্ত।গ্রামে এর সংখ্যা প্রতি দশ
হাজারে চৌদ্দ জন।এদের কারো দরকার বিহেবিয়ার থেরাপি,কারো প্রয়োজন স্পিচ থেরাপি কারো
অকুপেশনাল থেরাপি কারো দরকার ফিজিও থেরাপি।জন্মগত সমস্যাতো আছেই ডিজিটাল যুগে এসে শিশুদের
ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইজে আসক্ত করে পিতা-মাতার অসচেতনতা,অবহেলা,অজ্ঞতায় সুস্থ শিশু নিজেদের
অজান্তেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
একবার এমনি এক যুবতী মায়ের সাথে আলাপ হয়,তিনি জানান বাচ্চার দু’বছর পর মাস্টারস পরীক্ষা জন্য তৈরী হতে গিয়ে ছেলেকে শান্ত রাখতে হাতে ডিভাইস তুলে দিয়ে ছেলের সব’নাশ করে ফেলেছেন।ছেলে আর মোবাইল ছাড়া শান্ত থাকে না।এভাবে বছর পার হয় কিন্তু পড়ায় কিছুতে আনা যায় না।কারো সাথে কথা বলে না।কারো সাথে মেশে না।এখন স্কুলে দিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।বিভিন্নজন বিভিন্ন প্রশ্ন করলে নিজেকে বড় বেশী অপরাধী মনে হয়।সবাই ছেলে মেয়েকে নিয়ে হাসি খুশীতে থাকলেও নিজে তা পারছেন না।এছাড়াও সামাজিক কুসুংস্কারের ফলে সন্তানের পিতা-মাতা হীনমন্যতায় ভোগে সন্তানকে কারো সামনে নিয়ে যেতে সংকোচবোধ করে।অনেকেই অটিজম আক্রান্ত শিশুকে কারো সাথে মিশতে দেয় না,খেলাধুলা করতে দেয় না।ফলে যে সমস্যা দশটা ছেলে-মেয়ের সাথে মিশলে খেলাধুলা করলে ভালো হতে পারতো তা আর হয়ে ওঠে না।এক সময় বয়স বাড়ে দৈনন্দিন জীবন যাপনের কিছু জানার এবং শেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ স্কুলেও ভত্তি’ করা সম্ভব হয় না।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য সরকার চাকুরী, রাস্তায় চলাচলের বিভিন্ন সুবিধা ছাড়াও সামান্য কিছু আথি’ক সাহায্যের ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানা যায়।সরকারী পৃষ্টপোশকতায় বেসরকারী ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।কিন্তু মান সম্পন্ন সেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা সকল পিতা-মাতার জন্য একেবারেই অসম্ভব তাতে কোনো সন্দেহ নাই।প্রয়োজনেই দু’চারটা প্রতিষ্ঠান দেখার এবং মোবাইলে খোজ নিতে গিয়ে দেখেছি মাঝারি মান সম্পন্ন একটা স্কুলে প্রথমেই ভত্তি’ করাতে বাইশ থেকে পচিশ হাজার টাকা,মাসিক বেতন আট হাজার থেকে তেরো-চৌদ্দ হাজার টাকা এবং থেরাপি (যদি প্রয়োজন হয়) প্রতি থেরাপিতে প্রতিদিন আটশত টাকা অথ্যা’ৎ একটা সন্তানের পেছনে ভত্তি’ ফি ছাড়া মাসে গড়ে ২০ দিন ক্লাশ ধরলে বেতন ৮০০০+ ১৬০০০ (একটা থেরাপি ৮০০/প্রতিদিন)=২৪,০০০.০০ টাকা প্রয়োজন।শুনেছি একলাখ টাকা ভত্তি’ এবং চল্লিশ হাজার টাকা মাসিক বেতনেরও স্কুল এই ঢাকা শহরে আছে।এতো টাকা দিয়ে ক’জন মা-বাবা তার সন্তানকে পড়াতে পারবেন?
কম সাভি’স চাজে’র এর প্রতিষ্ঠান যে নাই তা নয় কিন্তু একজন শারিরীক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে মানসিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অথবা কথা বলা ও শোনার সমস্যা,কিংবা অমনো্যোগী, কিংবা খুব বেশী চঞ্চল শিশুদের শিক্ষক সল্পতার কারণে এক সাথে একই টেবিলে পড়ানো হয়।এটা সঠিক বলে মনে হয় না।শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং শারিরিক জড়তা কাটানোর জন্য খেলাধুলা করার প্রয়োজন কিন্তু তার জন্য কোনো জায়গা নাই।একটা ছোট ফ্লাট ভাড়া নিয়ে এমনি চলছে শিক্ষা কায’ক্রম।আমাদেরই একটা শিশুকে বাসার কাছে উন্নত মানের একটা স্কুলে ভতি’ করতে দুবছর অপেক্ষা করেছি যদি কতৃপক্ষ সাভি’স চাজ’ কমায় কিন্তু হয় নাই।ভত্তি’ ফি ষাট হাজার সেশন ফি চল্লিশ হাজার এবং মাসিক বেতন পচিশ থেকে কমিয়ে তেইশ হাজার টাকা দিতে ব্যথ’ হয়ে অবশেষে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন অনুমোদিত দুইরুমের একটা ফ্লাটবাসার স্কুলে ভত্তি’ ফি পাচ হাজার এবং মাসিক বেতন এক হাজার টাকায় ভত্তি’ করাতে হয়েছে।
আলাপে জেনেছি এই সকল শিশুদের সঠিকভাবে পরিচযা’ পরিসেবা দিতে হলে অনেক ক্ষেত্রে শিশু প্রতি একজন শিক্ষক প্রয়োজন।দেশে পযা’প্ত দক্ষ শিক্ষকের অভাব আছে।দক্ষ শিক্ষকের বেতন ত্রিশ-চল্লিশ হাজারের বেশী দিতে হয়।তাই শিক্ষকদের বেতন স্কুলের ঘড় ভাড়া বেশ ব্যয় সাপেক্ষ যার ব্যয় মেটানোর জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন।তাই বাধ্য হয়েই শিশুদের অভিভাবকদের উপর চাপ বাড়াতে হয়।আমরা দেশকে উন্নত দেশের সংগে তুলনা করি বাস্তবে তার কিছুই দেখি না ।শুধু দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন যথেষ্ঠ নয়।শুনেছি আমার এক বন্ধুর ভাগিনা এমনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, বিদেশে থাকে।তাকে একটা প্রতিষ্ঠানে ভত্তি’ করা হয়েছে ভাগিনার সবকিছু প্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্বে অভিভাবককে তার জন্য কোনো কিছুই ভাবতে হয় না।আমাদের দেশে এমনি সবার জন্য শিক্ষা এবং পুন’বাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।আমরা যদি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের লক্ষণ ভেদে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং শিক্ষার ব্যয়ভার অভিভাবকদের সামথে’র মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে পারি তবে অনেক শিশুই সুস্থ্য হয়ে পরিবার সমাজ ও দেশের অগ্রগতিতে ভুমিকা রাখতে পারবে।তা না হলে প্রয়োজনীয় সেবা এবং শিক্ষার অভাবে একসময় এরাই পরিবার সমাজ ও দেশের বোঝায় পরিণত হবে।
সরকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন থানায়/জেলায় যে সকল স্কুল পরিচালনা করছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার মান সম্পন্ন নয় বলে মনে হয়।সরকার সেগুলিকে আলাদা ভাবে না রেখে প্রতিটি ওয়াডে’ একটা অল্প পরিসরের হলেও খেলাধুলার স্থান সম্বলিত উচ্চবিদ্যালয় সাথে অঙ্গীভুত করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিচালনা করা যায় কিনা বিবেচনা করতে পারে।প্রতিবন্ধী শিশুরা যেমন অনেক শিশুদের দেখে নিজেদের বিকাশ ঘটাতে পারবে তেমনি প্রতিবন্ধী শিশুদের হতভাগ্য অবিভাবকগণ বিশাল ব্যয় থেকে মুক্তি পাবেন।প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়ানো যায় কিনা তাও বিবেচনা করা প্রয়োজন ।শুধু সরকার নয় বিত্তবানদেরও এব্যপারে এগিয়ে আসতে হবে।
অটিজমের প্রকৃত কারণ জানা নাই।তবে বেশিরভাগই ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসকে দায়ী করে থাকে।সন্তানের বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে।বিশেষ করে মাকে অটিজম প্রতিরোধে অনলাইনে অনেক সচেতনামূলক নিবন্ধ/অডিও ভিডিও আছে তা অনুসরণ করা খুব বেশি প্রয়োজন।শিশু গভ’ধারণ থেকে শুরু করে জন্ম হওয়া পয্য’ন্ত অনলাইনে কোনো ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস একেবারেই শরীরে কাছে রেখে বাচ্চাকে নিয়ে বসে থাকা উচিৎ নয়।কারণ গভে’ থাকা অবস্থায় শিশু রেডিয়েশন আক্রান্ত হতে পারে।জন্মের পর শিশুকে কোলে নিয়ে অনলাইনে ভিডিও করা,কথা বলা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাকে পাশে নিয়ে মা-বাবা দুজনে অনলাইনে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত যা শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে।শিশুকে ভিডিও কলে দেখতে না পারলে আপনজনরা মনোক্ষুন্ন হতে পারে তা ক্ষণিকের জন্য কিন্ত এই ভিডিও কলে শিশুর কোনো ক্ষতি হলে বাবা-মাকে সারা জীবন অশান্তির আগুনে জ্বলতে হতে পারে।মোবাইল এখন খাবারের চাইতেও অতি প্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে।শিশুদের সামনে মোবাইলের ব্যবহার সংক্ষিপ্ত করে শিশুর সাথে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতে হবে।অপরিণত শিশুকে ইলেট্রনিক্স ডিভাইস বিশেষ করে মোবাইল-টেলিভিশন থেকে দূরে রাখতে হবে।আজকাল অতি অল্প বয়সের কিশোর-কিশোরীদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের কারণে চশমা ব্যবহার বেড়েছে।অভিজ্ঞজনেরা অতি দীঘ’ সময় মোবাইল,ট্যাব টিভি স্ক্রিনে সময় কাটানোকে শিশু-কিশোরদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের একটি কারণ হিসাবে দেখছেন।
শিশু বড় হলে শিশুদের সাথে খেলাধুলা বিভিন্ন গল্প শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে সময় কাটাতে হবে।শিশুদের শুধু ঘড়ে ড্রয়ং রুমে ফামে’র মুরগীর মতো হৃষ্ট-পুষ্ট বানালে হবে না তার মানসিক বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।শহরে পযা’প্ত খেলার মাঠ নাই সত্য বাবা-মাকে অবসরে সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় হাটতে নামতে হবে , সামাজিক অনুষ্ঠানে সন্তানের হাতটি ধরে হাজির হতে হবে,দশ রকমের দশটা ছেলে-মেয়ের সাথে মিশতে দিতে হবে।পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে,একজনের সাথে আরেকজন হাতাহাতি করবে এভাবেই শিশুদের মানষিক বিকাশের চেস্টা করতে হবে।আসুন সবাই সংশোধন হই সাবধান হই, আমরা কেহ যেন এসব শিশুকে ভিন্ন দৃষ্টিতে না দেখি তাদের প্রতি আন্তরিক হই ,তাদের সুস্থ্যতার জন্য সহযোগীতার হাত প্রসারিত করি।সবাই মিলে চেষ্টা করি হতভাগ্য কোন বাবা-মাকে আর যেন বলতে না হয় “আমি মনে প্রানে চাই,আমার অটিষ্টিক মেয়েটা খুব শীঘ্রই মরে যাক আর সহ্য করতে পারি না”।https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA