Monday, December 2, 2024

সময় এখন বিবেক দিয়ে কাজ করবার আবেগ দিয়ে নয়

ইনটেরিম সরকারের ১০০ দিন  পার হলো। ফিরে যেতে হয় জুলাই-২৪ বিপ্লবে।রাজনৈতিক নেতা কিছু উচ্ছিষ্টভোগী সুবিধাভোগী তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের উচকানী, অতি উৎসাহী প্রজাতন্তের কম’কতা’দের জিঘাংসায়,নিভে'জাল ছাত্রদের অরাজনৈতিক  আন্দোলনে  আইন শৃংখলা বাহিনী, আওয়ামীলীগ, ছাত্র লীগ, যুবলীগের  চতু’মুখী পৈশাচিক বব্ব'তা , ক্ষোভে -দ্রোহের আগুনে রাস্তায় দল-মত নিবি’শেষে ছাত্র জনতা আবাল বৃদ্ধ বনিতা।দমন পীড়নে আকাশে হেলিকপ্টার নিচে সাজোয়া যান। মহু'মুহু' গুলি টিয়ার শেল  সাউন্ড গ্রেনেড  রক্তাক্ত আহত নিহত   কারো ভাই ,কারো পিতা কারো স্বামী কারো বুকের ধন একমাত্র সন্তান। রক্তে লাল রাস্তার  কালো পিচ, মায়ের আচলের সবুজের মাঠ। নিজ দেশের মানুষের উপর এমন পৈশাচিকতা -বব্ব'তা কোনো দেশ-প্রেমিক মানুষের পক্ষে করা অসম্ভব ? সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে হাসিনা সরকার এবং তার দল আওয়ামীলীগ।এলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র জনতার বিজয়।রাষ্ট্র সংস্কার করে একটা সুষ্ট নিবা’চনের মাধ্যমে নিবা’চিত জনপ্রতিনিধীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষে গঠিত হলো ইনটেরিম সরকার।

আপনজনদের হারানোর চোখের পানি এখনো শুকায় নাই,ভুলতে পারে নাই সন্তানের লাশের কথা, গুলিতে আহতদের রাস্তায় ছটফট করতে, রাস্তায় পড়ে থাকতে  ছাত্র জনতার  মৃতদেহ , গুলি করে মেরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে মৃতদেহ।নিহতদের কবরের মাটি শুকায় নাই আহতদের  ক্ষত শুকাইতে পারে নাই তাদের কষ্টের আহাজারি এখনো থামে নাই।  দলমত নিবি'শেষে এমন মানুষ  ছিল না যারা পৈশাচিক বব্ব'তায় ব্যথিত হয় নাই। নাহ !  বিশাল জনগোষ্ঠী সমথি'ত আওয়ামীলীগের কোনো নেতা-কর্মী এখন পর্যন্ত এই অমানবিক বব্ব'তার জন্য  দু:খ প্রকাশ করে নাই।তাদের কোনো অনুশোচনা নাই। কোনো  ধৈয্য' ও তারা দেখাতে পারছেন না।আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে  বিভিন্ন নামে প্রপাগাণ্ডা চালাতে গিয়ে  মানুষের কাছে এখন কেবলই আফসোস লীগে পরিণত হয়েছে।শোনা যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের মাঝে ঢুকে সরকারের চিকিৎসা দিতে ব্যথ’তার  অজুহাতে আন্দোলন করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।যার নমুনা কিছুটা পরিলক্ষিত হতে দেখা গেছে উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠকে।

আওয়ামী  সরকার  ক্ষমতা হারালে লাখো মানুষ হতাহত হবে তাদের  বড় বড় নেতাদের  উস্কানী ছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই সংঘাত হয় নাই/হইতে পারে নাই।তবে চারিদিকে চলমান ঘটমান নানা রকম কম’কান্ডে মনে হচ্ছে এখন  সেই  চেষ্টা চলছে চারিদিকে অতি আবেগি আওয়ামী নেতা কমী'দের। আওয়ামীলীগের মনোনীত রাষ্ট্রপতি মহোদয়ও  দেশ ও জাতীর রাষ্ট্রপতি হতে পারেন নাই, নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে  পারেন নাই ধৈয্য’ ধরতে। দলের নেত্রী শেখ হাসিনা বলতেন তার আর কিছু চাওয়া পাওয়া নাই দেশের মানুষকে  সুখী দেখতে পাওয়াই তার একমাত্র চাওয়া। অথচ জনরোষে পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত  ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ছাত্র -জনতা হত্যায় উৎসাহ দিয়েছেন ।আজ পালিয়ে গিয়ে ভারতের আশ্রয়ে থেকে টুস করে ঢুকে যাওয়ার বাসনায় দলের পাতি নেতাদের দেশের ভেতর অস্থিতিশীল করতে টেলিফোনে নানা রকম উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।বন্ধ নাই ভারতীয় মিডিয়ার বানোয়াট সংখ্যালঘু নিযা’তন ও বাংলাদেশের ভূখন্ড দখলের আগ্রাসী প্রপাগান্ডা।কারণ তারা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনকে মেনে নিতে পারেন নাই।

“পক্ষে থাকলে সঙ্গী না থাকলে জঙ্গী” এই মতবাদে  দীঘ’দিনের মামলা-হামলা,গুম-খুন নিপীড়ণ নিযা’তনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ, অরাজনৈতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর পৈশাচিক বব্ব’তা,শত শত হত্যা, রক্তাক্ত আহত হাজার হাজার।অতি-উৎসাহী স্বৈরাচারের দোসর প্রজাতন্ত্রের কম’কতা’দের আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ প্রশাসনের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে  সে অনুযায়ী কিশোর-কিশোরী,ছাত্র-ছাত্রী সাধারণ মানুষ হত্যাকারী হাসিনা সরকারের কমী’বাহিনী,তাদের নিদ্দে’শ ও মদদদাতা মন্ত্রী-নেতা অতি উৎসাহী প্রজাতন্ত্রের কম’কতা’দের তেমন কোনো ক্ষতি ই হয় নাই।সবাই চলে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে। প্রশাসনিক শূন্যতায় কিছু লুটেরা, পরাজিত তবে একেবারেই অক্ষত স্বৈরাচারী শক্তি ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের  যোগসাজশে  ছাত্র-জনতার বিজয়কে নস্যাৎ করতে চাইছে ।চাইছে "আগেই ভালো ছিলাম "এই কথা প্রতিষ্ঠিত করতে ।আজ ভাবতে হবে যারা কমী'দের কথা ভাবেন নাই, যারা কোটি কোটি সমথ'কদের কথা ভাবেন নাই, দেশের অথ' সম্পদ লুটে পরিবার পরিজনদের নিয়ে  পালিয়ে যেতে পারেন তাদের জন্য কেন অস্থিতিশীল করতে হবে দেশটাকে? তাদের ভাবতে হবে গত পনের বছর  কেবলই নেত্রী এবং তার পরিবারের তুষ্টীর জন্য  লীগের নেতা কমী'রা বিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর জুলুম -নিযা'তন  করেছেন। যদি ভাবতেন আমার বিপদে আমারই প্রতিবেশী আমারই পাশে থাকবেন আজ তাহলে কাউকে পালিয়ে বেড়াতে হতো না।

অহংকার, মানুষের উপর  জুলুম,নিযা'তন পতন অনিবার্য আবার তা আমরা দেখতে পেলাম হাসিনা এবং তার দলের পতনের মাধ্যমে।দোদ'ন্ড ক্ষমতাশালী, দাম্ভিক জুলুমবাজ  শেখ হাসিনার এমন অপমান এবং লজ্জাজনক বিদায়ে জানিনা আমাদের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এখন  যারা বীরদপে' রাস্তা  দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা  শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছেন কিনা। লোভ লালসা ত্যাগ করে সত্যিকার ভাবে দেশ ও জনগণের প্রকৃত সেবক হয়ে জনগণের জন্য কিছু যদি করতে  চান আজ তাদেরও ভাবতে হবে ব্যক্তি নয়, দল নয়  দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে । বিভিন্ন দলের কমী’বাহিনী এলাকার পাতি নেতাদেরও শিক্ষা নিতে হবে,নেতাদের নিদ্দে’শে প্রতিবেশী, বিরোধীপক্ষের  উপর অত্যাচার নিপীড়ন করা যাবে না। অসময়ে বড় বড় নেতা নিজেদের বাচাতে কারো দিকে ফিরে তাকায় না। প্রজাতন্ত্রের  কম’কতা’-কম’চারীগণ চাকুরী মেয়াদ পয্য’ন্ত আপনারা নিজ নিজ জায়গায় থাকবেন ,যদি না কোন অনৈতিক কায’কলাপে ধরা পড়েন।রাজনৈতিক নেতারা মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন যাবেন আরেকজন আসবে্ন তেলবাজী না করে সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সততার সাথে  জনগণের  খাদেম হতে  চেষ্টা করতে হবে।

দেশকে ভালোবাসলে দেশের মানুষকে ভালোবাসলে আওয়ামী লীগের  উচিৎ দেশকে অস্থিতিশীল না করে ধৈয্য’ ধরে  দলকে নতুন করে সাজাতে। দেশ-প্রেমিক তৃণমূল  মানুষ থেকে  নেতা তৈরি করে  আগামী দিনের অপেক্ষায় কিছু দিন চুপ থাকতে ।আকাশে এখন শুকুনের কালো ছায়া, চাইছে দেশটাকে খুবলে খেতে।ভাবতে হবে দেশ বাচলে তবেই না রাজনীতি? ৭৫ এর পর সব চাইতে খারাপ অবস্থা থেকে জোহরা তাজুদ্দিন আর সাজেদা চৌধুরীরা দলকে  জিরো  থেকে হিরো বানিয়েছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগের সুদিনে তাদের মুল্যায়ন করা হয় নাই। বিএনপি জামাতকে শেষ করে দেয়ার জন্য  সব কিছুই করা হয়েছিল। বিএনপি নেত্রীকে সাজানো বিচারে জেল দেয়া হয়েছিল। সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মেরে ফেলার চেষ্টা  করা হয়েছিল। সাজানো বিচারে ফাসীতে হত্যা করা হয়েছে জামাতের শীর্ষ নেতাদের। কোনো দলই কিন্তু  শেষ হয় নাই। 

আজকে মানতেই হবে এ বিজয় ছাত্র জনতার, এ বিজয় নতুন প্রজন্মের, এ বিজয় দীর্ঘদিনের নিপীড়িত নিগৃহীত দলমত,ধম'বণ' নিবি'শেষে সাধারণ মানুষের।কারণ বিগত দেড় দশকে রাজনৈতিক নেতারা আন্দোলন করে, দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী সাধারণ মানুষকে  মামলা-হামলা, জেল-জুলুম নিযা'তন নিপীড়ণে নিপতিত করে ঘরছাড়া পরিবার ছাড়া করেও কোনো পরিবর্তন আনতে পারেন নাই।কিন্তু আমাদের সন্তান তুল্য ছেলে-মেয়েরা মাত্র ক'দিনের আন্দোলনে ভেদাভেদ ভুলে সংখ্যা গরিষ্ঠ  দেশের মানুষকে ইস্পাত কঠীন ঐক্যের মাধ্যমে একই পতাকাতলে এনে গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন।ইচ্ছে করলেই  সমন্বয়কারীরা বিক্রি হয়ে যেতে পারতেন আমাদের অনেক অনেক নামী-দামী বড় বড় নেতা-নেত্রীদের মতো ।কিন্তু অনেক অত্যাচার সহ্য করেও তারা বিক্রি হয় নাই।

সব চাইতে বড় কথা শেখ হাসিনা নিয়মতান্ত্রিক উপায় পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে  শত শত ছাত্র-ছাত্রী সাধারণ মানুষ হত্যা, হাজার হাজার মানুষ রক্তাক্ত আহত করে, মানুষের মাঝে ক্ষোভের আগুন জালিয়ে কোটি কোটি নেতা-কমী’দের দিকে না তাকিয়ে নিজে চোরের মতো পালিয়ে যাওয়ায় প্রশাসনে অনেক সমস্যা তৈরী  হয়েছে । এসব সামলাতে ইনটেরিম সরকারের সময় প্রয়োজন। কিন্তু শেখ হাসিনা যদি শান্তিপুন্য’ পরিবেশে পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করতেন দেশের এতো বড় সব’নাশ হতো না।চারিদিক দিয়ে সবাই দাবী তুলে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে এই সংকটময় অবস্থায় আরও সমস্যা বাড়ানো বাড়ানো হচ্ছে যা কাম্য নয়।  রাজনৈতিক নেতাদের বলি  চারিদিকে অনেক কথাই আসছে কান পেতে শুনুন, মানুষের চোখ ও মুখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন।আহত-নিহত অসহয়ায়  পরিবারের খোজ খবর নিন। ১০০দিন  পার হয়ে গেছে এখন আর অতি আবেগ আপ্লুত হওয়ার,অতি উল্লসিত হওয়ার সময় নাই।

রাজনৈতিক নেতাদের আছে  অনেক ব্যথ'তা, আছে দেশ ও জাতির সাথে বেঈমানী করার চেষ্টা।৫৩ বছরের সেই রাজনৈতিক জঞ্জাল মুক্ত করে রাষ্ট্র সংস্কার খুব সহজ কাজ নয়।বিশেষ করে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে পনের বছরের স্বৈরাচারী সরকারের আজ্ঞাবহ দলদাস রেখে  ইনটেরিম সরকারের পক্ষে লক্ষে পৌছানো প্রায় অসম্ভব কাজ,যদি না রাজনৈ্তিক দলের নেতারা সহযোগীতা করেন। ইনটেরিম সরকারের সবকিছু সংস্কার করাও কাজ নয় এবং তা সম্ভবও নয়।বিগত ১০০ দিনের একটা বিরাট সময় বিভিন্ন গোষ্টীর দাবী দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যয় করতে হয়েছে এবং হচ্ছে এ ব্যপারে কোনো ভাবেই ইনটেরিম সরকারের নজর দেওয়া ঠিক হয় নাই। প্রয়োজন ছিল দ্রুত নিবা’চন দিয়ে নিবা’চিত জনপ্রতিনিধীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবেশ তৈরী করা।অগ্রাধিকারভিত্তিতে আভ্যন্তরীন শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অথ’নৈতিক ক্ষেত্রে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা।পুলিশ প্রশাসন চালু করা, আনসার বিদ্রোহ সামাল দেওয়া, একটা গোষ্টীর সাম্প্রদায়ীক দাংগা বাধানোর চেষ্টা সামাল দেওয়ার সফলতা আছে কিন্তু শিল্প এলাকা এখনো ঠিক করা যায় নাই।প্রয়োজন ছিল জুলাই বিপ্লবের হত্যাকান্ড সহ সকল গুম খুনের অতিদ্রুততম বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।প্রয়োজন ছিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তালিকা করে নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসাসহ ক্ষতিপূরণ নিষ্পন্ন করা।আহতদের ব্যপারে কোথাও একটা গাফিলতি ছিল যার সুযোগ নিয়ে শোনা যাচ্ছে একটা মহল অরজাকতার পায়তারা শুরু করেছে।দেশি-বিদেশি সুবিধাবাদী-ভোগবাদীদের ষড়যন্ত্রে তৈরী দাবি আর ইস্যুর বন্যায়  ইনটেরিম সরকার আজ যদি  ব্যথ' হয় এই দেশ ও জাতির সামনে থাকবে কেবলই অমানিশার ঘোর অন্ধকার। তখন পুন'বাসন/পরিবর্তন করেও রক্ষা পাওয়া যাবে না। সবাই ভাবুন  সময় এখন  বিবেক দিয়ে কাজ করবার আবেগ দিয়ে নয়।

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA

প্রকাশ : আলোকিত বাংলাদেশ তারিখ : ২০/১১/২০২৪ইং

 

No comments: