Sunday, February 2, 2025

ঢাকা শহরে আমরা কীভাবে বেঁচে আছি

লেখাটা যখন লিখতে বসেছি তখন বিশ্বে অস্বাস্থ্যকর দুষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ২য় স্থানে ঢাকার অবস্থান।ঢাকায় বসবাস একেবারেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে শহরটি  তার  ক্রমবর্ধমান  জনসংখ্যার চাপ  আর সহ্য করতে পারছে না অতিরিক্ত জনসংখ্যা শব্দ দূষণ ,বায়ু দূষণ  সহ মানবিক জীবন যাপনের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ের নানা সমস্যা আছে।সেই সাথে আমরা রাজনৈতিক জনসভা করছি, যে কোন  ইস্যু নিয়ে যখন তখন দাবি আদায়ের জন্য অতি ব্যস্ততম  সড়ক অবরোধ করছি।যানযটে জন জীবন দুবি’সহ করে তুলছি।ফুটপাত দিয়ে হাটার কোনো উপায় নাই হয় তা ময়লা-আবজ’নার ভাগাড় ,না হয় নিমা’নাধীন অট্টালিকার নিমা’ন সামগ্রীর গোডাউন, না হ্য় বেচা বিক্রির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি।সড়ক গুলিতে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের একজন খোড়খুড়ি করে গেলে আর একজন এসে তা মেরামত শেষ করে, তারা যেতে না যেতেই আর একজন এসে আবার খুড়তে শুরু করে।এভাবেই খানাখন্দ থাকছে সব সময়। সুউচ্চ অট্টালিকা তৈরীতে বিল্ডিং কোড কেউ মানতে চাই না, চারিদিকে পযা’প্ত উন্মুক্ত জায়গা না রেখে এমনভাবে তৈরী করা হচ্ছে উপর থেকে কেউ থুথু ফেললেও তা পথচারীদের মাথায় এসে পড়ছে।আল্লাহ না করুক কোনো দূঘ’টনায় অগ্নিনিবা’পন কমী’দের গাড়ি ঢোকার সম্ভাবনা নাই।দেখার যেন কোথাও কেহ নাই।

গত কয়েক মাস ধরে, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই  ঢাকার বাইরে ভ্রমণ  করতে হয়েছে গ্রামে থাকাকালীন আমি যে স্বস্তি অনুভব করেছি তা অনস্বীকার্য ঢাকার  অস্বাস্থ্যকর অস্বস্থিকর  পরিবেশের  চেয়ে  সেখানকার  সতেজ বাতাস এবং শান্ত পরিবেশ অনেক বেশি আরামদায়ক গ্রামের নলকূপের পানির স্বাদ এবং স্বচ্ছতা অসাধারণ, এমনকি বোতলজাত মিনারেল পানির থেকে অনেক ভালোঢাকা থেকে গ্রামে  যাওয়ার পথে লক্ষ করেছি যে কাঁচপুর  সেতু পর্যন্ত বাতাস সম্পুন’ দূষিত, ধুলাবালি এবং দুর্গন্ধে ভরা যতই সামনে এগুতে থাকি স্বস্তি অনুভুত হতে থাকে।মেঘনা সেতু পার হওয়ার সাথে সাথে চারিদিকের আবহাওয়া বেশ  সতেজ  অনুভূত হয়ঢাকা শহরের অস্বাস্থ্যকর বাতাসের যেন সম্পূর্ণ বিপরীত এক উপলব্ধিআসা যাওয়ার সময় বারবার মনে প্রশ্ন জাগে মানব জীবনের জন্য একেবারই অনুপযুক্ত পরিবেশে ঢাকা শহরে আমরা কীভাবে বেঁচে আছি?ক্রমাবনতিশীল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আর কতোদিন আমরা এভাবে বাচতে পারবো? নতুন প্রজন্মের জন্য আমরা কেমন ঢাকা রেখে যাচ্ছি।আমার তো মনে হয় যাদের প্রকৃত ঢাকা শহরে কোন কাজই নাই,বিকল্প ব্যাবস্থা থাকলে তাদের এই শহরের বসবাসকারী কম’জীবি মানুষকে অতি জনসংখ্যার চাপ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে বাচাতে, পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে ঢাকা ত্যাগ করার কথা এখনই ভাবা দরকার।

আল্লাহর রহমত ছাড়া আমরা কেহই এক মুহুত্ত’ও বাচতে পারবো না।তবে ঢাকায় বসবাসকারী আমরা মনে হয় আল্লাহর অতি স্পেশাল রহমতেই বেচে আছিপ্রতি মুহূর্তে আমরা যে খাবার খাচ্ছি তাতে ফরমালিন, কার্বাইড এবং অন্যান্য  বিভিন্ন  ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতি, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি হচ্ছে আমরা নি’দ্ধিধায় খাচ্ছি।আমরা  প্রাণ বাচাতে যে শ্বাস নেই সেই বাতাস   ধুলা-বালি শিশা সহ নানা প্রকার ক্ষতিকারক পদাথে’ পূন’এমনকি আমরা যে পানি পান করছি যা জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, তাও ময়লা, দুর্গন্ধ এবং জীবাণুতে ভরাওয়াসার পানির লাইন এবং পয়োনিস্কাশন লাইন কখনো কখনো মিলে মিশে এমন একাকার হয়ে যায় যে সরবরাহকৃত সেই পানি নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত ফলে ফুটন্ত সেই পানি  পান  করাও প্রায়  অনেক এলাকায় অসম্ভব হয়ে যায় আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি তা দূষিত, আছে সীসা, কার্বন এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থে ভরামেয়াদোত্তীর্ণ বা নকল ওষুধ খাচ্ছি,ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সু-চিকিৎসা পাচ্ছি নাঅস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সরকারী হাসপাতালগুলি নিজেরাই অসুস্থ্য রুগ্ন অতি নিম্নমানের চিকিৎসার সাথে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সুস্থ্য মানুষ ও বোধ করি অসুস্থ্য হয়ে যায় সিটি কপো’রেশন হওয়ায় বাড়তি ট্যাক্স দিচ্ছি কিন্তু প্রাপ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

অনেকবারই দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিকেন্দ্রীকরন করে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর করার চেষ্টা চলেছিল আবার কোনো একসময় তা থেমেও গেছে।যে দেশে এলাকার সংসদগণই নিজ এলাকায় থাকেন না মন্ত্রী আমলাগণ কিভাবে রাজধানী ছেড়ে থাকবেন?রাজধানী ঢাকায় বসবাসকরা গবে’র বিষয় বৈকি?দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার, মেট্রো রেল এবং উড়াল সড়ক এর  মতো মেগা-প্রকল্প গুলি দেখে মুগ্ধ  হই প্রাণ জুড়ায়হটাৎ ঢাকায় এসে মানুষ সেই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করে আপ্লুত হয় মাত্র  কয়েক মিনিটের  বৃষ্টিতে আমাদের সেই চোখ জুড়ানো মন ভুলানো ঢাকা শহরের রাস্তায়  চলাচল করা প্রায়  অসম্ভব  হয়ে যায়রাস্তাঘাট  এতটাই  জলমগ্ন হয়ে  যায়  যে একেবারে নোংরা কালো কুচ-কুচে পানিতে ভরা বুড়িগঙ্গা  নদী এবং শহরের রাস্তা-ঘাটের মধ্যে কোনও পার্থক্য  বোঝার উপায় থাকে  না শহরের অবকাঠামো  আপাতদৃষ্টিতে  চিত্তাকর্ষক  মনে  হলেও  বাস্তবে ঢাকায় বসবাসকারীদের জীবন খুব  সুখকর  কি?

আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে নগরবাসীর কল্যাণে শহরের উন্নয়নের জন্য বিশাল বিশাল পরিকল্পনার কথা শুনিদৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো উন্নতির সাথে সাথে মানুষের সুস্থ্যভাবে বেচে থাকার জন্য সবচেয়ে  গুরুত্বপূর্ণ  প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর  পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ।দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোয় চোখ জুড়ানো মনের মতো যতই সুন্দর শহর  হোক না কেন, যদি তার অধিবাসী  সুস্থ্য না থাকতে পারে  তবে নয়ন জুড়ানো প্রকল্প  মানুষের  জন্য  সুখ  বয়ে আনতে পারে না মাঝে মাঝে বিভিন্ন মিডিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যখন বিভিন্ন রোগ  সম্পর্কে  জাতিকে সতর্ক করেন তখন আমার কেনো জানি একটা  পুরানো নাটকের দৃশ্য চোখে ভাসে যদিও কথা গুলি সঠিক মনে নাই। সেখানে অভিনেত্রীকে  তার সহ-অভিনেতা রাতে ঘড়ের দরজা আটকিয়ে ঘুমাতে পরামশ’ দিলে জবাবে অভিনেত্রী বলেন "ঘড়ের যেখানে কোনও বেড়াই  নাই , সেখানে  দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় কী লাভ ?"

মানুষের বেঁচে থাকার  জন্য  অতিপ্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়ের সাথে প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দুষণমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ।দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুস্থ সবল সু-শিক্ষিত জনবল।শুধুমাত্র দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো উন্নয়ন নয় সুস্থ সবল সু-শিক্ষিত নাগরিকের প্রয়োজনীয় পরিষেবা গুলি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বআসুন আমরাও দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে আমাদের চারিপাশ পরিস্কার রাখি।সরকারের সাথে সাথে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরীতে সামথ্য’ অনুযায়ী নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়ীত্ব পালন করতে এগিয়ে আসি।

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA