Wednesday, September 11, 2024

বিকল্প আর এখন কিছু ই নাই

৭১ এ নয়  মাসে অতিদ্রুত  স্বাধীনতা  পাইছিলাম। প্রত্যেক ঘরে ঘরে মৃত্যুর হাহাকার  ওঠার প্রয়োজন ছিল হয় নাই। তাই স্বাধীনতার মম' বুঝি নাই। স্বাধীনতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারি নাই। সেই স্বাধীনতাকে ধরে রাখতেও পারি নাই।৫৩ বছরে দেশের রাষ্ট ক্ষমতার রাজনৈতিক দলের হাত বদল হয়েছে বহুবার। এই পালাবদলে জমেছে কেবলই জঞ্জাল। দেশ ও দেশের মানুষের কোনো পরিবর্তন হয় নাই।ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে রাজনৈতিক দল এবং  ব্যাঙের  পোনার মতো জন্মেছে  নেতা-কর্মী। দৃশ্যমান দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে  আর উন্নয়ন হয়েছে গোষ্ঠীগত কিছু মানুষের  দেশের অথ'-সম্পদ লুন্ঠন প্রক্রিয়ার।

বিগত দেড় দশকে একক দল এবং স্বৈরাচারী এক ব্যক্তির একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকার খায়েশে গুম-খুন, নিপীড়ন -নিযা'তন,জেল-জুলুম, গোষ্ঠী এবং একক পারিবারিক লুন্ঠন থেকে দেশ ও জাতিকে বাচাতে  বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন পরিকল্পনার ব্যথ্য'তায় সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে বারবার । ২৪ এ এসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে অনেক মৃত্যু,অনেক  রক্ত, অনেক অত্যাচার নিপীড়ন নিযা'তন ভোগের বিনিময়ে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে  বিজয় এসেছে । সময় এখন রাষ্ট্র সংস্কার- রাষ্ট্র মেরামতের।ইনটেরিম সরকার এসেছেন। বসতে না বসতে নানা রকমের বাহানা।একেবারেই বেহাল রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটা সংস্কারে হাত দিতে না দিতে সামনে দাড় করানো হচ্ছে আরেক বাহানা। অনেক অনেক শখ করে ছেলে বিয়ে করিয়ে  নববধূর কাছে অতি আবেগাপ্লুত শশুর-শাশুড়ির নাতি পাওয়ার আব্দার থাকবেই সেই জন্য  বধুকে পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরী করে নিতে সময় দেওয়া  লাগে।তেমনি ইনটেরিম সরকারকেও সময় দিতে হবে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সামাজিক অনাচার জঞ্জাল মুক্ত করে রাষ্ট্র সংস্কারের সফলতা অর্জনে।

ভুলে যাই ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ শুকায় নাই, নিহতের কবরের শোদা মাটির গন্ধ যায় নাই, কবরের মাটিতে নতুন কোনো  ঘাস জন্মাবার সময় পায় নাই,আহতদের ক্ষত শুকায় নাই, সন্তানহারা পিতা-মাতার,  স্বামীহারা স্ত্রীর, পিতাহারা সন্তানের, ভাইহারা বোনের চোখের পানি শুকায় নাই।দেশের ভেতর বাহিরে নানা প্রপাগাণ্ডা নানা ষড়যন্ত্র, ছাত্র-জনতার বিজয়কে ব্যথ' করে দেশকে  অস্থিতিশীল করতে চাইছে  কুচক্রীমহল। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন সংযোজন জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তোলা এর বিরোধিতা করে রাস্তা গরম করা। এখন খুব বেশি প্রয়োজন  দেশ প্রেমিক হওয়ার, অতি দরকার  জাতীয় ঐক্যের, দরকার প্রত্যকে তার নিজ নিজ জায়গায় প্রয়জনীয় সংস্কার করবার। শুধু জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করলেই দেশ প্রেমিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।আজ যারা জাতীয় সংগীত পরিবর্তনে কারো ব্যক্তিগত মতামত যা রাষ্ট্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয় তাতেই  দু:খীত-ব্যথিত হয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়ে ফেলছেন তাদের কাছে জানতে মন চায় সেদিন কোথায় ছিলেন যেদিন এই বাংলা মায়ের সবুজ জমিন কচি কচি ছেলে-মেয়েদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল, কোথায় ছিল এতো কান্না  যখন পড়ে থাকতো কোনো মাঠে  বাংলা মায়ের ই  কোনো সন্তানের গুলিবিদ্ধ  লাশ?কোথায়  ছিল কান্না যেদিন কক্সবাজারের চেয়ারম্যান একরাম সাহেবের মেয়ে কাদছিল আর তার বাবাকে বলছিল " আব্বু তুমি কানতাসো কেন"। মেয়ের কাছে তার আব্বু আর জীবিত ফিরে আসে নাই,এসেছে লাশ হয়ে।এতো আবেগ তখন আমাদের ছিলো না,এখন রাষ্ট্র মেরামতের সময়ে জাতির মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতেই আমাদের আবেগ জাগ্রত হয়েছে।  মনে করা প্রয়োজন  বিগত ৫৩ বছর আমরা বাঙ্গালী না বাংলাদেশী, রাজাকার না মুক্তিযোদ্ধা বিভেদ নিয়ে হানাহানিতেই লিপ্ত থেকে জাতীর অতি প্রয়োজনে জাতীয় ঐক্য গড়তে পারি নাই। আজও সেই  একই বৃত্তে আটকে আছি। আসুন বিভেদের দেওয়াল উপড়ে ফেলি, আবেগ নয় বিবেক দিয়ে  কাজ করি দেশকে ভালোবাসি রাষ্ট্র মেরামতের কাজকে বেগবান করি।

বাংলাদেশের এখন প্রয়োজন সবা'গ্রে  প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা  সংস্কার।সেই সংস্কার হতে হবে এমনই যাতে পাচ বছর পর পর নিবা'চন আসলে  স্বৈরাচার তাড়ানোর দাবি নিয়ে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামতে না হয়।প্রয়োজন অথ' ব্যবস্থার সংস্কার এবং আথি'ক সংস্থার উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনা। দেশের শিক্ষাংগনে ছাত্রদের উপস্থিত নিশ্চিত করা।শিক্ষকদের কারো লেজুড়বৃত্তি নয় ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানের প্রকৃত শিক্ষা গুরু হিসাবে  উপস্থাপন করার যোগ্যতা অজ'ন করা।যদি না পারি আমাদের নিজেকেই সরিয়ে নেওয়া উচিৎ। প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতাদের মন-মানসিকতার সংস্কার করা। শিক্ষাংগনের পরিচালনা পষ'দের দলাদলিতে এবং রাজনৈতিক নেতাদের তাদের দলীয় কাজে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।দেশে ঘটে যাওয়া সকল গুম-খুন, লুন্ঠন, জুলুম অত্যাচার -নিপীড়ন -নিযা'তনকারীর দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় নয় বিশেষ ট্রাইবুনালে অতি দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা। দায়ী ব্যক্তিদের অতি দ্রুত  দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।তাদের স্বনামে /বেনামে  স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি রাষ্ট্রের অধিগ্রহণ করা।

আসুন আমরা জাতীয় সংগীত কিংবা অন্য যে কোনো দাবি  নিয়ে বত'মান ইনটেরিম সরকারকে অহেতুক ব্যতিব্যস্ত না করে অতি দ্রুত সময় রাষ্ট্র সংস্কারের অতিদুরুহ কম' যাতে  সমাধা করতে পারেন এবং একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নিবাচনের মাধ্যমে  কাংখিত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারেন তার জন্য বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিয়ে, সময় দিয়ে  সবা'ত্বক সহায়তা করি।এব্যাপারে  প্রতিটি  রাজনৈতিক দল এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সবা'গ্রে এগিয়ে আসতে  হবে।  স্বৈরাচারীর একই আলখেল্লায় যেনো কেউ নতুন করে আবি'ভুত না হতে পারে সে জন্য নেতা- কর্মীদের  নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।কারণ রাষ্ট্র  কাঠামো আমুল পরিবর্তন করতে না পারলে যেনো তেনো নিবা'চন করে ক্ষমতায় গিয়ে কারো পক্ষে দেশ চালানো আর সম্ভব হবে না তা নিশ্চিত এবং একটু ভুলে আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারে যে কোনো সময়।

আমাদের আরও ভাবতে হবে  ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী সে কখনো বাংলাদেশের  ভালো চায় নাই কেবলই নিজের সুবিধা নিতে এমন কোনো কাজ নাই সে করে নাই। সে সুপ্রতিবেশী নয় কিন্তু  চাইলেই আমরা  সেই প্রতিবেশী পরিবর্তন করতে পারবো না। ভারতের অতি অনুগত হাসিনা সরকার ভারত কিছু  চাইতে দেরি, কিন্তু দিতে দেরি  করে নাই। ক্ষমতায় আজীবন থাকতে  ভারত সরকারকে কাছে পেতে সবকিছুই দিয়েছে অকাতরে।  কিন্তু বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে সীমান্তে টাগে’ট কিলিং বন্ধ করতে পারে নাই,দেশ ও জাতির  জন্য শুস্ক মরশুমে খরা আর ভরা বষা'য় বন্যা ছাড়া কিছুই আনতে পারে নাই।হাসিনা সরকারের পতনে  বত'মান নরেন্দ্র মোদী সরকার ভীষণ ভাবে ব্যথিত মমা'হত। সীমান্তে টাগে'ট কিলিং এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। শত শত ভুয়া আইডি খুলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করে দাঙ্গা বাধাবার জোর প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছে ,দেশের ভেতরের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নামিয়ে  দেশকে অস্থিতিশীল করতে  প্রপাগাণ্ডাও চালিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। ধম'-বণ' নিবি'শেষে সকলের সমান অধিকারের বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক মানুষের সচেতনার কারণে  তারা এখনো  সাফল্য পায় নাই। কিন্তু  তারা বসে নাই।আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দেশি-বিদেশি কোনো প্রপাগাণ্ডায় অতি আবেগাপ্লুত হয়ে যেন নিজেদের ভেতর  হানাহানিতে জড়িয়ে না পড়ি।সবার মাঝে ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্য গড়তে হবে। ১৯৭৫ এর ক্ষমতার পালাবদলের পরবর্তীতেও দেখেছি ভারতের অপতৎপরতা। একদিকে বঙ্গভুমি আন্দোলনে ইন্ধন জুগিয়ে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরী করা হয়েছিল  ,বাংলা ভাষা-ভাষীদের পুশ ব্যাকের চেষ্টা করা হয়েছিল , পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করা হয়েছিল। 

অতি সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার দেশের সেনাবাহিনীকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলে প্রচ্ছন্ন যুদ্ধের হুমকি দিয়ে ফেলেছেন। ভারতীয় অতি উগ্র হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বুঝতে হবে যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। আক্রমণকারী আর আক্রান্ত কেহই কখনো  জয়ী হতে পারে না। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ আর ইজরায়েলের  গাজা আক্রমণ দেখে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। সামান্য একটা মিলিশিয়া বাহিনী হামাসের হাতে বিশ্বের সেরা ইজরাইলী সেনাবাহিনী আমেরিকান ও ইউরোপীয়ানদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মদদে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে হামলা চালিয়ে গাজার সমস্ত অবকাঠামো মাটির সাথে মিশিয়ে  আর নিবি'চারে হত্যা করেও সুদী'ঘ নয় মাসে এসেও নাজেহাল হতে হচ্ছে বারবার। সবাইকে বুঝতে হবে বন্ধুত্ব হতে হবে এক দেশের মানুষের সাথে অন্য দেশের মানুষের,রাষ্ট্রের সাথে  রাষ্ট্রের সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে ,কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে নয়। আধুনিক বিশ্বে কেহ একক ভাবে স্বাবলম্বী দেশ হতে পারে না। কোনো না কোনো ভাবে একে অপরের উপর নিভ'রশীল। সবার সাথে সম্মানজনক সু-সম্পর্ক বজায় রেখে শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য সবাইকে সুপ্রতিবেশিসুলভ আচরণ করতে হবে। মনে রাখতে  হবে জনারণ্যে আগুন লাগলে তার আচে দেবালয়ও পুড়ে যায়। বাংলাদেশের পতিত সরকারের জন্য প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে আঠারো কোটি মানুষের প্রতিবেশী দেশকে অস্থিতিশীল করলে ভারতের জন্য বিপদ হতে পারে কিনা ভাবতে হবে।সুতরাং সেই অপচেষ্টা না করে নিজ দেশের সংখ্যা লঘুদের নিরাপত্তায় নজর দেওয়া উচিৎ। ভাবা উচিৎ মনিপুর সহ সেভেন সিষ্টার রাজ্য নিয়ে।সময় দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্বে কে কখন বন্ধু কে কখন শত্রু আগে থেকে বলা এখন বড়ই মুশকিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন একমাস পার করেছে।আশাকরি মোদি সরকারেরও আবেগের সময় পার হয়েছে।প্রত্যাশা আছে এখন তিনিও বাস্তবতা মেনে প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলির ভেতর সম-মযা'দার সোহাদ্দ'পূণ' পরিবেশ তৈরী করবেন  এবং সকল  বৈরীতা ত্যাগ করে রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের, মানুষের সাথে  মানুষের সুসম্পর্ক গড়ার কথা বিবেচনা করবেন। এই অঞ্চলের রাষ্ট্র গুলির স্থিতিশীল অবস্থা,  মানুষের শান্তি ও সমদ্ধির জন্য এর বিকল্প আর এখন কিছু ই নাই।

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA