২০১৮ থেকে ২০২৫ প্রায় সাত বছরের লম্বা ব্যবধান। অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক কালচার ঘুরে ফিরে একই গন্ডীতে ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১৮ সালেও কোটা সংস্কারের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমেছিল। সেই সময় আন্দোলনকারীদের বত'মান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী রাজাকারের বাচ্চা বলে সংসদে দাঁড়িয়ে গালি দিলে আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদে ক্ষোভে আবেগের বশে নিজেদেরকে রাজাকার বলে শ্লোগান দিয়েছিলো। সেদিন ও চেতনাবাজ ছাত্রলীগের হেলমেটবাহিনী রাজাকার বলে হামলে পড়েছিল নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীদের উপর। সেই আন্দোলন দমন পীড়নে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বত'মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভবত গোসসা করেই কোটা সংস্কারের পরিবত্তে' একেবারে পুরা কোটাই বাতিল করেছিলেন পরিপত্রের মাধ্যমে ।কিন্তু দীর্ঘ সাত বছরে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে' বিরত থেকেছেন।তখনও অরাজনৈতিক -ছাত্রীদের আন্দোলনকে বিএনপি -জামাতের ষড়যন্ত্র বলা হয়েছিল এবারো একই ভাবে শুরু থেকেই বিএনপি -জামাতের ষড়যন্ত্র বলে দলের নেতা কমী'দের কোনঠাসা করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
২০২১ সালে কোটা পুনঃ বহাল রাখার পক্ষে আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোটে' কোটা বহাল করেন।ছাত্র ছাত্রীরা পহেলা জুলাই থেকে বিক্ষোভ সমাবেশে নামে।সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, দলের বড় বড় নেতারা আলোচনায় সমাধানের কথা না বলে আদালতের দোহাই দিয়ে দাম্ভিকতার সাথে “ স্বাধীনতাবিরোধীদর প্রেতাত্মারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত” এমনি বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া সত্বেও ১৩ই জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া পয্য'ন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের অরাজনৈতিক -সমাবেশ একেবারেই নিভে'জাল শান্তি পুন্য' ই ছিল ।বিক্ষোভ দমাতে শান্তি পুন্য' সমাধানের চেষ্টা না করে সম্ভবত এবার ও ১৮ সালের সে-ই একই চাল চেলেছেন সরকার।১৪ই জুলাই, ২৪ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কোটা আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে " মুক্তিযোদ্ধার নাতি নাতনিদের সু্যোগ না দিয়ে কি রাজাকারের নাতি নাতনিদের দিতে হবে "বলায় আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে শ্লোগান তুলেছিল তুমি কে আমি কে?রাজাকার রাজাকার।কে বলেছে, কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার.।চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার। আন্দোলনকারীদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকায় যে যেভাবে পেরেছে নিজেদের মতো করে শ্লোগান দিয়েছে।
পরবতী’ অবস্থা দেখে মনে হয়েছে এমন প্রতিবাদ হবেই তা যেন আগে থেকে জানা ছিলো সরকারি দলের নেতাকর্মীদের।পায়ে পায়ে বাধিয়ে ঝগড়া করার একটা প্রবাদ আছে আমাদের দেশে। ঠিক সেভাবেই আন্দোলনকারীদের শ্লোগানের " তুমি কে আমি কে ? রাজাকার রাজাকার " কথাটাকে স্বাধীনতা বিরোধী বক্তব্য বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু পরের লাইন "কে বলেছে, কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার" তা অতি চাতুরতার সাথে এড়িয়ে রাতেই ক্যম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাল্টা সমাবেশ এবং শ্লোগান দেয়।এক শ্রেণীর তথা কথিত বুদ্ধিজীবিদের ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে রাজনীতিকরণ করে উসকানিমূলক বক্তব্য,সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তৈরী থাকতে বলা এবং কিছু নেতাদের সরাসরি ইন্ধনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সহপাঠীদের শান্তি পুন্য' আন্দোলনে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে তাদের উপর পৈশ্বাচিক বব্ব'তায় মেতে ওঠে ।ফলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।ক্রমাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচারে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র ছাত্ররা প্রতিহত করতে শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ছাত্রলীগের উভয়ের আগ্রাসী আক্রমণের শিকার হতে হয়। ছয় জনের মৃত্যু' পর সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে তাদের হল ত্যাগের নিদ্দে'শ দেয় ।ছাত্র-ছাত্রীরা অস্বীকার করে।পরের দিন বিকেলে গায়েবানা জানাজা পড়তে না দিয়ে ছাত্র সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে আইন শৃংখলা বাহিনী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের শক্তি প্রয়োগ করতে থাকে।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব ছিলো কিন্তু তা যথা সময়ে করা হয় নাই।শক্তি প্রয়োগ করে তা দমন করতে গিয়ে কোটা বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনের ৬জন ছাত্রের অনাকাংখিত মৃত্যু এবং শত শত ছাত্র-ছাত্রী আহত হবার পর প্রধানমন্ত্রী শোকাবহ পরিবেশে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত গত ১৮/০৭/২৪ ইং সন্ধ্যার ভাষনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের জীবন জীবিকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু তিনি করবেন আশ্বাস দিয়েছেন।তিনি বলেছেন আপনজন হারানোর বেদনা কত তা তিনি জানেন। আশান্বিত হয়েছিলাম এইভেবে তিনি একজন পিতা-মাতাহারা সন্তান, ভাই হারা বোন। তিনি বুঝেছেন সন্তানহারা মায়ের বেদনা, সন্তানহারা পিতার কষ্টের কথা, ভাই হারা বোনের বেদনার কথা।ভেবেছিলাম তিনি তার দলের অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। আইন শৃংখলা বাহিনী বলবেন" আমার দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে আমার দেশের মানুষের উপর গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করবেন না"।
ভাষণের মাঝেই সম্ভত ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের নিদ্দে'শ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কত'পক্ষের সন্তানতুল্য ছাত্রদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে তাদের সাথে অ-অভিবাবক সুলভ আচরন ছাত্র-ছাত্রীদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলে।জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যলয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগ্রাসী তৎপরতা এতো ভয়াবহ ছিলো দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন গাজায় আগ্রাসী দখলদার ইজরাইলী সেনাবাহিনী কোনো শরনার্থী শিবিরে আক্রমণ করেছে।আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে এম্বুল্যান্সে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিছু শিক্ষকদের তাদের সন্তান তুল্য ছাত্র -ছাত্রীদের রক্ষায় অসহায়ত্বে কাদঁতে দেখা গেছে। হতাশ হয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখলাম ভাষণের ২৪ ঘন্টা পার না হতে সাংবাদিক সহ ১৯ জন নিহত যার অধিকাংশ কিশোর হওয়ায় ভাষণের সাথে ঘটমান পরিস্থিতি মিল পাওয়া যায় নাই।তবে কি উনার কথা কেউ মানছেন না? প্রধানমন্ত্রী ৩য় শক্তির কথা বলেছেন৷নিভে'জাল শান্তি পুন্য' ছাত্রদের আন্দোলনে দায়িত্বশীল সরকার দলীয় নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সহ পাঠি ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ দমনে নজীর বিহীন যে বব্ব'তা চালিয়েছে তা সবাই দেখেছে।ঘটনায় সাধারণ মানুষ ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পায় নাই।
সরকারের একদিকে ছাত্রদের দাবির সাথে একমত বলা অন্যদিকে আদালতের এখতিয়ার বলে আলোচনায় না বসার অনড় অবস্থান এবং কিছু নেতাদের দাম্ভিকতায় ১৮ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ তিন দিনে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে সারা দেশে ১০৩জন নিহত এবং হাজারের বেশি আহত হয়েছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে অরাজনৈতিক ইস্যুতে এতো প্রাণহানি কখনো ঘটে নাই।ভাবছি যারা নিরিহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর পৈশাচিক বব্ব'তা চালিয়ে আহত/নিহত করছে,তারা কি সবাই কোটার সুবিধাভোগী? নিশ্চিত তা নয়। তবে কেন ভাবে নাই এদেশ আমাদেরই, এই ছেলে মেয়েরা আমাদেরই কারো সন্তান, কারো ভাই কারো বোন কারো বা নাতি পুতি। কেনো ভাবে নাই এই বৈষম্য দূর হলে তাদের ছেলে মেয়ে নাতি পুতি ও নিশ্চিত এর সুবিধা পাবে। কেন এই ক্রীতদাস ঘাতকদের বিবেক জাগ্রত হয় নাই? কেনো তাদের হাত কাপে নাই? কেনো তারা ভাবে নাই এমন বব্ব'তা, এমন ই নারকীয় তান্ডব ৭১ এ এই দেশের মানুষের উপর পাক হানাদার বাহিনী চালিয়েছিল। নাকি তারা কেহ এদেশের নাগরিক নয় ?
বিক্ষোভ দমনে ছাত্রলীগের বব্ব'তা, শান্তি শৃংখলা বাহিনীর নিবি'চার টিয়ার শেল গুলিতে শতশত হতাহতে সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে।বিক্ষুব্ধ জনতাই হোক কিংবা কোন সুযোগ সন্ধানীই হোক তাদের হাতে গাড়ি, বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন, অবকাঠামো বিনষ্ট করে বিপুল সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।যা কোনো ভাবে দেশ প্রেমিক কাহারো কাম্য নয়।ধংসাতক এ সকল কাজের সাথে আন্দোলনকারী কেহ জড়িত নয় সমন্বয়কারীরা বার বার দেশবাসীকে আস্বস্থ করেছে। অবশেষে সরকার সারাদেশে কাফ্যু' জারি করে আইন শৃংখলা রক্ষা সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী নামিয়েছেন। আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী ও আইন মন্ত্রীকে দিয়ে কমিটি করেছে। আপিলের শুনানিও এগিয়ে আনা হয়েছে।ছাত্ররা তাদের কয়েক দফা দাবী জানিয়েছে।বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্র এবং আদালত এর সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলা আইন মন্ত্রী দাবীকে যৌক্তিক বলেছেন। আদালত মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বিরাঙ্গনার সন্তান্দের ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী ১শতাংশ ,প্রতিবন্দী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ও ১% শতাংশ রায় দিয়েছেন।
ছাত্র-ছাত্রীরা বারবার বলেছে আমারা আদালতে যেতে চাই না নিবা'হী আদেশে সমাধান চাই। সরকার তার দাম্ভিকতায় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে অবশেষে ছাত্রদের দাবী ঠিকই মানলেন কিন্তু বড় বেশী দেরী করে সারাদেশে যুদ্ধাবস্থা জারি করে। আদালতের রায়ের পরও তার রেশ কাটে নাই ঘটনা ক্ষনে ক্ষনে পাল্টে যাচ্ছে।পরিণতিতে কোটা আন্দোলন ও পরবত্তি’ সহিংশতায় ২৩/০৭/২৪ পয্য’ন্ত এ লেখা পুনঃ পুনঃ মাজ'ন করতে করতে মৃত্ ১৯৭ জনে পৌছে গেছে।মনের জোর হারিয়ে ফেলছি এতো গুলি তরতাজা কিশোরদের মৃত্যুতে।এতো প্রাণহানী তা কি পুরন হবে, তা কখনো না।সন্তান যার গেছে সে-ই কেবল বুঝতে পারে সন্তান হারানোর বেদনা,আপনজন যার গেছে সে-ই জানে আপন জন হারানো বেদনা কতোটা ভারী। যে সম্পদ নষ্ট হয়েছে তা জাতীয় সম্পদ। অথচ আমাদের নীতি নির্ধারকগণ গুয়াতুমি’ না করলে,একটু দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিলে এমন দু:খজনক ঘটনা সহজে এড়াতে পারতেন।
https://www.youtube.com/channel/UCO9Em15PgixJY8mgVh78rjA
No comments:
Post a Comment