কত সন মনে নাই। ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম বেড়াতে। সশস্ত্র বাহিনীর সমরাস্ত্র প্রদর্শনী চলছিল প্যারেড গ্রাউন্ডে। দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম। বাসার কাছেই হেটেই যাওয়া যায়। বদ-অভ্যাসের কারণে রিকশা নিলাম। প্রদর্শনী ঘুরে সময় পার হচ্ছিল না, বেড়িয়ে এলাম। আবার রিকশা নিলাম চন্দ্রিমা উদ্দ্যনে যাবো। রিকশা ড্রাইভার আমারই বয়সের হবে। বুদ্ধিমান তাতে কোনো সন্দেহ নাই।বেখেয়ালি আচার আচরণ বা অন্য যে কোনো ভাবে হওক বুঝে নিয়েছে নতুন আমদানি। তাই কিছু প্রশ্ন কিছু উত্তর ।
ড্রাইভার : একা ওই হানে কি করবেন সাব?
আমি : এই একটু সময় কাটানোর জন্য বেড়াবো। কিন্তু তোমার এ প্রশ্ন কেনো।
ড্রাইভার : অনেক দিন এই এলাকায় রিশকা চালাই কাউরে খুব একটা একা যাইবার দেখি
নাইকা তাই জিগাইলাম।
আমি : কেনো কোনো সমস্যা আছে?
ড্রাইভার : নাহ সাব, কিছু নাইকা তয় কথাটা হইলো গিয়া আপনার ভালা লাগবো না।
আমি : কেনো?
ড্রাইভার : কইবার চাই না ভালা লাগে না।জিগাইছেন যহন তয় কিনা কইয়া হালাই।আমাগো জিয়া স্যার ওই হানে হুইয়া আছেন।জোড়ায় জোড়ায় সব চারিদিকে যে যেখানে বইয়া হুইয়া যে যেমনটা পারে কেউ হাতের কাম,কেউ মুখের কাম চালায়।এসব দেইখা তো সাব ভালা লাগবার পারে না।
একটু অপ্রস্তুত এবং লজ্জা পেলাম। রিকশা পৌছে গেছে ভাড়া দিয়ে গণভবন আর রোকেয়া স্মরণীর সংযোগ বত'মান বিজয় স্মরণী মোড়ে নেমে পড়েছিলাম।ভাড়া দিতে দিতেই নতুন যাত্রী নিয়ে চলে যাবার সময় ড্রাইভার আমার দিকে তাকিয়ে এক চিলতে হাসি দিয়ে রওয়ানা দিলো।উদ্দ্যানে ঢুকতে মন চাইছিল না।মোড় থেকে একটু সামনে দাঁড়িয়ে সংসদ ভবনের দিকে তাকিয়ে তার হাসির অথ'খোজার চেষ্টা করেছি,পারিনি। সেদিনই বুঝেছিলাম শ্রদ্ধা-ভক্তি ভালোবাসা দিয়ে স্মরণীয় করে কাউকে কারো হৃদয়ে স্থান দেওয়া সে বড়ই দুরহ কাজ।বার বার মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছিল কিশোর কুমারের সেই গান" যদি কাগজে লিখো নাম কাগজ ছিড়ে যাবে,পাথরে লিখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লিখো নাম সে নাম রয়ে যাবে।"
সেই দিন, তারপর মাস বছর পেড়িয়ে যুগও পেড়িয়ে গেছে সেই কবে কিন্তু বাড়ির কাছে আরশীনগর চন্দ্রীমা উদ্দ্যান আর ঘুরে দেখা হয় নাই। দেখা হয় নাই সত্যি সেখানে কেউ কখনো হাতের কাম মুখের কাম করতো কিনা কিংবা এখনো তা বহাল আছে কিনা।