Tuesday, November 21, 2023

মৃত্যু উপত্যকা নয় স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ি

বিএনপি ২৮শে অক্টোবর পল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের  অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ।জামাত ডাক দিয়েছিল শাপলা চত্বরে।সরকার দলীয় আওয়ামীলীগের পাল্টা সমাবেশ এর ব্যবস্থায় রাজপথে থাকার সিদ্ধান্তে শহরের অলিগলিতে তার কমী’বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল।প্রশাসনিক ভাবে বিরোধী নেতা-কমী’ ধর পাকড় জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা ও চলছিল সমানতালে। শতাধিকবার সাংবাদিক সাগর-রুণী মামলার প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছালেও সরকারের তরফ থেকে নাশকতার মামলা গুলি দ্রুত নিষ্পন্ন করার তাগিদ ছিল।ক্ষমতাসীন কোনো কোনো নেতা শাপলা চত্বরের ঘটনার পুনারাবৃত্তির হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন।প্রশাসন সম্মেলনের স্থান বিএনপির জন্য পল্টন,জামাতের শাপলা চত্বর দিবে কি দিবে না তা নিয়ে টানা উত্তেজনা।বিএনপি নেতাদের সারা ঢাকার অলিগলিতে সম্মেলনের হুমকী।জামাতের শাপলা চত্বরই দাবী।রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের  মানিনা মানবো না, ধর ধর মার মার কাট কাট আচার আচরণে কখন কি হয়ে যায় আশংকায় ভিত-সন্ত্রস্ত ছিল সাধারণ মানুষ ।দিন শেষে মানুষের আশংকাই ঠিক হলো।ক্ষমতাসীন কোনো কোনো নেতার আগাম কথা অনুযায়ী নয়াপল্টনে শাপলা চত্বর ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটলো।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় প্রথমে পুলিশ বনাম বিএনপি, পরে বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগ সবশেষে বিএনপি-আওয়ামীলীগ-পুলিশ ত্রিমুখী আক্রমণ-প্রতি-আক্রমণে রণক্ষেত্র কাকরাইল।অতপর পুলিশের নাইটংগেল এবং কাকরাইল দুইদিক থেকে মুহুমুহু সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, লাঠিচাজে’ মাত্র কয়েক মিনিটের ভেতর নয়াপল্টনে উপস্থিত লক্ষাধিক মানুষের সভা শুরু না’হতেই পন্ড।একজন পুলিশ সদস্য, একজন বিএনপি কমী’ নিহত এবং বহু সংখ্যক নেতা কমী’ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য আহত হন।স্বাধীন দেশের মাটিতে নিজেদের হাতে নিজেদের হত্যা অনাকাংখিত, অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয়।বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে এই সব সন্ত্রাসীদের খুজে বের করে দ্রুত দৃস্টান্ত মুলক শাস্তীর ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।

ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন সবার মনেই উকি দিচ্ছে। বিএনপি তার বিগত বড় বড় সব কয়টি সম্মেলন,শত বাধা-বিঘ্ন চরম উদ্বেগ আর আতংকের মাঝেও শান্তিপূন’ ভাবে সম্পন্ন করেছে।কেন ২৮ই অক্টোবর সমাবেশই করতেই পারলো না ?যেহেতু পল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল সহ আশপাশে বিএনপি কমী’ সমাগম ছিলো কেন ঐ পথে আওয়ামী কমী’বাহী গাড়ী ঢুকতে দেওয়া হলো ? উভয় পক্ষের সংঘষ’কালীন একজন পুলিশ সদস্যকে দীঘ’ সময় একদল সন্ত্রাসী কিভাবে বাধাবিঘ্নহীন নিদ’য়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করতে পারলো।সভাপন্ড করতে শত শত সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, ছোড়া গেলো কিন্তু ঐ সন্ত্রাসীদের কাউকে গুলি করা দূরে থাকুক আহত করার মতো কোনো সহকমী’কে দেখা গেলো না কেনো?এক যুবককে তারই বয়সী একদল যুবক শত শত মানুষ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে দিয়ে পেটাতে পেটাতে নিয়ে গেলো কিন্তু বাধা দেওয়ার কাউকে দেখা গেলো না কেনো?বিশাল সমাবেশে শান্তি শৃ্ংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সমাবেশ কারী কারো না কারো সাথে,অথবা নিজেদের ভেতর ধাক্কা-ধাক্কি ,ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।কিন্ত রোগীর ফোড়া কাটতে গলা কেটে ফেলার মতো সমাবেশ পন্ড করা রাজনৈ্তিক প্রতিহিংসা চরিতাথ’ করতে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে কি?জামাতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলা হলেও শেষ মুহুত্তে’ জামাত তাদের সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করে চলে যেতে পারলেও বিএনপির বেলায় প্রশাসনের চন্ডীমূতী’ প্রশ্ন জাগে বৈকি।ফলাফল বিএনপি অফিস তালাবদ্ধ,নেতা-কমী’গ্রেফতার,মামলা।যারা বাহিরে আছে তারাও গ্রেফতার এড়াতে আছে দৌড়ের উপর।জারি হলো অবধারিত হরতাল।কিছুদিন পর ইসির বিরোধীদের দাবী অগ্রাহ্য করে তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষনা এ যেন আগুনে ঘৃতাহুতি।চলমান অবরোধ-হরতাল গতি বাড়লো সাথে যানবাহন ভাংচুর কোথাও আবার যানবাহনে অগ্নিসংযোগ।সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে,দেশের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে,ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে।মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ছে সৌহাদ” সহমমী’তা কমছে।

বিএনপি সহ সমমনা যে সকল রাজনৈতিক দলগুলিকে বলতে শোনা যায় তারা এক্যবদ্ধভাবে তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নিবা’চনের জন্য আন্দোলন করছে আসলে কি তাই।বক্তৃতা আর বিবৃতিতে ঐক্যবদ্ধ যুগোপোত আন্দোলনের কথা শোনা যায় বাস্তবে আছে মনে হয় না।তা নাহলে বিএনপি নেতা-কমী’রা যখন পুলিশী আক্রমণে ছত্রভংগ তখন সমমনা দলগুলি কেনো পুলিশ এবং আওয়ামীকমী’দের দ্বিমুখী আক্রমণ প্রতিরোধে পাশে না দাঁড়িয়ে নামকাওয়াস্থে সমাবেশ শেষ করে চলে গেলো?কয়েকদিন পর দেখলাম আরেকদল তফসিল ঘোষনার প্রতিবাদে নিবা’চন অফিস ঘেরাও করার ডাক দিলেন সবাই ভাবলো আবার না জানি কি হয় ।হম্বী-তম্বী সার শান্তি নগরের শান্তির আবহ ছেড়ে আর সামনে যেতে চাইলেন না তারা।থাকতে পারে পৃথক মত ও পথ কিন্তু উদ্দেশ্য যেহেতু তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নিবা’চন, সেটা আদায় করতে মাঠে একযোগে একসাথে থাকতে দোষ কোথায়?একক ভাবে কোনো দল কখনো এদেশের আন্দোলনে সাফল্য পায় নাই ,এখনো পাবে আশা করা যায় না।নেতাদের জানা উচিত রাজপথে নিজেদের গন্তব্যে পৌছানোর সক্ষমতা দেখাতে না পারলে দেশের সবচাইতে বেশী সুবিধাভোগী সরকারী কম’কতা’ কম’চারীদের সমথ’ন আসবে না আর তাদের সমথ’ন,নিরপেক্ষতা ছাড়া দেশের কোনো বৈপ্লবিক পরিবত’ন সম্ভব না।মনে রাখা প্রয়োজন শুধু  বিদেশী তোষামোদ আর বিদেশীদের খবরদারিতে দেশের কোনো মঙ্গল আসবে না ।বরং ত্রিশ লক্ষ প্রাণ  আর হাজার হাজার মা-বোনের ইজ্জতে কেনা আমাদের স্বাধীনতা সেখানে বিপন্ন হওয়ার আশংকা থাকবে বেশী।

এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না।একসময় লাগাতার হরতাল অবরোধ ভংচুরের পর সব’দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের  অধীনে নিবা’চনের ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজিত হয়। পরে ক্ষমতায় এসে কেহ ক্ষমতায় থাকার লোভে তাকে পংগু করেছে আবার কেহ তার মৃত্যু ঘোষনা করেছে।কিন্তু কেহ কখনো ব্যবস্থার যুগোপোযোগী উন্নয়নে ব্যবস্থা করেনি ।নির্দলীয়  নিরপেক্ষ   তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিবা’চনের ব্যবস্থার জন্য সেই সময় লাগাতার আন্দোলন করেছিল বত’মান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ আজ তারা তা মানতে চায় না অসাংবিধানিক বলে, আর তখনঅসাংবিধানিক বলে বিএনপি তা মানতে চায় নাই, তারাই আজ আবার আন্দোলন করছেনিরপেক্ষ  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের  অধীনে নিবা’চন ব্যবস্থার জন্য।তাই ভাবি গনদাবী “নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা”আবার গড়ার সুযোগ যদি কখনো আসে প্রতিনীধি নিবা’চনে আমাদের প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা ঐক্যমতে পৌছাতে পারবেন কি কখনো ?

আফসোস, আমাদের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা স্বাধীনতার অধ’শত বছর পার হয়ে গেলেও একটা স্থায়ী সব’জন গ্রহণযোগ্য নিবা’চন ব্যবস্হা তৈরী করতে পারেন নাই।তারা নিজেরা একে অপরের উপর আস্থা-বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে জিঘাংসায় মেতেছেন।এক সময় বলতে শুনেছি ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড় আজ দেখতে পাচ্ছি তার বিপরীত চিত্র দেশের চাইতে দল বড়, দলের চাইতে ব্যক্তি বড়।প্রজাতন্ত্রের কম’কতা’-কম'চা্রীদের কোনো রাঘঢাক নাই সবাই আজ কোনো না কোনো গোত্রভুক্ত।কারো কারো আচার-আচরণ দলীয় নেতা-কমী’দেরও হার মানায়।আছেন পেশাজিবী, প্রতিবাদী মানবতাবাদী দাবী করা  সুশীল ও বুদ্ধিজিবী কিছু ব্যাক্তিবগ’ ।তাদের কেহ রাত কানা কেহ আবার একচোখা। তাদের কোনো  সুবিধা না থাকলে, নিজেদের নিরাপদ মনে না করলে সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে পারেন না ।তারা তখন চোখ বুঝে থাকতেই বেশী নিরাপদ মনে করেন ।

আজ দেশ যে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে সেখান থেকে বাচতে হলে দেশের জ্ঞানী-গুনী সব’জনকে দলীয় আনুগত্য পরিহার করে এগিয়ে আসতে হবে।একটা সব্ব’জন গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা বাহির করে রাজনৈতিকদের সমযোতায় আনতে হবে।এ দেশ আমাদের প্রজাতন্ত্রের সকল কম’কতা’ কম’চারীদের দলীয় আনুগত্য ত্যাগ করে নিরপেক্ষভাবে যার যার দায়ীত্ব যথাযথ ভাবে পালনে সচেষ্ট হতে হবে।কম’জীবনে বিভিন্ন দলীয় সরকার আসবে যাবে কিন্ত অবসরের আগ পয্য’ন্ত তাদের কম’ক্ষেত্রে থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।দেশ যদি ভালো না থাকে দেশের শান্তি শৃংখলা নিরাপত্তা যদি না থেকে আমাদের রেখে যাওয়া শুধু অথ’-সম্পদ বিত্ত-বৈভব দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম কি বাচতে পারবে?আসুন সবাই আর একটু ভালোভাবে দেশকে ভালোবাসতে শিখি।এমন কোনো ভুল যেনো না করি যাতে আমদের আগামী প্রজন্মকে কোনো মৃত্যু উপতক্যায় রেখে বলতে না হয় “আমরা আবেগের বশে তখন ভুল করেছি বিবেক তখন কাজ করে নাই”।রাজনীতিবিদরা এগিয়ে আসুন আপনাদের সকল সুখ দুঃখ, ব্যথা বেদনা ভুলে জিঘাংসার পথ পরিহার করে আগামী প্রজন্মের জন্য মৃত্যু উপত্যকা নয় স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ি ?

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA