Wednesday, April 17, 2024

শিশুকে ইলেট্রনিক্স ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে হবে।

গত ২রা এপ্রিল,২০২৪ইং মঙ্গলবার দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব অটিজম সচেতনা দিবস।আলোচনায় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের কথা এসেছে।ওটীজম বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা সহজ এবং পিতা-মাতার সামথে’র মধ্যে রাখায় সরকার এবং দেশের সামথ্য’বান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার বিষয়ে লিখতে গিয়ে অনেক আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।চাকুরী থেকে অবসর নেওয়ার পর হাতে তখন অফুরন্ত সময় ।শুয়ে বসে ইন্টারনেট ঘেটে তা যেন  কাটতে চাইতো না। তাই ছোট ভাই এর একটা গিফটশপ “গিফট গাডে’ন” এ গিয়ে বসতাম, তাতে করে ছোট ভাইকে কিছুটা সাহায্য করা সেই সাথে নিজের কর্মহীন অফুরন্ত সময় কাটতো।এমনি এক সন্ধ্যায় দূর থেকে  একটা করুন আকুতি কেবলই নিকটবর্তী হচ্ছিল। মনটা আগে থেকেই ভালো যাচ্ছিল না। করুন আকুতি বুকের ভেতর কেমন যেন হাহাকার করে উঠলো। গ্লাস ডোর ঠেলে বাহিরে এসে দাড়ালাম। আকুতির উৎস খুঁজতে চেষ্টা করে প্রথমে ব্যর্থ হলাম। এদিকে ওদিকে তাকাতে দূরে মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করে দেখলাম কিছু একটা গড়িয়ে আসছে আর সেখান থেকেই এই আকুতি। কাছে আসতে দেখা গেল একটা বিশ পঁচিশ বছরের যুবক হাত পা সবই পঙ্গু। পিঠ এবং কোন রকমে পা দিয়ে সম্মুখে যাওয়া আর মুখ দিয়ে করুন আকুতিতে ভিক্ষা চাওয়া, পুরাটা স্পষ্ট নয়। মানুষ এবং মানবতার জন্য এ দৃশ্য বড়ই পীড়াদায়ক। যে কোন মানুষের হৃদয়ের গভীরে তা ব্যাথা লাগারই কথা।

পুনর্বাসন যদি  করতেই হয় প্রথমে এসকল পঙ্গু বিকলাঙ্গ অসহায়দের পুনর্বাসন বড় বেশী প্রয়োজন।এরা যতদিন বেচে থাকবে ততদিন তাদের ভোরণ-পোষন দেয়া ছাড়া তাদের থেকে কিছুই আশা করার নাই।শুধু এই ভিখিরির কথা নয়। রাস্তা ঘাটে ওভারব্রিজ ফুটপাতে এরকম অসংখ্য বিকলাঙ্গ মানুষকে অমানবিক ভাবে ফেলে রেখে দূরে সতেজ সুস্থ সবল মানুষকে পথচারী মানুষের দুর্বল মনে আঘাত করে অর্থ উপার্জন করতে দেখা যায়। সেই সমস্ত বিকলাঙ্গ মানুষের অবস্থা দেখে রাস্তায় চলাচলকারী আমাদের কোমল মতি শিশুদের মনের উপর একটা প্রভাব পড়ে। অনেকবারই খবর বেরিয়েছে এক শ্রেনীর মানুষরূপী অমানুষরা শিশুদের হাত পা ভেঙ্গে বিকলাঙ্গ করে বড় করে তোলে। পরে ভিক্ষা বৃত্তিতে নামিয়ে মানুষের দুর্বল মনে আঘাত করে অর্থ উপার্জন করে।যদি তাদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পুন’বাসনের ব্যবস্থা হয় একসময় অমানুষদের, শিশুদের বিকলাঙ্গ করার প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।

দেশে এমন প্রতিবন্ধী মানুষ ছাড়াও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।যাদের অনেক ধরনের সমস্যা আছে।কারো আছে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা, কারো কথা বলা ও শোনার সমস্যা, কারো সবকিছুতেই অমনো্যোগী, কেহ খুব বেশী চঞ্চল, কারো আবার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বেকে যাওয়া, বয়স অনুযায়ী মানসিক বিকাশ না হওয়া ছাড়াও

নানা সমস্যা।“ইপন” এর একটা অনেক আগের গবেষণার তথ্য থেকে জানা যায় শহরে প্রতি দশ হাজারে সতের শিশু অটিজমে আক্রান্ত ।গ্রামে এর সংখ্যা নাকি আরও বেশী।এদের কারো দরকার বিহেবিয়ার থেরাপি,কারো প্রয়োজন স্পিচ থেরাপি কারো অকুপেশনাল থেরাপি কারো দরকার ফিজিও থেরাপি।জন্মগত সমস্যাতো আছেই ডিজিটাল যুগে এসে শিশুদের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইজে আসক্ত করে পিতা-মাতার অসচেতনতা,অবহেলা,অজ্ঞতায় সুস্থ শিশু নিজেদের অজান্তেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।একবার এমনি এক যুবতী মায়ের সাথে আলাপ হয় ,তিনি জানান বাচ্চার দু’বছর পর মাস্টারস পরীক্ষা জন্য তৈরী হতে গিয়ে ছেলেকে শান্ত রাখতে হাতে ডিভাইস তুলে দিয়ে ছেলের সব’নাশ করে ফেলেছেন।ছেলে আর মোবাইল ছাড়া শান্ত থাকে না।এভাবে বছর পার হয় কিন্তু পড়াশুনায় কিছুতে আনা যায় না।কারো সাথে কথা বলে না।কারো সাথে মেশে না।এখন স্কুলে দিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।বিভিন্নজন বিভিন্ন প্রশ্ন করলে নিজেকে বড় বেশী অপরাধী মনে হয়।সবাই ছেলে মেয়েকে নিয়ে হাসি খুশীতে থাকলেও নিজে তা পারছেন না।এছাড়াও সামাজিক কুসুংস্কারের ফলে সন্তানের পিতা-মাতা হীনমনতায় ভোগে সন্তানকে কারো সামনে নিয়ে যেতে সংকোচবোধ করে।সন্তানকে কারো সাথে মিশতে দেয় না খেলা ধুলা করতে দেয় না।ফলে যে সমস্যা দশটা ছেলে- মেয়ের সাথে মিশলে খেলা-ধুলা করলে ভালো হতে পারতো তা আর হয়ে ওঠে না।এক সময় বয়স বাড়ে দৈনন্দিন জীবন যাপনের কিছু জানার এবং শেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ স্কুলেও ভত্তি’ করাও সম্ভব হয় না।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য সরকার চাকুরী, রাস্তায় চলাচলের বিভিন্ন সুবিধা ছাড়াও সামান্য কিছু আথি’ক সাহায্যের ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানা যায়।প্রধানমন্ত্রী এবং তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ এর আন্তরিক পৃষ্টপোশকতায় বেসরকারী ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।কিন্তু মান সম্পন্ন সেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা পিতা-মাতার জন্য একেবারেই অসম্ভব তাতে কোনো সন্দেহ নাই।প্রয়োজনেই দু’চারটা প্রতিষ্টান দেখার এবং মোবাইলে খোজ নিতে গিয়ে দেখেছি মাঝারি মান সম্পন্ন একটা স্কুলে প্রথমেই ভত্তি’ করাতে বাইশ থেকে পচিশ হাজার টাকা,মাসিক বেতন আট হাজার থেকে তেরো-চৌদ্দ হাজার টাকা এবং থেরাপি (যদি প্রয়োজন হয়) প্রতি থেরাপিতে প্রতিদিন আটশত টাকা অথ্যা’ৎ একটা সন্তানের পেছনে ভত্তি’ ফি ছাড়া মাসে গড়ে ২০ দিন ক্লাশ ধরলে বেতন ৮০০০+ ১৬০০০ (একটা থেরাপি ৮০০/প্রতিদিন)=২৪,০০০.০০ টাকা প্রয়োজন।শুনেছি একলাখ টাকা ভত্তি’ এবং চল্লিশ হাজার টাকা মাসিক বেতনেরও স্কুল এই ঢাকা শহরে আছে।এতো টাকা দিয়ে ক’জন মা-বাবা তার সন্তানকে পড়াতে পারবেন?কম বেতন এর প্রতিষ্ঠান যে নাই তা নয় কিন্তু একজন শারিরীক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে মানসিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অথবা কথা বলা ও শোনার সমস্যা,কিংবা অমনো্যোগী, কিংবা খুব বেশী চঞ্চল শিশুদের শিক্ষক সল্পতার কারণে এক সাথে একই টেবিলে পড়ানো হয়।এটা সঠিক বলে মনে হয় না।শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং শারিরিক  জড়তা কাটানোর জন্য খেলাধুলা করার প্রয়োজন কিন্তু তার জন্য কোনো জায়গা নাই।একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে এমনি চলছে শিক্ষা কায’ক্রম।

আলাপে জেনেছি এই সকল শিশুদের সঠিকভাবে পরিচযা’ পরিসেবা দিতে হলে অনেক ক্ষেত্রে শিশু প্রতি একজন শিক্ষক প্রয়োজন।দেশে পযা’প্ত দক্ষ শিক্ষকের অভাব আছে।দক্ষ শিক্ষকের বেতন ত্রিশ-চল্লিশ হাজারের বেশী দিতে হয়।তাই শিক্ষকদের বেতন স্কুলের ঘড় ভাড়া বেশ ব্যয় সাপেক্ষ যার ব্যয় মেটানোর জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন।তাই বাধ্য হয়েই শিশুদের অভিভাবকদের উপর চাপ বাড়াতে হয়।আমরা দেশকে উন্নত দেশের সংগে তুলনা করি বাস্তবে তার কিছুই দেখি না ।শুধু দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন যথেষ্ঠ নয়।আমার এক বন্ধুর ভাগিনা এমনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, আমেরিকায় থাকে।শুনেছি তাকে একটা প্রতিষ্ঠানে ভত্তি’ করা হয়েছে ভাগিনার সবকিছু প্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্বে অভিভাবককে তার জন্য কোনো কিছুই ভাবতে হয় না।আমাদের দেশে এমনি সবার জন্য শিক্ষা এবং পুন’বাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।আমরা যদি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের লক্ষন ভেদে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং শিক্ষার ব্যয়ভার অভিভাবকদের সামথে’র মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে পারি তবে অনেক শিশুই সুস্থ্য হয়ে পরিবার সমাজ ও দেশের অগ্রগতিতে ভুমিকা রাখতে পারবে।তা না হলে প্রয়োজনীয় সেবার অভাবে একসময় এরাই পরিবার সমাজ ও দেশের বোঝায় পরিণত হবে।শুধু সরকার নয় বিত্তবানদেরও এব্যপারে ভেবে দেখার সময় এসেছে।সেই সাথে সন্তানের পিতা-মাতাকে সচেতন হতে হবে শিশুদের সাথে সময় কাটাতে হবে।শিশুদের শুধু ঘড়ে ড্রয়ং রুমে ফামে’র মুরগীর মতো হৃষ্ট-পুষ্ট বানালে হবে না তার মানসিক বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।শহরে পযা’প্ত খেলার মাঠ নাই সত্য আপনি অবসরে সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় হাটতে নামুন ,সামাজিক অনুষ্ঠানে সন্তানের হাতটি ধরে হাজির হন দশ রকমের দশটা ছেলে-মেয়ের সাথে মিশতে দিন।পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে, একজনের সাথে আরেকজন হাতাহাতি করবে এভাবেই শিশুদের মানষিক বিকাশের চেস্টা করুন।সেই সাথে যে কোনোভাবেই অপরিণত শিশুকে ইলেট্রনিক্স ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে হবে।

Published : Daily Alokito Bangladesh on 15/06/2024

https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA

No comments: