Wednesday, October 9, 2024

পূব’পরিকল্পিত গণহত্যা চলছে গাজায়

গাজায় ইজরাইলীদের বব্ব’রতম অভিযানের একবছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বরাতে জানা যায় ১০ অক্টোবর,২৪ পয্যন্ত ৪২ হাজারের অধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৯৮ হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়েছে যার অধিকাংশ নারী ও শিশু। মসজিদ,চাচ’,গীজা’,শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বড় বড় হাসপাতাল সহ সকল স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, আবাসিক এলাকার ৮০শতাংশ অবকাঠামো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।বিদ্যুত পানি সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।রাস্তা বুলডোজার দিয়ে চলাচলের অযোগ্য করা হয়েছে।যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছে।লক্ষ লক্ষ বাস্ত্চ্যুত গাজাবাসীকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।কোথাও মাথা গোজার ঠাই নাই তবুও চলছে নিষ্ঠুর বিমান হামলা। অসহায় মানুষ বাচতে এখান থেকে ওখানে ছুটছে মরছে অকাতরে।ইতিহাসের হিটলার কতৃক ইহুদী নিধনের কুখ্যাত হলোকাষ্ট বব্ব’রতা আজ সেই কুখ্যাত হলোকাষ্ট থেকে বেচে এসে প্যালেষ্টাইনে আশ্রয় নেয়া ইহুদীদের অমানবিক নিব্বি’চার ফিলিস্তীনি নিধন যেন সেই নাৎসি বব্ব’তাকে ম্লান করে দিয়েছে।মানবতার ধারক-ইউরোপ-আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতায় ঘটছে এই নারকীয় বব্ব’রতা।

আফসোস প্রতিবেশী আরব নেতারা যেন দেখেও কিছুই দেখছে না, আরবলীগ ওআইসি  মাঝে মাঝে বিবৃতির ঝাকি খুলে আবার একেবারে নীরব।তথাকথিত সভ্য বিশ্বের নেতা, গণতন্ত্রের রক্ষক,বাক-স্বাধীনতার রক্ষক মানবতার রক্ষকগণ শুধু হাইলাইট করছে ৭ই অক্টোবর ২০২৩- হামাসের  ইজরাইলে হামলা।কিন্তু তারা কখনো মূল কারণ বিবেচনা করে নাই। তারা নিপীড়িত নিযা’তিত ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসবাদী বলছে।কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আগ্রাসী হানাদার ইসরায়েলিরা ফিলিস্তীনিদের যেভাবে হত্যা করে যাচ্ছে যাদের বেশির ভাগই শিশু এবং নারী,ফিলিস্তীনিদের বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে তা দখল করছে তা আমলে আনা হয় না।এভাবেই ফিলিস্তীনি ভুমিকে সংকুচিত করা হয়েছে।দীঘ’ ৭৫ বছরে নিপীড়ন-নিযা’তন সহ্য করে,রক্ত দিয়ে,জীবন দিয়ে ভুমি দিয়ে তারা  যে শিক্ষা নিয়েছে হানাদার দানব ইজরাইলীদের কাছ থেকে সেই একই কায়দায় পুঞ্জীভুত ক্ষোভের প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছিল ৭ই অক্টোবরে।

ফিলিস্তীনিদের নিয়ে অনলাইনে একটা নিবন্ধ পড়েছিলাম সম্ভতঃ ২০১৭ সালে।কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল তা মনে নেই।হোয়াইট হাউসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাসের মধ্যে আলোচনা হয়।আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট আব্বাস দেশে ফিরে  সাংবাদিকদের বলেছিলেন সেই আলোচনায়  ট্রাম্প তাকে বলেছেন প্যালেস্টাইনে শান্তির জন্য ফিলিস্তিনিদের বড় ত্যাগের প্রয়োজন হবে তবে বিস্তারিতভাবে তিনি আর কিছুই বলেন নাই। একইভাবে ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করে মিশরের কায়রোয় ফিরে এসে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, খুব শীঘ্রই  মধ্যেপ্রাচ্যে একটা বড়পরিবর্তন আসছে কিন্তু তিনিও বিস্তারিত কিছুই বলেন নাই।সারা বিশ্ববাসী দেখছে ১০ অক্টোবর ২০২৩ এর হামাসের ইজরাইলের অভ্যন্তরে হামলার প্রতিশোধ নিতে যে দানবীয় ধংসযজ্ঞ শুরু করেছিল তা আজও চলমান।তবে এই কি সেই ফিলিস্তীনিদের বড় ত্যাগ?

১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪শে মিডল ইস্ট মনিটর বলেছে যে ইসরায়েলি প্রশাসন ফিলিস্তিনীদের সমুদ্র সীমায় প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ইসরায়েলী এবং আন্তর্জাতিক ছয়টি সংস্থাকে লাইসেন্স দিয়েছে।ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ মার্চ-১৯,২০২৪শে প্রকাশ করেন " মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা এবং প্রধান পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার, গাজার সমুদ্র সীমাকে "খুব মূল্যবান"বলে বর্ণনা করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন যে ইসরায়েলকে গাজা থেকে ফিলিস্তিনি  নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া উচিত এবং অঞ্চলটি " পরিষ্কার করা প্রয়োজন"সেই ট্রাম্প আবার সম্ভবতঃ ২০২৫ নিবা’চনে ক্ষমতায় আসার অপেক্ষায়।

ইজরাইল কেবল সকল অবকাঠামো মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত নয়। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে খাদ্যসহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ বন্ধ করেছে।  বিমান থেকে খাদ্য সামগ্রী ফেলা হলে সেই খাবার সংগ্রহের সময় বব্ব’র ইসরায়েলি বাহিনী ক্ষুদাত’ বেসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে।গুলিতে আহত মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে বাধা দেয়া হয়েছে।গুলি করে ফিলিস্তিনিদের রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে যতক্ষণ না রক্ত ঝরে কষ্ট নিয়ে মারা গেছে।গোলা ছুড়ে এম্বুলেন্স ধংস করা হয়েছে। জাতিসংঘের কমী’ ডাক্তার নাস’ সাংবাদিক কারো জীবনের নিরাপত্তার জায়গা নেই এখন আর গাজায়।ইজরাইলীদের নিম’মতা আর বব্ব’তার নতুন সংযোজন তাবুতে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তীনিদের মেরে পুড়িয়ে ফেলা।আহত অনেককে জীবিত গণকবর দিয়েছে।মানবতার সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে গাজাকে তারা আজ বিশ্বের বৃহৎতর কবরস্থান বানিয়ে ফেলেছে।আজ এটা দিবালোকে মতো সত্য পূর্ব পরিকল্পিত গণহত্যা চলছে গাজায়  

শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী দেখেছে ইজরাইল বার বার শান্তি আলোচনায় বসে সময় নিয়েছে আর গাজায় তার বাধাহীন গণহত্যা চালিয়ে গেছে। ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর দেশের অভ্যন্তরে  রাজনৈতিক অবস্থান ভালো নয়। তিনি পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করে, যে কোনো মূল্যে হামাসকে ধ্বংস করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যে কোনো ভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য ৭ই অক্টোবর দেশের হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে চায়। শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে দেখেছি  বিশ্ববাসীকে শুধু ধোকা দেওয়ার জন্য।তারা এভাবেই  তাদের বাহিনীকে সংঘটিত করে সামরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য সময় নিয়েছে।নিরাপত্তা পরিষদ  যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করেও তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।জাতিসংঘকে অকায’কর প্রতিষ্ঠানে পরিণত কড়া হয়েছে।

আরব লীগের নেতৃবৃন্দ, ইসলামী দেশগুলোর সংগঠনের নেতারাও ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধে যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।সবাই দাপ্তরিক কাজ  আর  আলোচনা পর বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব সমাধা করেছে।আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রী ব্লিংকিনের অতি ঘন ঘন মধ্যপ্রাচ্য সফর প্রকৃত যুদ্ধ বন্ধের জন্য ছিল না, ছিল গাজার গণহত্যায় আরব রাষ্ট্র নেতাদের নিরপেক্ষ রাখতে।সে তা পেরেছে।সব আরব রাষ্ট্র নায়ক আর বাদশা আজ আমেরিকা আর পশ্চীমাদেশ গুলির কাছে মাথা হেট করে আছে যাতে তাদের ক্ষমতা হাত ছাড়া না হয় স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থেকে যাতে সুখ ভোগ করা যায়।তাদের  আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) ভূমিকাও ব্যতিক্রম দেখি না।তারাও গণহত্যার দায়ে ইজরাইলের বিরুদ্ধে কিছু করতে, গাজায় অসহায় মানুষকে রক্ষা করে মানবতাকে রক্ষা করতে শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসীকে আশ্বস্থ করার মতো কোন কাজ করে নাই।

যুদ্ধ আজ বিস্তৃত হয়েছে লেবাননে।হিজবুল্লাহকে ধংস করতে লেবাননকে গাজা বানানোর ঘোষণা দিয়েছে নেতানাইহু।হিজবুল্লাহ নেতা নসুরুল্লাহ সহ বেশ ক’জন শীষ’ স্থানীয় কমান্ডারকে হত্যার মাধ্যমে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইজরাইল।স্থল অভিযানে সফল হতে না পারলেও বিমান হামলায় ধংসস্থুপে পরিণত করছে বৈ্রুত এবং আশে পাশের এলাকা।ইরানের সাথে হামলা ও প্রতি হামলার ঘটনা ঘটায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য।ইজরাইলীদের হামলা থেকে ফিলিস্তীনিদের রক্ষা করতে না পারলেও ইজরাইলের ভেতর ইরানের হামলার সময় জডা’ন তার আকাশ সীমায় ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র ধংস করে ইজরাইলকে রক্ষা করছে।জডা’ন সহ প্রায় সকল আরব রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে রয়েছে আমেরিকান ঘাঁটি।সুতরাং কোনো রাষ্ট্রনেতার পক্ষে সম্ভব নয় ইজরাইলের বিরুদ্ধে যাওয়া।ইরান হুমকী দিয়েছে ইরানের ভেতর আক্রমণে ইজরাইলকে সহযোগীতা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

আমেরিকা ও জাতিসংঘের বিশেষ সুবিধা পেয়ে ইসরাইল আজ একটা দানবে পরিণত হয়েছে ইজরাইলের প্রধান মন্ত্রী এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেও মানতে চায় না।মনে হয় ছাত্র তার শিক্ষকের চেয়ে বেশি স্মার্ট  এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছেতারা এখন জাতিসংঘের মহাসচিবকেও ভিসা না দেওয়ার হিম্মত দেখাতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  ইসরাইলের পক্ষে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহারের কারণে জাতিসংঘের এখন ফিলিস্তিনিদের ব্যপারে বিশ্ববাসীকে মৌখিক পরিষেবা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই বিশ্বের সভ্য দেশের নেতারা ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করছেআক্রমণকারী আগ্রাসী রাশিয়াকে থামাতে ইউক্রেনকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করে যাচ্ছে

ইরানকে পরমাণু প্রকল্প হাতে নেওয়ায় অবরোধ আর বিধিনিষেধ দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।কিন্তু আগ্রাসী দখলদার বব্ব’র ইজরাইলকে পরমানু অস্ত্রের অধিকারী হওয়া সত্বেও থামাতে চাইছে না, বরং ফিলিস্তিনিদের ওপর সব ধরনের অমানবিক বর্বরতম কর্মকাণ্ড চালিয়ে তাদের ভূমি দখল অব্যাহত রাখতে অস্ত্র-গোলাবারুদ সহ সকল সাহায্য সহযোগীতা দিয়ে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে তাই শান্তিকামী মানুষের প্রশ্ন গাজায় সকল অবকাঠামো ধংস করে মাটির সাথে  মিশিয়ে দেয়া হয়েছে আশি শতাংশ মানুষ গৃহহীন খাদ্য চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষ অনাহারে আতংকে নিদ্রাহীন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।এতো অমানবিকতা,মানুষের প্রতি মানুষের এতো নিষ্ঠুরতা দেখার পর মানবতাবাদী মার্কিন-ইউরোপীয়ান নেতাদের দানব ইজরাইলকে গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধ করাতে বাধ্য করতে কবে বিবেক জাগ্রত হবে ?নাকি এই দানবকে দিয়েই মধ্য প্রাচ্যকে আমেরিকা ও পশ্চীমারা নরককুন্ড বানাবে?

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA