Sunday, November 2, 2025

প্রত্যাশা কিন্তু খুব বেশি নয়

১৭ই অক্টোবর জাতীয় ঐক্যমত্য কমিটি রচিত “জুলাই জাতীয় সনদ” অনেক অভিজ্ঞ বষী’য়ান নেতা ,প্রায় অধে’কের বেশী নিবা’চন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতিতে স্বাক্ষর হওয়ায় জাতীয় উৎসব হিসাবে উৎযাপন হতে পারে নাই। তারপরও মানুষ শান্তির অপেক্ষায় ছিল।কিন্তু জাতীয় ঐক্যমত্য কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশে বিভন্ন বিষয়ে ভিন্নতার কারণে রাজনৈতিক দলের প্রদত্ত নোট অফ ডিসেন্ট উল্লেখ না করায় নেতারা জাতির সাথে প্রতারনা হিসাবে দেখছেন।সবাই সব বিষয় একমত হবে এমন কোনো কথা নয়। ভিন্নতা থাকবেই।কমিটির সভায় নোট অফ ডিসেন্ট রাখা হয়েছিল।যেহেতু “জুলাই জাতীয় সনদ” কে একটা দলিল বলা হচ্ছে তাতে নোট অফ ডিসেন্ট বলি অথবা মতামত বলি তা রাখা উচিৎ। তাতে রাজনৈতিক দল গুলির চিন্তাধারা মানুষের কাছে স্পষ্ট হতো। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিবা’চন করবে যারা জনগণের ভোটে জয়লাভ করবে তারা ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। ইনটেরিম সরকার “জুলাই জাতীয় সনদ” কে একটা ইতিহাস এবং পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত করার কথা বলেছেন। ফলে রাজনৈতিক দলের প্রদত্ত নোট অফ ডিসেন্ট উল্লেখ থাকলে মানুষ আলাদা করে রাজনৈতিক দলগুলিকে মূল্যায়ন করতে পারতো এবং নিবা’চনে ব্যালটের মাধ্যমে তার জবাব দিতে পারতো।
জুলাই বিপ্লবের আগে বিগত প্রায় দেড় দশক নিরপেক্ষ নিবা’চনের দাবিতে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াত একসাথে আন্দোলন করেছে । জুলাই বিপ্লবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াত তাদের স্ব-স্ব নেতা-কমী’ সমথ’ক জন-সাধারণকে নিয়ে ঐক্য গড়ে একই সাথে আন্দোলন করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পর সংষ্কার,পিআর এবং গনভোট ইস্যুতে ঐক্যে ফাটল ধরেছিল।  দীঘ’মাসব্যপী দীঘ’সময় নিয়ে নানা যুক্তি তক’বিতক’ জ্ঞানগভ’ আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমে সেই ঐক্য ধরে রাখতে গিয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিটি নোট অফ ডিসেন্ট ইস্যুতে “বজ্র আটুনি ফসকা গিরোর” মত বরং সুবিশাল অনৈক্য তৈরি করে ফেলেছেন। ফলে চারিদিকে এখন নতুন করে আবার অবিশ্বাস আর আশংকা বেড়েছে। মনে হয় না রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অতিসহজে তা দূর করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় যে,মাকি’ন প্রবাসী ঐক্যমত্য কমিটি প্রধান এতো সময় ক্ষেপন  কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন এতোদিন ? তিনি কেনই বা শেষ সময় নিজেকে বিত’কিত করতে গেলেন?
দেশের ১০% মানুষ সংবিধান কিংবা জুলাই জাতীয় সনদ বোঝার সক্ষমতা আছে কিনা সন্দেহ। সেই দেশে জাতীয় নিবা’চন না করে গনভোট সহ কিছু দাবি নিয়ে আজ উত্তপ্ত রাজনীতিক পরিবেশ। দেশের অন্য প্রান্তে চেষ্টা চলছে উত্তপ্ত করতে পাহাড়ী জনপদ।তাদের কেহ কেহ সোস্যালমিডিয়ায় প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত জানিয়ে দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।সমতলে আইন-শৃংখলার অবনতি হচ্ছে প্রতিদিন।নিবা’চন বানচালে ভেতরে বাহিরে ষড়যন্ত্র চলছে।সেনাবাহিনী নিয়ে খুব বেশী নেতিবাচক কথা বলা হচ্ছে। জন-প্রশাসনের সক্ষমতার প্রশ্ন আসছে।চারিদিকে হায়েনার আনাগোনা  দেশের মানচিত্র খুবলে খেতে চায় তারা । রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের কেহ কেহ মসজিদ সহ বিভিন্ন উপাশনালয় গিয়ে ধম’কে রাজনীতিতে ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন স্থানে হানাহানি –মারা-মারি হচ্ছে। নেতৃবৃন্দদের কেহ কেহ অতি আবেগী হয়ে নিজেদের ঈমান-আকিদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।নিবা’চন সময় ঘিরে দেশের গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ মাহফিলের সময়। ওয়াজ মাহফিলে দলমত নিব্বি’শেষে ধম’প্রাণ মানুষের সমাগম হয়।সেখানে বক্তার রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতমূলক কথা বাতা’কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হাঙ্গামা হয়েছে আগামী দিনে হানাহানি মাত্রা আরো বেশি বাড়ার আশংকা আছে । প্রশাসনকে আগাম সত’ক হতে হবে যাতে কেহ ধমী’য় অনুষ্ঠানের নাম করে কোনো বিশেষ ব্যাক্তি বা দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখাতে গিয়ে সমাবেশ বিভক্ত হয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে। খুব স্পশ’কাতর ধমী’য় অনুষ্ঠানও যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। যেহেতু প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে যে কোনো ব্যক্তির বা দলের তার দলীয় সভা-সমাবেশ করার সুযোগ আছে সেখানে ছল-চাতুরি করার প্রয়োজন কি ? রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও এলাকার শান্তি- শৃংখলা বজায় রাখতে প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে হবে।
দিনে দিনে অনেক বেলা পেরিয়ে গেছে সময় নষ্ট করার আর অবকাশ নাই।অনেক হয়েছে  জাতি এখন সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের কাছ থেকে একটা সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।আশা করে সময় এখন সব ভেদাভেদ ভুলে যাবার।আশা করে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে জনে জনে ঘড়ে ঘড়ে কেউ যেন বিবাদ না করে। সবাই ভাবুক ব্যক্তি নয় দল নয় দেশকে ভালোবাসতে হবে।রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের নিজেদের মাঝে অনৈক্য তৈরি না করে জনগণের উপর আস্থা রাখতে হবে। সবাই মিলে মিশে একটা সুষ্ঠ নিবা’চন করে জনগণ তার ভোট দিয়ে যাকেই জয়ের মালা পড়াক, যে দলই জয়লাভ করুক না কেন তারা সরকার গঠন করবে, দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিজেদের সম্পৃক্ত করবে। দেশ –দেশের মানুষের নিরাপত্তা হেফাজত করবে। এমন প্রত্যাশা কিন্তু খুব বেশি নয়।

No comments: