বড় বড় মানুষদের বড় বড় সভা সমাবেশ , আলোচনা, সেমিনার সিম্পোজিয়াম সবখানে রথী মহারথী আমলা, পেশাজীবি, বুদ্ধিজীবি, সুশীল, নাগরিক সমাজ রাজপথ থেকে আলীসান হলরুম সংসদ থেকে গণভবন সবখানে শুনি অপরাধ আর দুনী'তি দমনে কোন প্রকার ছাড় না দেওয়ার বড় বড় প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন, কারণ ক্ষেতের ফসল রক্ষায় যে বেড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেই বেড়াই ফসল খেয়ে সাবাড় করে ফেলছে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের চাটুকার আর লুটেরাদের কথা সেই বুদ্ধি হওয়ার সময় থেকে যুগের পর যুগ আজ অবধি শুনছি ।কেবল পাথ'ক্য ক্ষুদ্র থেকে তা আজ মহীরুহ হয়েছে ।
মাঝে মাঝে মনে হয় রাস্ট্রীয় ব্যবস্থাই বুঝি অপরাধে আকন্ঠ নিমজ্জিত হতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।ফলে সর্বক্ষেত্রে দিন দিন দুনী'তি বলি আর অপরাধ বলি তা সব'গ্রাসী রুপ ধারন করছে। পারিবারিক সামাজিক ধমী'য় ন্যায় নীতি রাস্ট্রের প্রচলিত আইন কানুন কোন কিছুই তার গতিরোধ করতে পারছে না।ক্ষমতাশালী অধিকাংশই কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে তা শোধ করছে না বা করতে চাইছে না অথবা পারছেন না।ক্ষমতার ছত্রছায়ায় তাদের কারোরই বাহ্যিক শান শওকতের কমতি নাই। কিন্তু তাদের শাস্তির কোন ব্যবস্থা নাই ।বরং ক্ষমতার পাশে থাকায় সবাই তাদের তোষামোদ করেই চলেন। কিন্তু মাত্র পাচ/দশ হাজার টাকা লোন গ্রামের কৃষক দিতে না পারায় মাজায় দড়ি বাধতে দেরি হয় না কারো।শুধু তাই নয় যারা যাচাই বাছাই ছাড়া নিজের আথি'ক সুবিধার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা লোন নিতে সহায়তা করছেন তাদেরও কোন শাস্তি হয় না খুব একটা। তাদের অবস্থান ধরা ছোয়ার বাহিরে সেফ সাইডে। যারা ব্যাংকের লোন পরিশোধ করেনি রাস্ট্র যন্ত্রই তাদের পরিত্রাণের জন্য সুধের হার কমিয়ে, সময় বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই ব্যস্ত । কিন্তু যিনি মেধা ও শ্রম, ন্যায় নিষ্ঠার মাধ্যমে নিদ্দি'স্ট সময়ে দায় দেনা পরিশোধ করলেন রাষ্ট্র থেকে তিনি কি পেলেন ? ব্যাপারটা দুষ্টের দমনের ব্যবস্থা নয় যেন তাদের লালনেরই ব্যবস্থা চলছে।
শোনা যাচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাউকে কোন মামলায় চাজ'সিট দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিবা'হী প্রধানের অনুমোদন ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে মামলা করতে দেরি গ্রেফতার, রিমান্ড হতে সময় লাগে না। অথচ এই নাগরিক সমাজের কস্টাজি'ত অথে'ই নাগরিক সেবায় তাদের নিয়োগদান, নাগরিকদের কাছেই রয়েছে তাদের দায়বদ্ধতা।এই ব্যাবস্থা যদি সত্যিই বাস্তবে আসে তাতে দেশের নাগরিকদের মাঝে শ্রেণী বিভাজনের মাধ্যমে একজন আর একজনের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাড়িয়ে যাবে।উপরোন্ত অপরাধীকে অপরাধ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সময় ও সুযোগ দেওয়া হবে।যাকিনা আগামীতে অন্যকে অপরাধ করতে উৎসাহীত করবে।
অপরাধ সংক্রান্ত ভ্রমনকালীন অচেনা অজানা কিছু মানুষের সময় ক্ষেপণের আলাপচারিতার একটা খন্ড বিশেষ তুলে ধরতে চাই । সরকারি কোন মহারথী ধরা যাক চাকুরী শেষে সব মিলিয়ে দুই কোটি টাকা পাবেন। মনে করি তিনি তার পদে থেকে যত প্রকার অন্যায় আছে তার মাধ্যমে দশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন। এছাড়া গাড়ি, বাড়ি, ছেলে মেয়ের পড়াশোনা, বিয়ে সাদী, নাতি নাতনী, বিদেশ পাড়ি, ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত চাওয়া পাওয়ার সবই হলো। মাঝে মাঝে মসজিদ মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে কিছু দান ছদগাও দেওয়া হলো। নগদ অথ' সোনাদানা সেটাও আছে।
চাকুরী শেষে অডিট আপত্তিতে পেনশন আটকে গেছে। কোনো সমস্যা নাই। মামলা তাতেও সমস্যা নাই। চলতে থাকুক মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। অভাব নাই সুখী মানুষ হাতে অখন্ড অবসর। ইবাদাত, স্থানীয় মজলিসে সবার আগেই বসার ব্যবস্থা। সমাজের মান্যগণ্য ব্যাক্তি বলে কথা। এক সময় ডাক আসলে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। চলমান মামলা থমকে দাড়ালো। কার সাধ্য দুনিয়ায় তাকে অপরাধী করা , তার পরিপূর্ণ সাধ সাধনা কেড়ে নেওয়ার। যে ভবিষ্য্ত প্রজন্মের জন্য চিন্তা ছিল তাদের জন্য সবই করা আছে। দুই কোটি আর দশ কোটি। লাভ ক্ষতির হিসাব বাত্তি না জ্বালিয়েও সব একেবারেই ফকফকা।
কথায় আছে টাকা দেখলে নাকি কাঠের পুতুলও হা করে। লাগামহীন প্রয়োজনীয় সকল কিছুর উদ্ধ'মুল্যে বেসামাল সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার তাগিদে অপরাধে জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক। ডিজিটাল যুগে চারিদিকে সুখ সাচ্ছন্দের ছড়াছড়ি। অথ' আর বল হলেই তা একেবারে হাতের মুঠোয়।আমরাও আছি মুখিয়ে সবাই সুযোগের সন্ধানে। উপরে উঠতে অন্যকে ল্যাং মারছি, স্বাথে'র জন্য কারো মাথা ফাঠাচ্ছি। ভয় ডর নাই, লাজ লজ্জা নাই, হায়া নাই মায়া নাই। যে করেই হোক পেতে হবে পদ, পদবী হতে হবে অগাধ অথ' সম্পদশালী। এই কামনা বাসনা থেকেই সংঘটিত হয় যত অপরাধ, অন্যায় অবিচার আর তা প্রতিরোধ করতেই জনসাথে' ক্ষেতের বেড়ার মতই নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন সংস্থা। সরকার অপরাধ/দুনী'তি কমানোর জন্য শুধুমাত্র আঠারো বিশ লক্ষ প্রজাতন্ত্রের কম'কতা' কম'চারীদের আশা অতিরিক্ত বেতন ভাতা বাড়িয়েছিলেন। বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় না।শুধুমাত্র ব্যতিক্রম সতেরো কোটি জনগণকে বাড়তি গ্যাস, বিদ্যুত, পানি সহ অন্যান্য সরকারি সেবা, বাড়তি বাসা ভাড়া , বাড়তি গাড়ি ভাড়া, বাড়তি দ্রব্যমূল্যের অথ' জোগান দিতে নাভিশ্বাস অবস্থা । দেশ স্বাধীনের পর খান আতা সাহেব একটা ছবি বানিয়েছিলন আবার তোরা মানুষ হ। আমরা এখন মানুষ হতে চাই না সবার সাধ সাধনা আমি রাত পোহালে শুধু কোটিপতি নয় শত কোটি টাকার মালিক হব। কার সাধ্য সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করা।
প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিবগ' সৎ ভাবে দায়িত্ব পালন করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করলে নিশ্চিত বলা যায় রডের বদলে বাশ, সিমেন্টের বদলে মাটি, খাবারে ভেজাল, ফলে কারবাইড, মাছে ফরমালিন, সুউচ্চ ভবন নির্মাণে জালিয়াতি, ভুয়া ব্যাবসার নামে বেনামি লোন খুন খারাপি, ছিনতাই রাহাজানি সহ বিভিন্ন অপরাধ করতে সাহস মানুষ একেবারেই করবে না বলা যাবে না তবে কম করবে। ক্ষেতের ফসল ঠিক রাখতে চাইলে তার বেড়ার কাঠামো যেমন মজবুত করতে হয়, ভাংগাচুরা রাখলে চলবে না, ঘুণে ধরলো কিনা, লোনায় তার আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্থ হলো কিনা দেখে সময়ের কাজ সময়েই তার সংস্কার করতে হয়। ঘুণে ধরলে তা ফেলে দিয়ে তার নতুন অবয়ব দিতে হয় এই ভেবে যে পাশের অংশকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। তেমনি ভাবে স্থান কালপাত্র বিবেচনা না এনে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উধ'তন কম'কতা'গন নিজেরা সৎ ও নিষ্ঠাবান হয়ে অধস্তনরাও নিষ্ঠার সাথে, সততার সাথে তাদের উপর অপি'ত দায়িত্ব পালন করছে কি না তা তদারকি করলে নিশ্চিত ক্ষেতের ফসল রক্ষা করার মতই দেশকে দুনী'তি মুক্ত করে দেশের অথ'নীতিকে রক্ষা ও আরো শক্তিশালী করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দু'ভাগ্য প্রজাতন্ত্রের কম'কতা' কম'চারীগণ জনগণের সেবক না হয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ক্যাডারের মত এখন বিতর্কিত ভোট নামক গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিবা'চিত মেয়াদী সরকারের আজ্ঞাবহ সেবাদাস হতে খুব বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই সাধারণ মানুষের সত্যিকার দুনী'তি মুক্ত দেশ আশা করা বোধহয় এখন কল্পনা বিলাশ মাত্র।