৭১ এ নয় মাসে অতিদ্রুত স্বাধীনতা পাইছিলাম। প্রত্যেক ঘরে ঘরে মৃত্যুর হাহাকার ওঠার প্রয়োজন ছিল, হয় নাই। তাই স্বাধীনতার মম' বুঝি নাই।রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও
তাদের প্রতিশ্রুত স্বাধীনতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেন নাই। সেই স্বাধীনতাকে ধরে রাখতেও পারে নাই। ৫৪ বছরে রাজনৈতিক দলের হাত বদল হয়েছে বহুবার। এই পালাবদলে জমেছে কেবলই জঞ্জাল। দেশ ও দেশের মানুষের কোনো পরিবর্তন হয় নাই।ব্যাংগের ছাতার মতো গজিয়েছে রাজনৈতিক দল এবং ব্যঙ্গের পোনার মতো জন্মেছে নেতা-কর্মী।অথ’লোপাটের প্রকল্পের দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে আর উন্নয়ন হয়েছে পারিবারিক এবং গোষ্ঠীগত কিছু মানুষের দেশের অথ'-সম্পদ লুন্ঠন প্রক্রিয়ার।বিগত দেড় দশকে একক দল এবং স্বৈরাচারী একক ব্যক্তির একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকার খায়েশে গুম-খুন, নিপীড়ন -নিযা'তন,জেল-জুলুম, গোষ্ঠী এবং একক পারিবারিক লুন্ঠন থেকে দেশ ও জাতিকে বাচাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন পরিকল্পনার ব্যথ্য'তায় সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছিল বারবার ।
২৪ এ এসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে অনেক মৃত্যু,অনেক রক্ত, অনেক অত্যাচার নিপীড়ন নিযা'তন ভোগের বিনিময়ে কোটা থেকে স্বৈরাচার পতনের এক দফা দাবীতে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে স্বৈরাচার পতনের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের বিজয় এসেছে ।ইনটেরিম সরকার গঠিত হয়েছিল অতি দ্রুত সময় রাষ্ট্র সংস্কারের অতিদুরুহ কম' সমাধা করে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নিবাচনের মাধ্যমে কাংখিত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা ।একেবারেই বেহাল রাষ্ট্র ব্যবস্থার ক্ষমতার চেয়ারে বসতে না বসতে নানা দাবি নানা বাহানা দাড় করানো হয়েছে।ইনটেরিম সরকারের প্রথম দিনই ঘোষণা দেয়া উচিৎ ছিল কোনো দাবি মানার জন্য তারা আসেন নাই তারা কেবল রাষ্ট্র মেরামতের কাজ করতে বসেছেন।তা বলেন নাই বরং কিছু কিছু দাবি মানাতে এখনো চলছে দাবী আর দাবী।এমনকি প্রজাতন্ত্রের ক্যাডার কম’কতা’গণ কায’বিধি লংঘণ করে আন্দোলন করছেন।যদি সরকারি কম’কতা’দের আন্দোলন নতুন নয়।জনতার মঞ্চের নায়কদের আওয়ামী সরকার পুরস্কৃত করে প্রজাতন্ত্রের কম’কতা’-কম’চারীদের শৃংখলা ভঙ্গের রেওয়াজ স্থাপন করে গেছেন এবং সব’সুবিধা ভোগের ব্যবস্থা করে গেছে তা দূর করতে সময় লাগবে বৈকি।
ইনটেরিম সরকারের দ্রুত সময় রাষ্ট্র সংস্কারের অতিদুরুহ কম' সমাধা এবং নিবাচ’ন দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকলেও এখন পয্য’ন্ত দৃশ্যমান কোন সংস্কার নাই।দেশে ঘটে যাওয়া নিম’ম হত্যকান্ড সহ সকল গুম-খুন, লুন্ঠন, জুলুম অত্যাচার -নিপীড়ন -নিযা'তনকারী বড় বড় রাঘব বোয়াল সব দেশ ছাড়া।দৃষ্টান্তমুলক কোনো সাজা হয় নাই।নিত্য প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রীর মূল্য অসহনীয় পর্যায়ে।দেশের ভেতর বাহিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র। দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মন- মানসিকতার সংস্কার বা পরিবত’ন নাই।তাদের রাস্ট্র সংস্কারের চাইতে বেশি প্রয়োজন এখন দ্রুত নিবা’চন।কেউ ৭১ এর সংবিধান বাতিল করে পুরা ইতিহাস ভুলে যেতে চাইছেন কেউ চাইছেন বাতিল নয় প্রয়োজনীয় সংস্কার।কেউ চাইছেন আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করতে কেউ আবার তা চাইছেন না।এভাবেই রাজনৈতিক দলের সাথে ইনটেরিম সরকারের দুরুত্ব বাড়ছে।দল-মত নিব্বি’শেষে যে জাতীয় ঐক্য তৈরী হয়েছিল তা নস্যাৎ হতে বসেছে।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিত’কিত এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে।এসব দেখেই বোধহয় বিএনপি মহাসচিব মিজা’ ফখরুল বলেছেন রাজনৈতিক বিতকে’ আওয়ামীলীগের দুবৃ’তায়ন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
আমাদের ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক একটা রাষ্ট্র পাওয়ার ইতিহাস ভুলে যাওয়া যাবে না।যারা ভারতে আশ্রয়ে ছিল তারা বাদ দিয়ে এদেশের সিংঘভাগ মানুষের হানাদার বাহিনীর বন্দুকের নলের সামনে দীঘ’ নয় মাস জীবনকে হাতে নিয়ে অনাহার অনিদ্রায় এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পালিয়ে জীবন বাচানোর ইতিহাস কি ভোলা সম্ভব?বৈষম্যহীন সবার সমান অধিকারের গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিমা’নে বিশাল জন-সমথ’ন এবং দেশের মোট ভোটারের আনুমানিক ২৮% থেকে ৩০% সম’থন পাওয়া আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করার আগেও ভাবতে হবে।অপরাধীর শাস্তি হতেই হবে তাতে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নাই।নেতা-কমী’দের যারা সুনিদ্দি’ষ্ট অপরাধে অপরাধী তাদের বিচার নিস্পত্তি না হওয়া অবধি নিষিদ্ধ করে দলের অপরাধহীন নেতা-কমী’দের কম’কান্ড চালাতে সুযোগ দেয়া যেতে পারে।অন্যথায় এরা আত্মোগোপনে থেকে যখন তখন বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে এমনকি প্রতিবেশি দেশ তাদের ব্যবহার করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারে।যা কিনা আমরা ৭৫ পরবতি’তে দেখেছি।
শুধু ভোটার নয় সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানে বিগত দেড়
দশকে যে দলদাস কমী’বাহিনীর বলয় তৈরী করা হয়েছে তাকে বাদ দেয়া যাবে কি?যদি না যায়,তারা
সরকারের কম’কান্ডে যে বাধা হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?যদি আওয়ামীলীগকে বাদ দিয়ে
নিবা’চন করা হয় এবং আওয়ামী ২৮% থেকে ৩০% ভোটার ভোটদানে বিরত থাকে সেই নিবা’চন কি
সব’জন অংশগ্রহণমূলক নিবা’চন হবে?বিগত ৫৩ বছর জাতি বাঙ্গালী না বাংলাদেশী বিভক্ত
ছিল ২য় স্বাধীনতার আবার কি আমরা আওয়ামীলীগ না আওয়ামীবিরোধী জাতিতে বিভক্ত হয়ে থাকবো?অনুমিত
হতে পারে,বিগত দেড় দশকে স্বৈরাচারী আচরন,গুম-খুন, দেশের সম্পদ লুন্ঠন,ভারতের কাছে
সব কিছু উজাড় করে দেয়া এবং ক্ষমতার জন্য জুলাই,২৪ এর আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার
উপর বব’তা নিম’মতা, নিদ্দ’য় পৈশ্বাচিক হত্যাকান্ড বিবেকবান আওয়ামী সমথ’কদের দলের
প্রতি সমথ’ন কমেছে কিন্তু তার মানে এই নয় দল একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।এতো দ্রত
ভুলে গেলে চলবে না যে স্বাধীনতার কথিত একচ্ছত্র নেতৃত্বের দাবীদার ৭১ এর চেতনাধারী
আওয়ামীলীগ স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের বড় বড় নেতাদের প্রহসনের বিচারে ফাসীতে ঝুলিয়েছে।আদালতের
রায়ে নিবন্ধন হারিয়ে নিবা’চন করতে না পারলেও রাজনীতিতে তারা ছিল সক্রিয়।কেবল হাসিনার
ক্ষমতা হারানোর আগ মুহুত্তে’ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে এর আগে কিন্তু করে নাই।
আমাদের মনে রাখতে হবে একটা অরাজনৈতিক বৈষম্যবিরোধী
ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের দমন করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ আওয়ামীলীগ এবং দলদাস
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নারকীয় হত্যাকান্ড শুরু করলে ছাত্র-জনতা ক্ষোভে সরকার
হটাও একদফা আন্দোলনে নামেন।জনরোষে প্রাণ বাচাতে হাসিনা পদত্যাগ করে নেতা-কমী’ সবাইকে
ফেলে ভারতে আশ্রয় পেতে পালিয়ে যায়।ভারতের নরেন্দ্রমোদী যাকে এতদিন সকল প্রকার সাহায্য
সহযোগীতা দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে সু্যোগ নিয়ে যাচ্ছিলেন তার এমন পরিণতি সম্ভবত আচ করতে
পারেন নাই।নরেন্দ্রমোদীর আগ্রাসী–আধিপত্যবাদী কম’কান্ডে প্রতিবেশী সব কয়টি দেশের সাথে
ভারতের সম্পকে’র অবনতি ঘটেছে।মালদ্বীপের পর সব’শেষ বাংলাদেশ হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া মেনে
নেওয়া তার জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।তাই মেনে নিতে পারছেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের
জুলাই বিপ্লবকে।মানতে পারছেন না ডঃ ইউনুসের ইনটেরিম সরকারকে।
বিজেপি নেতারা তাই মিডিয়া দিয়ে কল্পিত হিন্দু নিযা’তনের
গল্প ফেদে নিজ দেশে যেমন আগামী নিবা’চনের ফায়দা লুটতে চাইছেন।তেমনি একটা প্রতিবিপ্লব
ঘটিয়ে বাংলাদেশে তাবেদার হাসিনাকে পূন’বাসনের চেষ্টা করছেন।ভারতের নেতাদের মাথায় রাখতে
হবে সারা বিশ্ব দেখেছে ভারতের সংখ্যালঘুদের জয়শ্রীরাম শ্লোগান দিয়ে হত্যা করতে।দেখেছে
নামাজ পড়তে দেওয়া হয় নাই।দেখেছে মসজিদ গুড়িয়ে মন্দির করতে ।দেখেছে বুলডোজার দিয়ে ঘর বাড়ি মাটির সাথে মিশিয়ে মুসলমানদের উদ্বাস্তু করতে ।দেখেছে গত ২৪/১১/২৪ ইং তারিখে
ভারতের উত্তর প্রদেশের
সম্ভল জেলায় মোগল
আমলের শাহি জামে
মসজিদ হিন্দু মন্দিরের
উপর নিম্মি’ত অজুহাতে
বিজেপি সরকারের
সাভে'র প্রতিবাদ
করায় ৪
জন মুসলিমকে
হত্যা করা হয়েছে।মুসলিম
নেতা সহ মামলা
হয়েছে অনেকের নামে।শুধু
তাই নয়
বিজেপি এখন মন্দিরে দেবতা না খুঁজে মসজিদ সহ বিভিন্ন মুসলিম স্থাপনার নিচে শিবলিঙ্গ খোঁজা শুরু করেছে।দাবি ভারতের সকল মসজিদ ও
মুসলমানদের স্থাপত্ব্য হিন্দুদের মন্দিরের
উপর নিমা'ন
করা হয়েছে।বাদ যাচ্ছে
না ঐতিহাসিক
তাজমহল,ভারতের ধম'-বণ' নিব্বি'শেষে সকলের নিকট
পবিত্র আজমির শরীফও।কারণ আর কিছুই
নয় অযোধ্যার বাবরী
মসজিদের মতো
সকল মুসলিম স্থাপনা
ভেঙ্গে ফেলতে হবে।বিশ্ব দেখেছে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করে আগরতলায়
বাংলাদেশ হাইকমিশন ধংস করতে, কম’কতা’দের হেনস্তা করতে।রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পশ্চীমবঙ্গের মমতা ব্যনাজী’
মিডিয়ার প্রপাগান্ডায় শরীক হয়ে বাংলাদেশে শান্তি রক্ষী পাঠানোর কথা বলছেন।ভারতে সংখ্যালঘুদের
উপর এতো সব অত্যাচার,অমানবিক কম’কান্ড বন্ধে ভারত সরকারের ব্যাথ’তার জন্য সেখানেও কি
শান্তি রক্ষী পাঠানোর কথা ভাবা যাবে? কি বলবেন মমতা ব্যনাজী’?
জুলাই-২৪
এর ছাত্র জনতার বিজয়কে ব্যথ’ করতে এবং রাষ্ট্র সংস্কার ব্যথ’ করতে দেশের ভেতর বাহিরে
নানা ষড়যন্ত্রে প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুস সকল রাজনৈ্তিক নেতাদের সাথে বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের
ডাক দিয়েছিলেন।দিন পার না হতেই অতীব দুঃখের সাথে দেখলাম তাবলীগ জামাতের দ্বীনের দাওয়াতের
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই দলের সংঘষে’ হতাহত হতে।আল্লাহতালা বলেন ‘নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দীনকে (বিভিন্ন মতে) খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোনো দায়িত্ব তোমার নয়।’(সুরা আনআম: ১৫৯)।যারা ইসলামের ভেতর নানা মতভেদ, নানা ফিরকা বা দল-উপদল সৃষ্টি করে উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতালা , রাসুলুল্লাহ (স.)কে তাদের থেকে দায়িত্বমুক্ত করেছেন। আমরা মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই বলছি ,হাজার মাইল দূরে নিযা’তিত ফিলিস্তিনী ভাইদের
জন্য হাহাকার করছি।অথচ নিজেদের মতবাদকে উচুতে রাখতে একই দেশের এক ভাই আর এক ভাইকে
হত্যায় মেতেছি।
একবার কি ভেবেছি আমরা নিজেদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেরা নিজেরা মারামারি খুনাখুনি করে রাসুলুল্লাহ (স:) উম্মত হতে কি পারলাম ?দ্বীনের
দাওয়াত দেওয়ার যোগ্যতা কি আমাদের আছে ?
No comments:
Post a Comment