৭ই অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের বিস্ময়কর আক্রমণের পর ইজরাইলের প্রতিশোধ আক্রমণে্র তিন-মাস অতিক্রান্ত হয়েছে।বিরামহীন বিমান থেকে বোমাবষ’ণ এবং স্থল অভিযানে আটি’লারী গোলাবষ’ণে বাইশ হাজারের অধিক নিহত যার অধিকাংশ নারী এবং শিশু।আহত হয়েছে ষাট হাজারের অধিক ফিলিস্তিনী।পানি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন,খাদ্য ঔষধ সরবরাহে বাধা, চিকিৎসা সেবা বন্ধ।পুরা গাজা এখন মানবিক বিপয’স্থ ধংসস্থুপে পরিণত হয়েছে।চারিদিকে খাদ্যের জন্য হাহাকার।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষধে শান্তি প্রত্যাশি রাস্ট্র সমুহের যুদ্ধ বন্ধ ও সাহায্য সরবরাহের আহব্বান, নিরাপত্তা পরিষধে আমেরিকার ভেটো প্রয়োগে দানব ইজরাইলীকে গনহত্যা বন্ধ করা থেকে বিরত করা যায় নাই। অবস্থা দেখে বলা যায় জাতিসংঘের এখন ফিলিস্তিনীদের ব্যপারে মৌখিক পরিষেবা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নাই।
তারা ৭ই অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের বিস্ময়কর আক্রমণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশ্বের চৌক্ষস সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীর গৌরবকে পরাভুত করে হামাস সীমান্তের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে ইজরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।সুদীঘ’ সত্তুর বছর ফিলিস্তীনিরা নিজেদের রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে,ভূমি দিয়ে,জেল-জুলুম অমানবিক অমানুষিক নিযা’তন নিপীড়নের বিনিময়ে ইজরাইলীদের কাছ থেকে রপ্ত করা একই শিক্ষায় ১২০০ এর বেশি বেসামরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষকে হত্যা করে এবং 200 জনেরও বেশি বেসামরিক এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যায়। ফিলিস্তিনিদের উপর ইজরাইলীদের নৃশংসতা যে হামাসের পালটা নৃশংসতার কারণ তারা তা বিবেচনা করছে না। হোলোকাস্ট থেকে বেচে যাওয়া বাস্তুচ্যুত ইহুদীরা যুক্তরাজ্যের সরাসরি প্রভাবে ফিলিস্তিনে আশ্রয় পেয়েছিল। সেই আশ্রয়কারীরা ১৯৪৮ সালে মেনাচেম বেগিনের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনী অধিবাসীদের উপর প্রথম অমানবিক নৃশংসতা শুরু করে দেইর ইয়াসিনে। নারী ও শিশুসহ শতাধিক ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছিল। বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের। ১৯৫৩ সালে কিব্যাতে ফিলিস্তিনী অধিবাসীদের নৃশংস ভাবে হত্যা করে।১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে সেনাবাহিনীর অধীনে ন্যস্ত করে।ফলে সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়া নিজ মাতৃভুমিতে কোনো কিছুই করা করা সম্ভব ছিলো না ফিলিস্তিনীদের।ফলে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনী জডা’ন ও লেবাননের শরনাথী’ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।১৯৮২ সালে লেবাননের শরনাথী’ শিবির সাবরা-সাতিলায় ইজরাইলী সেনাবাহিনীর পৃষ্টপোষকতায় দুই হাজারের অধিক নারী-শিশুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।
৭০ বছর আগে শুরু করা ফিলিস্তিনীদের হত্যা, বাস্তুচ্যুত করা, আটক ও তাদের ভূমি দখল আজো অব্যাহত রয়েছে। এভাবেই দিনে দিনে ফিলিস্তিনের ভূমি সংক্ষিপ্ত হয়েছে।যেখানে কোনো স্বাধীনতা নেই, সবকিছুই ইসরায়েলিদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।যুগ-যুগ ধরে ফিলিস্তিনীরা অধিক জনসংখ্যার ঘনবসতিপুণ’ পৃথিবীর একমাত্র খোলা আকাশের কারাগারে জীবন যাপনের নুন্যতম প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ছাড়াই মানবেতর জীবন-যাপন করছে ।জন্মেই তাদের দেখতে হয় মৃত্যুর বিভীষিকা আর ধংসযজ্ঞ। এ ভাবে ঘৃণা আর লাঞ্ছনায় গড়ে উঠছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ।
বছরের পর বছর ধরে দখলদার ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনীদের ওপর তাদের বর্বরতা, অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন তারা শিশু ও নারীদের টার্গেট করে হত্যা করছে। ইসরায়েলিরা তাদের নতুন বসতি স্থাপনের জন্য ফিলিস্তিনীদের বাড়ি-ঘড় ধ্বংস করছে এবং দখল করছে। সভ্য বিশ্ববাসী চোখ বন্ধ করে আছে। ইসরায়েলিদের তারা কখনো ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বলেনা, তাদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেনা। এভাবে প্রতিটি ফিলিস্তিনীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে যার জন্য তারা প্রতিশোধ নিয়েছে সন্দেহ নেই। তারা দেখছে প্রতিদিন একজন দুজন করে হত্যা করছে, তাদের বসতবাড়ি থেকে বিতারিত করছে। কিন্তু কোথাও কেহ নাই তাদের হয়ে কথা বলবার,তাদের উপর জুলুম নিযা’তন বন্ধ করবার।ফিলিস্তিনীরা যদি ভেবে থাকে একজন একজন করে কেন মরতে হবে ? এভাবে তাদের মুক্তি আসবে না ,পাওয়া যাবে না মাতৃভূমির স্বাধীনতা।তার চাইতে দেশের জন্য মর্যাদা নিয়ে মরে যাওয়াইতো ভালো। তাতে দোষ কোথায় ?
বিশ্বের সভ্য দেশের নেতাদের জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নাই।যারা ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করছেন। আক্রমণকারী আগ্রাসী রাশিয়াকে থামাতে ইউক্রেনকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।আফসোস, যে ফিলিস্তিনীরা তাদের ভূমির জন্য লড়াই করছে, তাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিচ্ছে তাদের জন্য কোনো প্রকার সহযোগীতা তো নাই বরং স্বাধীনতাকামী সেই যোদ্ধাদের তারা সন্ত্রাসী বলছেন।ফিলিস্তিনীদের উপর বর্বরতা অব্যাহত রাখার জন্য দখলদার ইসরাইলকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করে চলেছেন। এই দৈত ভূমিকার কারণে সারা বিশ্বে এমনকি খোদ ইজরাইল আমেরিকার বড় বড় শহরে ধম’বণ’ নিবি’শেষে শান্তিকামী মানুষেরা প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে।গাজায় স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি সহ স্বাধীন ফিলিস্তিনীর দাবী উঠেছে।শান্তিকামী মানুষের প্রশ্ন আর কতো ফিলিস্তিনী নারী-শিশুর মৃত্যু তাদের প্রয়োজন, কি পরিমান রক্ত, কতোটা ফিলিস্তিনীদের মৃতদেহ,কতো সংখ্যক আবাসন,কতো মসজিদ, গিজা’,কতোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কতোটা হাসপাতাল মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে মানবতাবাদী সভ্য দুনিয়া মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের গাজায় ফিলিস্তিনীদের উপর ইজরাইলীদের চলমান গণহত্যা বন্ধ করার জন্য বোধোদয় হবে ?
আচ’বিশপ ডেসমন্ড টুটু উদ্ধৃতি: "জুলুমের কালে তুমি যদি নিরপেক্ষ থাকো তা’হলে তুমি জালিমের পক্ষই নিয়েছ"
মুসলিম নেতাদের উপরোক্ত কথা মনে রাখা উচিত। নিজেদের মধ্যে সব ধরনের বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।তাদের কেউ কেউ শুধু মৌখিক পরিষেবা দিয়ে দায়ীত্ব শেষ করে যাচ্ছেন আবার কেউ ক্ষমতায় থেকে আরামদায়ক জীবন উপভোগ করতে তাদের নিরপেক্ষতা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এই নিরপেক্ষতা, আমেরিকা ও ইউরোপের কাছে নতযানু থাকা সরাসরি ফিলিস্তিনী নিধনে ইসরায়েলের নৃশংসতার হাতকেই শক্তিশালী করছে। তাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন,শুধুমাত্র বক্তৃতা সংলাপ দিয়ে ইসরাইলকে থামানো যাবে না।যেখানে মাথায় আঘাত করা প্রয়োজন সেখানে বিষাক্ত সাপের লেজে নরম হাতের স্পর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। উপলব্ধি করা দরকার যে মার্কিন এবং পশ্চিমারা কখনই তাদের বন্ধু হবে না ।কেবল তখনি হবে যখন তাদের স্বাথ’ থাকবে, যখন তারা একে অপরকে হত্যা করার জন্য আরবদের মধ্যে বিভেদ করতে চাইবে।
তাই আমেরিকা এবং পশ্চীমাদের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নিজের শরীরেও ব্যথা অনুভব করতে হবে বিশ্বের যে প্রান্তে হওক কোন ভাই যদি আক্রান্ত হয়ে কস্ট পায়।আপনার সম্পদ কেবল আপনার ভোগের জন্য নয়, আপনার ভাইয়েরও সেখানে অধিকার আছে। তাই এই মুহুর্তে আরব দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মধ্যে একমাত্র ঐক্য ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। প্রত্যেক দেশের সীমান্তে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে একত্রিত করতে হবে। ভাবতে হবে জর্জ বুশ যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ইরাক আফগানিস্থানে তা এখন বাইডেন প্রশাসন সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আরব নেতাদের যৌথভাবে তাদের সমস্ত সম্পদ নিয়ে আরব শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে হবে এবং ইসরায়েলকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং তাদের নিজ সীমান্তে ফিরে যেতে, অন্যথায় সব রনাঙ্গনে মোকবেলা করতে হবে চ্যালেঞ্জ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ইসরাইল ও আমেরিকাকে তাদের বর্বরতা চালিয়ে যেতে দুবার ভাবতে হবে।তারা জানে যুদ্ধের ভয়াবহতা কি।তারা জানে অস্ত্র বিক্রি করে অন্যকে যুদ্ধে পাঠানো আর নিজে যুদ্ধে জড়ানোর পাথ’ক্য কি। ফিলিস্তিনীদের বাঁচাতে, আল-আকসা মসজিদ বাঁচাতে, মানবতা বাঁচাতে হলে যুদ্ধের ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আরব নেতারা ব্যর্থ হলে ভবিষতে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।ফিলিস্তিনে গণহত্যা শেষ করার পরে, ইসরাইল মার্কিন সহায়তায় হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। এরপর আরব বিশ্বে ইসরায়েলকে চ্যালেঞ্জ করবে এমন কেউ থাকবে না। সব আরব নেতাদের মাথা অব্যাহত অবনত ই থাকবে , উচ্চ হবে না আর কোনো দিন।অন্যদিকে ইজরাইলের বাধাহীন গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের ভুমি দখল করতে দেখে যে কোনো দেশ তার দুব’লতম প্রতিবেশীকে আক্রমণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA
প্রকাশ : দৈনিক আমাদের বাংলা তারিখ:০৮/১২/২০২৪ইং