Tuesday, May 27, 2025

বাংলাদেশ-ভারত সম্পক' কোন পথে

ভারতের সব সরকার সব সময়ই আওয়ামীলীগকে পছন্দ করেছে।কিন্ত্ কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি প্রধান নরেন্দ্রমোদী সরকারের সাথে হাসিনা সরকারের সম্পক’ পৌছেছিল সব্ব’কালের সব্ব’উচ্চতায়।নরেন্দ্রমোদী সরকার হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে বাংলাদেশের বিরোধী মতের লোক দমন-পীড়নে,গুম-খুনে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিমু’ল করতে সহযোগীতা করেছে।এভাবে একটানা দীঘ’ ষোল বছর ক্ষমতায় রেখে হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ রাণী বানিয়েছে।বিনিময়ে নাম মাত্র শুল্কের মাধ্যমে ট্রানজিট নেওয়া,অধিক মুল্যে অন্যায্য শতে’ আদানীর বিদ্যুত বাংলাদেশের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা সহ ভারতের প্রয়োজনে যা কিছু নেওয়ার সবই নিয়েছে।কিন্ত সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা বন্ধ করে নাই, তিস্তার পানি চুক্তিও করে নাই।তিস্তার পানি চুক্তি না করলেও ফেনী নদীর পানি নিতে চুক্তি ঠিকই করেছে।এখন শোনা যাচ্ছে হাসিনা ভারতের সাহায্য পেতে বাংলাদেশের ভুখন্ড ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছে।দেখে মনে হচ্ছে আগামী ২০৪০ সাল পয্য’ন্ত হাসিনার ক্ষমতায় থাকার যে উচ্চাভিলাস ছিল তার জন্য হয়তো বাকি ছিল সিকিমের লেন্দুপ দজি’র মতো ভারতের কাছে বাংলাদেশকে তুলে দেয়া।সময়ের অভাবে হয়তো বা তা করে যেতে পারে নাই।নরেন্দ্রমোদি সরকারও সম্ভবত বুঝতে পারে নাই যে এতো দ্রুত  ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের ইস্যুতে তার তৈরী তাবেদার ফ্যাসিবাদ রানীর পতন হবে।

আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন বলেছিলেন আমি ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা সারা জীবন মনে রাখবে”।তিনি ঠিকই বলেছিলেন নরেন্দ্রমোদী ভোলেন নাই।তিনি মনে রেখেছেন।জুলাই এর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে নিব্বি’চারে হাজার হাজার মানুষকে রক্তাক্ত আহত-নিহত করে জন-রোষে প্রাণ বাচাতে হাসিনা ভারতে গেলে নরেন্দ্রমোদী হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছেন।তার দেখ ভাল এর ব্যবস্থা করছেন।তাকে পুন'বাসনের জন্য ১৮কোটি মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশের ইনটেরিম সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন ব্যানারে বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।হাসিনাকে ভারতে বসে তার ফেলে যাওয়া নেতা-কর্মীদের উচকানি দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করার সুযোগ দিচ্ছেন।মিডিয়ায় নিত্য নতুন প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে তা তুলে ধরছেন।বাংলাদেশের  সীমান্তে ভেতরে কাটাতারের বেড়া দেয়ার নামে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরী করেছেন।কিন্তু ধম’–বণ’ নিব্বি’শেষে জাতীয় ঐক্যের কারণে তা এখনো সফল হয় নাই। 

ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী  সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,“দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারব  শুধুমাত্র  যখন  একটি  নির্বাচিত  সরকার  থাকবে।তার বক্তব্যে প্রমাণ হয় ভারত ডঃ ইউনুসের ইনটেরিম সরকারকে মানতে পারেন নাই।মুলত জুলাই বিপ্লবের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পক’ টানা-পোড়নের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে।দুই দেশের সচীবদ্বয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় সম্পক’ উন্নয়নের আশা ছিল হয় নাই।ডঃ ইউনুস-নরেন্দ্রমোদীর বৈঠকের সুযোগ থাকলেও বেশ ক’বার তা হয় নাই।অবশেষে  থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনের পর দুই নেতার মাঝে বহু আকাঙ্ক্ষিত বৈঠক হয়েছে।উভয় দেশের শান্তি প্রিয় মানুষের আশা ছিল দুই-দেশের মাঝে সম্পক’ উন্নয়নের কিন্তু তারও লক্ষণ নাই।আমেরিকার নিরাপত্তা প্রধান ভারতীয় বংশোদ্ভোত ইসকন প্রেমী তুলসী গ্যাবাড’ দিল্লী সফরে এলে  হিন্দু নিযা’তনের কাল্পনিক গল্প ফেদে তাকে দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করান হয়েছে।

বিজেপি সরকার ভারতে মন্দিরে দেবতা না খুজে মুসলিমদের স্থাপনার নিচে দেবতা খোজার নামে মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংস করা মুসলমানদের ঘড় ছাড়া বাড়ি ছাড়া করছেন।প্রতিবাদ করলেই হত্যা করা এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যপার।মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিত’কিত আইন পাশ করায় মুসুলমানদের প্রতিবাদে দমাতে মুসলমানদের উপর নিষ্ঠূরতা বব্ব’তা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র ফেরাতে কাশ্মীরে পহেলগামে পয’টক নিধনের নাটক সাজিয়ে মুসলমানদের দায়ী করে দাঙ্গা বাধানো এবং পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দেওয়ার  অজুহাতে “অপারেশন সিঁদুর” নামে পাকিস্তান আক্রমণ করে বসে।আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে উভয় দেশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।আমেরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কায’কর হয়েছে।কিন্তু এখন ভারতীয় বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে তুলে এনে বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা করে আবারও সিমান্তকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।স্থল বন্দর দিয়ে পন্য-সামগ্রীর আমদানী-রফতানী বন্ধ করছে।বাকি শুধু যে কোন সময় উজানে বাধ খুলে দিয়ে অকাল বন্যায় দেশকে প্লাবিত করা।আমাদের সজাগ থাকতে হবে কারো উচকানিতে আমরা কেহ যেন কারো পাতা ফাদে না পড়ি। 

ভারত বাংলাদেশের বৃহতর প্রতিবেশী।বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিরোধী নয় তবে মোদী সরকারের বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কম'কান্ড তার আগ্রাসী-আধিপত্ববাদীতে বিক্ষুদ্ধ।ইনটেরিম সরকারের ৬মাস পূতি’র দিন ৫ ফেব্রুয়ারী  ভারতে বসে হাসিনার উচকানীর প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বর বাড়ী ভাঙচুর করলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটা বাড়ী ভাঙ্গাকে দুঃখজনক বলেছেন, নিন্দা জানানো উচিৎ বলেছেন।কিন্তু জুলাই বিপ্লব দমাতে হাসিনা সরকারের পৈশাচিকতায় হাজার-হাজার ছাত্র-জনতা আহত নিহত হওয়ায় দু;খ প্রকাশ করেন নাই।আজ যখন জনদাবীতে সরকার আওয়ামীলীগ এবং তার সকল অঙ্গ-সংগঠনের সকল প্রকার কম’কান্ড বিচার কায’ শেষ না হওয়া পয্য’ন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘কোনো উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ না করেই আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ একটি উদ্বেগজনক ঘটনা।’তিনি বলেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা যেভাবে খর্ব করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হয়ে আসছে  একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত স্বভাবতই উদ্বিগ্ন।“ নিজ দেশে রাজ্যে রাজ্যে অবিচার অনাচার করে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ণ-নিযা’তন বহাল রেখে প্রতিবেশী দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর আগে তাদের ভাবা উচিৎ।    

বিগত ষোল বছর প্রহসনের নিবা’চন করে গুম-খুন মামলা হামলা করে হাসিনার ক্ষমতায় থাকায় কখনো উদ্বিগ্ন হন নাই।সীমান্তে  ভারতী সীমান্ত রক্ষীদের বাংলাদেশীদের হত্যাকান্ডতে ব্যথিত হন নাই।বিনা নোটিশে উজানের বাধ এর পানি  ছেড়ে অকাল বন্যায় বাংলদেশের হিন্দু-মুসলিম সকলকে ডুবিয়ে ভাসিয়ে মারলে তখনো উদ্বিগ্ন হন নাই।এখন বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ধরে এনে বাংলাদেশে পুশ ইন করতে ও উদ্বিগ্ন হন না।বাংলাদেশের পতিত স্বৈরাচারীকে আশ্র্য় দিয়ে তাকে তার হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে সাহায্য করার অনৈতিক কায’কলাপ চালিয়ে প্রতিবেশী ১৮ কোটি মানুষের দেশকে অস্থিতিশীল করা উচিৎ কিনা মোদি সরকারকে আজ ভাবতে হবে।

দেশের ভেতর হঠাৎ করে নিবা’চন ইস্যু এবং বিভিন্ন দাবী–দাওয়া সহ সরকারের সংস্কার কায’ক্রমে প্রজাতন্ত্রের কম’কতা’-কম’চারীদের বিরোধীতায় অস্থতিশীল হয়ে উঠেছে চারিদিক।যার কারণে প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের চিন্তা করতে হয়েছে।যা কোনোভাবে কাম্য নয়।সময় এসেছে জাতি হিসাবে বাংলাদেশে আমাদের ভাবতে হবে।যারা ক্ষমতার জন্য হাজার হাজার নিজ দেশের মানুষকে আহত নিহত করেছে,দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে।বিপদে অনুসারী-কমী’দের কথা না ভেবে পালিয়ে গেছে, যারা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা দেশের ভুমি অন্যদেশকে দিয়েছে তাদের পুন’বাসনে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশকে কেন অস্থিতিশীল করতে হবে?রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে যারা দেশ ও জাতির সাথে বেঈমানী করে নাই, যারা দেশ-প্রেমিক তারা নিজেরাই দল করুন রাজনীতি করুন।দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসুন।এতো বছর পর দল-মত নিব্বি’শেষে সকলের সম্মিলিত আন্দোলনের ফসল জুলাই বিপ্লবের পর স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বলে জাতির মাঝে বিভেদেরও বোধ করি আর প্রয়োজন নাই।তবে ৭১ এর ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না মুক্তিযুদ্ধে কারও বিত’কিত কম’কান্ডকেও অস্বীকার করা যাবে না।আমরা যেন ভুলে না যাই সবার আগে দেশ বাচাতে হবে আর দেশ বাচাতে জাতীয় ঐক্যের আর কোন বিকল্প নাই।আমদের একটু ভুলে বত'মান বিশ্ব ব্যবস্থায় জাতির ভাগ্যে আসতে পারে অমানিশার ঘোর অন্ধকার।সেখান থেকে পরিত্রাণের পথ আর খুজে পাওয়া যাবে, তা হতে পারে একেবারেই অসম্ভব।

যুদ্ধ বিগ্রহে উত্তাল বিশ্বে দক্ষিন পুব’ এশিয়ার শান্তির জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্র হিসাবে ভারত সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা এ মহুত্তে’ অতি জরুরী।আশা করি ভারতের নরেন্দ্রমোদি সরকারের শুভবুদ্ধি হবে।অপারেশন সিঁদুর থেকে শিক্ষা নিবেন তাকে আগ্রাসী এবং আধিপত্যবাদী নীতি পরিহার করতে হবে।প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধে কেহ লাভবান হয় না কমবেশি উভয় দেশের সম্পদ নষ্ট হয়, সাধারণ মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।বাংলদেশের ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব এবং ডঃ ইউনুসের ইনটেরিম সরকারকে তিনি মেনে নিবেন।বাংলা ভাষাভাষী ভারতের মুসলমানদের বাংলদেশে পুশ ইন বন্ধ করবেন।ভারত থেকে মুসলিম বিতারণের জন্য মুসলমানদের উপর নিপীড়ন-নিযা’তন বন্ধ করবেন।যাতে বাংলাদেশে তার প্রভাবে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।আসুন হিন্দু-মুসলিম কিংবা সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বিভেদ তৈরী করে ঘড় পোড়া  আগুনে আলু পুড়িয়ে খাওয়ার মতো নিবা’চনী ফায়দা লুটতে রাজনীতিকরা কোনো প্রকার  জাতিগত হিংসা-বিদ্বেষ না ছড়াই।আসুন দক্ষিন পুব’এশিয়ার শান্তির জন্য এপার-ওপার কেহ কোন একক ব্যাক্তি বা গোষ্টীর জন্য রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পক’ যেন নষ্ট না করি । প্রয়োজনে বিপদে-আপদে একে অপরকে সাহায্য সহযোগীতা করি।সু-প্রতিবেশী হিসাবে সুখে শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করতে চেষ্টা করি।

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA

প্রকাশ ঃ দৈনিক দিনকাল তাঃ-২০/০৬/২০২৫ ইং